নিউইয়র্কে রেট না বাড়ায় প্রেরণকারীরা হতাশ
হাসান মাহমুদ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৫৪ এএম, ১১ মে ২০২৪ শনিবার
বাংলাদেশে ডলারের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি
বাংলাদেশে সরকারীভাবে হঠাৎ করে ডলারের দাম বেড়েছে। এক ডলার এখন ১১৭ টাকা। খোলাবাজারে এর দাম আরও বেশি। গত বুধবার এ ঘোষণার একদিন পরও নিউইয়র্কে ডলারের দাম প্রায় আগের মতোই রয়ে গেছে। এতে ডলার প্রেরণকারীরা যথাযথ মূল্য পাচ্ছেন না। এ নিয়ে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
বাংলাদেশে যখন প্রতি ডলার সরকারীভাবে ১১০ টাকা ছিল তখন নিউইয়র্কে প্রতি ডলার লেনদেন হয়েছে ১১৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। বুধবার থেকে বাংলাদেশে প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ঠিক করার পর নিউইয়র্কে আর তেমন বড় কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বুধবার নিউইয়র্কে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৬ টাকা ৫০ পয়সা, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৬ টাকা ৭৫ পয়সা, কোথাও কোথাও ১১৭ টাকা দরে। সেই সঙ্গে ২.৫ পার্সেন্ট প্রণোদনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার পর ব্যাংকিং সেক্টরে হৈ চৈ পড়ে যায়। আর নিউইয়র্ক থেকে যে সকল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকে তাদের মালিকরা ব্যাংকিং চ্যানেলে খোঁজ নিতে শুরু করেন। কারণ এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিউইয়র্কের রেমিট্যান্স প্রেরণকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। কারণ হঠাৎ করে প্রতি ডলারে সরকারীভাবে ৭ টাকা মূল্যবৃদ্ধি অনেক বড় ঘটনা।
বাংলাদেশে ডলারের দাম কত বাড়বে বা কতটা কমবে তা নির্ধারণ করে থাকে বাংলাদেশের সব ব্যাংকের এমডিদের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা ‘বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স এসোসিয়েশন (বিএএফইডিএ) বা বাফিদা’। হঠাৎ কিভাবে প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রশ্নের উত্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাফিদার চেয়ারম্যান, সোনালী ব্যাংকের সিইও এবং এমডি মো: আফজাল করিম টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আমরা মনে করি এই সিদ্ধান্তের ফলে সব ব্যাংকের মাঝে একটা ব্যালেন্স তৈরি হবে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এখন একটা নির্ধারিত মূল্যে বিদেশ থেকে ডলার সংগ্রহ করতে পারবে। আগে ব্যাংকগুলো যে যার মতো মূল্য দিয়ে ডলার সংগ্রহ করতো। ১১৭ টাকা প্রতি ডলার নির্ধারিত হবার ফলে সবাই এই দরের চেয়ে এক টাকা বাড়িয়ে হয়তো সংগ্রহ করতে পারে তবে তার চেয়ে বেশি নয়। কারণ সেই ডলার বিক্রি করতে তাদের সমস্যা হতে পারে। নিউইয়র্কে ডলারের দামের যে তারতম্য রয়েছে তা এখন সমন্বয় হবে। ইচ্ছা করলেই কেউ চড়া দামে ডলার কিনতে পারবে না।’
নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ভূমিকা রেখে আসা প্রতিষ্ঠান সানম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেস-এর সিইও এবং প্রেসিডেন্ট মাসুদ রানা তপন আজকালকে বলেন, ‘গ্রাহকদের কাছ থেকে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। আমরা সর্বোচ্চ রেট-ই দিচ্ছি। বাংলাদেশে ডলারের যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে আমরা তা সঠিকভাবে পালন করছি। ১১৭ টাকার বেশি দরে আমরা ডলার কিনতে পারবো না।’
নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের সোনালী এক্সচেঞ্জ-এর সিইও দেবশ্রী মিত্র আজকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে আমরাও তা কার্যকর করেছি। আগে আমাদের রেট ছিল ১১০ টাকা। আমাদের আগে আর কোন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এই দর কার্যকর করেনি।’
এঙ্কর ট্রাভেলস এন্ড মানি ট্রান্সফারের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও এএসএম মাঈন উদ্দীন পিন্টু বলেন, বাংলাদেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসার পর আমরা তা কার্যকর করেছি। হঠাৎ ৭ টাকা মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা বিরল।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস-এ একটি পুরনো মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের সিইও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতি ডলার ১১৭ টাকা মূল্য নির্ধারিত হলেও বড় বড় অংকের অনেক রেমিট্যান্স ‘হুন্ডি আকারে’ অবৈধ পথে দেশে পাঠানো হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের খোলা বাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকায়। তাও ঢাকায় পর্যাপ্ত ডলার পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।