রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ২৩ ১৪৩১   ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাঁচাপাট রপ্তানিতে ট্যারিফ বসাতে আগ্রহী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৬:৩৪ পিএম, ১৩ মে ২০২৪ সোমবার

বাংলাদেশ থেকে কমদামে কাঁচাপাট কিনে নিয়ে যাচ্ছে ভারত। এজন্য দেশের পাটশিল্প পিছিয়ে পড়ছে। সে কারণে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর কাছে কাঁচাপাট রপ্তানিতে ট্যারিফ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে পাটকল মালিকসহ অন্যান্য শিল্পসংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, সামনে পাট রপ্তানির ওপর ট্যারিফ বসিয়ে দেব। কাঁচাপাটের নূন্যতম রপ্তানি মূল্য কতো হবে সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এতে যেমন দেশি শিল্প সুরক্ষিত হবে, চাষীরা ভালো দাম পাবে এবং পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বাড়বে। এ বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু হবে।

সোমবার বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমসি) বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেন। মতিঝিল আদমজী কোর্টে বিজেএমসি সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেএমসির সভাপতি আবুল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এসময় মন্ত্রী ট্যারিফ বিষয়ে পাট মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে চিঠি দিতে বলেন।

বৈঠকে বিজেএমসির আরও একটি দাবির বিষয়ে একমত হয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতোদিন ট্রাকে করে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে কাঁচাপাট রপ্তানি হতো। এতে পাট রপ্তানির সঠিক পরিমাণ জানা যেত না। সেজন্য পাট রপ্তানিতে শিপিং ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। এ বিষয়টি নিয়েও কাজ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই মাহবুবুল আলমও বিশেষ অতিথি ছিলেন। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিজেএমসির সদস্য ও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ।

এসময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পাটজাত মোড়ক বাধ্যতামূলক আইন সঠিকভাবে মানলে পাটের গুরুত্ব ও ব্যবহার আরও বাড়বে। সেজন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জোরালো তত্ত্বাবধান করতে পারে, এতে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় সার্বিক সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি পাট রপ্তানিতে যে সহায়তা প্রয়োজন সেটা করবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চামড়া ও পাটখাতের রপ্তানি বহুমূখীকরণের বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনারা কি সুবিধা পাচ্ছেন না সেটা জানান।’

অনুষ্ঠানে বিজেএমসির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, মিল মালিকরা পার্শ্ববর্তী দেশ কর্তৃক আরোপিত এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি রহিতকরণ, কাঁচাপাটের উপর ২ শতাংশ উৎসকর রহিতকরণ, পাটের ভাল বীজ সরবরাহ, পাট মিলগুলোর মেশিনারি নবায়ন করার জন্য ৩০ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদানের আবেদন জানান।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার একমাসের মধ্যে ভারতের সঙ্গে এন্টি-ডাম্পিং নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। তবে এখন ওই দেশে নির্বাচন চলছে। এরপর আরও জোরদার আলোচনা শুরু হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এক সময় কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করেছিলাম। তারপর আপনাদের দাবিতে আবার খুলে দিয়েছি। তবে এটা রপ্তানি কতোটা কার্যকর সেটা বিবেচনা করা দরকার। আবার ক্যাশ ইনসেনভটিভ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে, এ ইনসেনটিভ রপ্তানি পর্যায়ে প্রত্যাহার করে উৎপাদন পর্যায়ে নিয়ে আসা যেতে পারে। এতে আপনাদের সুবিধা হবে।

পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাট কিন্তু কৃষিপণ্য, ২০২৩ সাল থেকে এটা হয়েছে। তবে পাটপণ্য কৃষিপণ্য হবে কিনা- এ নিয়ে কাজ করছি। কারণ পাটজাত পণ্য মিল-ফ্যাক্টরিতে হচ্ছে। সঠিক নীতিমালা না হলে সমস্য।

এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুব আলম বলেন, ‘আমার পাটের জৌলুস হারিয়ে ফেলেছি, সেজন্য আমাদের অনুতপ্ত হওয়া উচিত। পাট চাষিরা ও উদ্যোক্তারা অনেক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। এটা কৃষিপণ্য ঘোষণা করা দরকার। পাটপণ্যকে কৃষিজাত পণ্য করা দরকার।’

তিনি বলেন,‘পাটের বীজের ব্যাপারে সংকট আছে। চাষীদের বীজ নেই। সেজন্য তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া যা উৎপাদন হচ্ছে, সেটা রপ্তানি উন্নয়নে কাজ করা দরকার। এ খাতের অনেক নীতি সহায়তায় প্রয়োজন। এখাতের জন্য প্রণোদনার দরকার নাই, সঠিক সহায়তা দিতে হবে। ভ্যাট-ট্যাক্সের সমস্যা আছে। এছাড়া ভারতে এন্টি ড্যাম্পিং রহিতকরণ দরকার। ভারত এ দেশ থেকে পাটপণ্য নিয়ে রপ্তানি করছে, তারা লাভবান হচ্ছে। আমারা এন্টিড্যাম্পিংয়ের জন্য পারছিনা।’