রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ২৩ ১৪৩১   ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইন্স্যুরেন্স চাকরির আড়ালে জঙ্গি সংগঠনের রিক্রুটার

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৫:০৭ পিএম, ১৪ মে ২০২৪ মঙ্গলবার

একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রানা শেখ ওরফে আমির হোসাইন আড়ালে কাজ করছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার রিক্রুটার হিসেবে। এরই মধ্যে ৩ জনকে সংগঠনে রিক্রুট করে প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য বান্দরবান জেলায় ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’র (কেএনএফ) আস্তানায় পাঠান তিনি। এমনকি প্রশিক্ষণের খরচ বাবদ কুকি-চিনের কাছে লক্ষাধিক টাকাও পাঠান এ রানা।

সোমবার (১৩ মে) পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) গোয়েন্দা তথ্য ও সহযোগিতায় রাজধানীর কল্যানপুর ও গাবতলী এলাকায় রানাসহ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

গ্রেফতার বাকি দুজন হলেন-মশিউর রহমান ওরফে মিলন তালুকদার ও হাবিবুর রহমান। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩টি স্মার্টফোন ও ২টি বাটনফোন উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে তাদের প্রশিক্ষণের ভিডিও ছবি আছে।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত রানা ২০০২ সালে হুজিনেতা ও ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আব্দুর রউফের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য ময়মনসিংহে যান। ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত হুজি সদস্য সামরিক ও আন আর্মড কমব্যাট প্রশিক্ষণ নেন।

২০০৩ সালে বাবা, মামা, ভগ্নিপতিসহ মোট ১৮ জন সদস্য হুজি নেতা আব্দুর রউফের সঙ্গে বৈঠকের সময় ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে।

বর্তমানে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত এ রানা সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য ৩ সদস্যকে এরই মধ্যে বান্দরবানে কুকি-চিনের সন্ত্রাসীদের কাছে পাঠায়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার মশিউর রহমান প্রথমে ইসলামিক শাষনতন্ত্র আন্দোলনের সদস্য ছিল। ২০০২-৩ সালে হুজির সদস্য হিসেবে ময়মনসিংহে সামরিক ও আন আর্মড কমব্যাট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৩ সালে অপরাপর হুজি নেতাদের সঙ্গে গ্রেনেডসহ ঝালকাঠিতে গ্রেফতার হয়ে সাড়ে চার বছর সাজা খাটে।

২০২১ সাল থেকে পাহাড়ি বৈরী পরিবেশে কমান্ডো হিসেবে টিকে থাকা, পিটি-প্যারেড শিখা, আন আর্মড কমব্যট, অ্যাসল্ট রাইফেল চালানো, বোমাসামগ্রী তৈরি এবং ব্যবহারসহ সিকিউবি বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ২ বছর বান্দারবানে কুকি-চিনের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অবস্থান করে। এই প্রশিক্ষণ শেষ করে সমতলে ফেরত আসে মশিউর।

আর হাবিবুর রহমান ছিলেন সংগঠনের নতুন রিক্রুট। তিনি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির কর্মী হিসেবে আমির হোসেনের অধীনে কাজ করতেন। আমির হোসেন একই মতবাদে দীক্ষিত করে তাকে এরই মধ্যে জঙ্গি সংগঠনে রিক্রুট করে বান্দবানে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ডিবি প্রধান বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম ও জামায়াতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) মুক্তিপ্রাপ্ত এবং পলাতক বেশ কিছু সদস্য মিলেমিশে একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া গঠন করে।

পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ধারাবাহিক তৎপরতায় জঙ্গি অভিযানের কারণে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটি সমতল এড়িয়ে পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ খুঁজছিল। পার্বত্য বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে বসবাসকারী বম সম্প্রদায়ের বিভ্রান্ত সন্ত্রাসীদের দ্বারা গঠিত কুকি-চিনদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় শারক্বীয়ার।

অর্থের বিনিময়ে কুকি-চীনের সন্ত্রাসীরা শারক্বীয়ার সদস্যদেরকে বৈরী পরিবেশে সারভাইবাল, আন আর্মড কমব্যাট, অ্যাসল্ট রাইফেল পরিচালনা, এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস তৈরি এবং ব্যবহার, সিকিউবিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়।

দেশকে অস্থিতিশীল করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা, নিজ দেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে শহীদ বা গাজী হওয়ার অপেক্ষায় থেকে রসদ সামগ্রী এবং কর্মী সংগ্রহে তৎপর ছিল সংগঠনটি।

পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অভিযানে এদের অনেক সদস্য এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে উল্লেখ করে হারুন বলেন, সংগঠনটিতে ৫৩ জনের মতো সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে ৪৯ জনই ধরা পড়ে গেছেন। গ্রেফতার রানা বর্তমানে সংগঠনের প্রধান রিক্রুটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

সারাদেশ থেকেই তাদের সদস্য রিক্রুটের পরিকল্পনা ছিল। তাদের গ্রেফতার করতে না পারলে হয়তো আরেকটা গ্রুপকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো।

গ্রেফতারদের ৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে। তাদের সঙ্গে জড়িত আর কারা আছে জানার চেষ্টা করবো। জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।