রেখা আহমেদ ও মনজুর আহমদ সংবর্ধিত
বাফার আড়ম্বরপূর্ণ বর্ষবরণ
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:২৬ এএম, ১১ মে ২০২৪ শনিবার
আড়ম্বরপূর্ণ এক বড় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে গত শনিবার শেষ হলো বাংলাদেশ একাডেমী অব ফাইন আর্টস, বাফা’র মাসব্যাপী বাংলা বর্ষবরণ বৈশাখ উদযাপন। ব্রংকসের একটি স্কুলের মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বটি নিবেদিত ছিল সদ্য প্রয়াত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সাদী মোহাম্মদের ওপর। পুরো মঞ্চজুড়ে সমবেত হওয়া একাডেমীর নানা বয়সের বিপুল সংখ্যক শিল্পী সাদী মোহাম্মদ স্মরণে সমবেতভাবে পরিবেশন করেন ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’। গোলাম মোস্তাফা ও শামীম আরা বেগমের উপস্থাপনায় তিন ঘন্টার এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাফার শিল্পীদের পরিবেশিত নাচ ও গান ছাড়াও একটি পর্ব ছিল বরেণ্য অভিনয়শিল্পী রেখা আহমেদ ও প্রবীণ সাংবাদিক মনজুর আহমদের সংবর্ধনা।
‘শঙ্খ বাজে চিত্ত মাঝে’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় তানভীর তমালের পরিচালনায় ‘আগুনের পরশমনি’ সমবেত সঙ্গীতের পর বাফার শিক্ষার্থীরা ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’ ও ‘আমরা নতুন যৌবনের দূত’ গানের সাথে উপস্থাপন করে দলীয় নৃত্য। পরিচালনায় ছিলেন রাসেল আহমেদ। এরপর শচী পেনীর পরিচালনায় শিশু শিল্পীরা পরিবেশন করে ক্ল্যাসিকাল নৃত্য।
এই পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় রেখা আহমেদ ও মনজুর আহমদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন পর্ব। এই পর্বের সূচনায় খ্যাতিমান অভিনয় শিল্পী শিরীন বকুল পরিবেশন করেন রেখা অহমেদ বিরচিত ও তাঁর একক অভিনয়ে সমৃদ্ধ নিউইয়র্কে বহুবার মঞ্চস্থ হওয়া ‘বীরাঙ্গনা সখিনা’ নাটকটি। পরিবেশনা শেষে তিনি রেখা আহমেদের পরিচিতি তুলে ধরে নাটকে তার সারা জীবনের অবদানের কথা উল্লেখ করেন এবং ঢাকা থেকেই তার সাথে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নাটকের ক্ষেত্রে তাকে ‘গুরু মা’ বলে অভিহিত করেন। এই আবহের মধ্যেই তিনি এই বর্ষিয়ান অভিনেত্রীকে মঞ্চে ডেকে নেন। রেখা আহমেদ মঞ্চে ওঠার পর শিরীন বকুল সালাম করেন এবং রেখা আহমেদ তাকে বুকে টেনে নিলে মিলনায়তনে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
রেখা আহমেদ মঞ্চে আসন নেয়ার পর সাপ্তাহিক বাঙ্গালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ প্রবীণ সাংবাদিক মনজুর আহমদের পরিচিতি তুলে ধরে সাংবাদিকতায় তাঁর দীর্ঘ জীবনের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এই দুই শ্রদ্ধেয় অগ্রজকে ফুলের স্তবক দিয়ে সম্মাননা জানান বাফা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মুনিরা ও ফারজানা এবং নৃত্য বিভাগের শিক্ষার্থী অস্মিতা ও জান্নাত। দুজনকে দেয়া দুটি মানপত্র পাঠ করেন খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী ক্লারা রোজারিও ও প্রখ্যাত নাট্যাভিনেতা খাইরুল ইসলাম পাখি। তাদেরকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সাহিত্য সংগঠক মোশাররফ হোসেন ও জুলফিকার হোসেন বকুল। তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন নাট্য ব্যক্তিত্ব মুজিব বিন হক ও কৌশিক আহমেদ। মানপত্র তুলে দেন বাফার কর্ণধার ফরিদা ইয়াসমিন ও শামীম আরা বেগম।
ফরিদা ইয়সমিন নিউইয়র্কের এই দুই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধিত করে বলেন, অভিনয় শিল্পী রেখা আহমেদ ও বর্ষিয়ান সাংবাদিক মনজুর আহমদকে সংবর্ধনা জানাতে পেরে বাফা গর্বিত। বাফার শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে। সংবর্ধনার জবাবে রেখা আহমেদ ও মনজুর আহমদ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এমন একটি সংবর্ধনা প্রাপ্তিতে তাদের আবেগাপ্লুত অনুভূতির কথা জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর নৃত্য পরিবেশন করেন বাফার শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন পুতুল নাচ এবং বিভিন্ন গানের সাথে বিভিন্ন আঙ্গিকের নৃত্য। হেই সামালো ধান হো, নিটোল পায়ে রিনিঝিনি, বাংলাদেশের ঢোল প্রভৃতি গানের সাথে তাদের নাচ দর্শকদের অকুন্ঠ প্রশংসা অর্জন করে। এসব নাচের কোরিওগ্রাফি করেছেন রাসেল আহমেদ। নৃত্য পরিবেশনায় ছিল সারাফ, কথা, নাসিমা, অদ্বিতিয়া, জয়িতা, আবৃত্তি, তনুশ্রী, শুভশ্রী, মিথিলা, আরিশা, এলিজা, রায়না, ইশারা, শেয়শী, তাহনিয়াত, জ্বারা, রাজবিকা, দিশিতা, অধরা, বর্তিকা, শ্রীময়ী, অস্মিতা, জান্নাতুল, লাইসা, আজওয়া, বৃন্দা, সময়, সৃজিতা, ইরাম ও রাসেল আহমেদ।
এএফএম আফতাবুজ্জামান স্পন্দনের নেতৃত্বে শিল্পী ইফতির সাথে সমবেতভাবে গীটার পরিবেশন করে মিলনায়তন মাতিয়ে রাখেন বাফার গিটার বিভাগের শিল্পীরা। এরপর একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বুলা আফরোজ।
সমবেত সঙ্গীত ও গীটার বাদনে অংশ নেয়া শিল্পীরা ছিলেন ইরাম, আজওয়া, প্রীতম, বৃয়ানা, আর্শি, আরোহী, ইনারা, শন, অর্জুন, তুরহান, বৃন্দা, সময়, সুহানা, শ্রীময়ী, শ্রীজিতা, শান্তলিকা, পারিসা নাজ, তনুশ্রী, শুভশ্রী, আয়মান, জয়িতা, সানবি, মানব, পার্থ, রাধিকা, রিসব, শাওন, শ্যাম, তামজিদ, আলভিরা, আরাফ, আহনাফ, আরিয়ান, অর্জুন, মৃদুলা, রোদেলা, নবব, নেহা, সাইফ, সামান্তা, সুচি, জারা, তরুন চন্দ, শম্পা রহমান, পাপড়ি, রেক্সোনা, বুলা, শারমিন, বিথী, অর্পণা, দিশা, হীরা, মিতু, ববি, পলি, সীমা, আসমা, সুমনা, শর্মি, অলকা, তারেক, এবং প্রশিক্ষক তানভীর তমাল। তবলায় ছিলেন আরিফ হাসান, মৃদঙ্গ ও পার্কশনে আদি পল, কীবোর্ডে রবিউল হাসান রুবেল, গীটারে স্পন্দন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন, মনিরা নূর, ফারজানা ইয়াসমিন, আনোয়ারুল হক লাভলু, শিরীন বকুল, কে সি মং, সামিউল ইসলাম ও ইয়াকুব আলী মিঠু। সমগ্র অনুষ্ঠানে মূল ভাবনা ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন।