বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাশেমী মার্কা বসন্তের কোকিলে মাশুল দিচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক 

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:১৯ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী এক অভাবনীয় চরিত্র। সারা বছর নিরাপদে থাকা এই নেতা ঠিক নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে সক্রিয় হয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়। আবার নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই অবস্থার বেগতিক বুঝে চুপসে যান। যেকারণে দলের নেতাকর্মীরা তাকে বসন্তের কোকিল হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছেন। আর দলের মধ্যে থাকা এরুপ কাশেমী মার্কা বসন্তের কোকিলদের কারণে দলকে আরো কড়া মাশুল দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের মত নারায়ণগঞ্জ জেলার সবকটি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমান থাকার ফলে এই আসনটিতে সবার নজর ছিল। আর নির্বাচনের মনোনয়ন ইস্যুতে বিএনপি দলটি থেকে একদিক হেভিওয়েট নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশী করে। বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি শাহআলম সহ আরো কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে দলের এসব হেভিওয়েটদের বাদ দিয়ে অনেকটা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শেষ সময়ে এসে ২০ দলীয় জোটের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাশেমীকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

এদিকে বিএনপি দলটির নেতাকর্মীরা কাশেমীকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। যেকারণে তারা অনেকটা মনক্ষুন্ন হয়ে এই আসনের ধানের শীষের নির্বাচন বয়কট করে। আর তাতে করে কাশেমীর পাশে বিএনপি দলীয় কোন নেতাকর্মী ছিলনা। এতে করে কাশেমী একা হয়ে পড়লে জেলার বাইরে থেকে বিভিন্ন মাদ্রাসার লোকজনকে দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ সারতে চেয়েছিল।

এর মধ্যে ফতুল্লা আসনের কয়েকটি স্থান থেকে প্রায় শতাধিক জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। যেকারণে শামীম ওসমান কাশেমীকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে বলছেন, ‘কাশেমী বহিরাগত জামায়াত শিবিরের লোকজন এ জেলাতে এনে নাশকতার চেষ্টা করছে।’ এতে করে কাশেমীকে ঘিরে সবার দৃষ্টি ছিল।

অন্যদিকে কাশেমী নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মারধরের নাটক করে বেশ আলোচনায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই কাশেমী এ ধরনের অভিযোগ তুলে স্ট্যান্টবাজি করে আলোচনায় উঠে আসতে চেয়েছিলেন। যেকারণে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে উল্টো বিপাকে পড়েন। কারণ তাকে মারধরের অভিযোগের সাথে তার কথা অনেক অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরে কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন ছিলনা। এমনকি তার শরীরে পরিধাণ করা জামা-কাপড়ের এমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এতে করে তার স্ট্যান্টবাজির বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে।

এসব ঘটনার ঘটিয়ে যখন স্ট্যান্টবাজির বিষয়টি মুখ থুবড়ে পড়ছিল তখন কাশেমী উল্টো আরো বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছিল। এতে করে নাটকীয় চরিত্র কাশেমী ফের নাটকীয়তার নতুন নতুন প্লট তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে কাশেমী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তবে সেখানেও আরেক নাটকীয়তার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। কারণ কাশেমীকে হাসপাতালে দেখতে যান জেলা পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদ। পুলিশ সুপার তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান যা গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়। তবে সেই ছবিতে কাশেমীকে বেশ হাস্যোজ্জল অবস্থায় দেখা গেছে। আর ছবিতে তাকে কোনভাবেই অসুস্থ দেখা যায়নি। এতে করে তার এই অসুস্থ হওয়ার বিষয়টিও স্ট্যান্টবাজি হিসেবে বিবেচনা করছেন।

সূত্র বলছে, ‘নির্বাচনে আগে প্রচারণা বিমুখ নাটকীয় কাশেমী নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যায় অসুস্থার অজুহাতে। এতে করে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মী বলছেন, ‘কাশেমীকে মূলত এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জয়ী করানোর জন্য। এজন্যই কাশেমীর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন উত্তাপ নেই। তাই তিনি শুধুমাত্র নির্বাচনী নাটক নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠে আসার জন্য শুধুমাত্র নাটক করেছেন। তিনি মূলত বিএনপি ডুবানো প্রার্থী। এরুপ অচেনা ও নিষ্ক্রিয় প্রার্থীদের দেয়া হয়েছে দলকে ডুবানোর জন্য। আর কাশেমীও দল ডুবানোর সব রকম নাটকী সুষ্ঠুভাবে রচনা করেছেন।

দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কাশেমীকে কখনো মাঠে রাজনীতিকে দেখা যায়নি। এমনকি তাকে কেউ চিনেও না। রাজনীতিকে নিষ্ক্রিয় একজন নেতা হঠাৎ করে উঠে এসে জুড়ে বসে মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়। তবে মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়ার পড়ে দলের নেতাকর্মীদের সমর্থন না পেয়ে বেশ বিপাকে পড়ে যায় এই নেতা। এর মধ্যে তার ছোট ভাইকে গ্রেফতার সহ তার পাশে থাকা নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টিতে তিনি প্রার্থী হওয়ার যন্ত্রণা হারে হারে টের পান। এতে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি ফের অসুস্থতার নাটক করে ফের ব্যাকফুটে চলে যায়। আর নির্বাচন থেকে পরোক্ষভাবে কৌশলে পালিয়ে যায়। যেকারণে নির্বাচনের দিন তাকে কেউ দেখেনি। এর ফলে এই নেতাকে মূলত বসন্তের কোকিল বলা চলে যে শুধুমাত্র সুসময়ে দলের মধু পান করতে এসেছিল। আর দলের দুঃসময় দেখে পলায়ন করেছেন। সম্প্রতি বিএনপি দলীয় পদধারী অনেক নেতা আছে যারা দলের পদ নিয়েও ক্ষমতাসীন দলের হয়ে কাজ করছে। দলের সাথে তারা বেঈমানী করছে। এরুপ ব্যক্তিরা দলের সময়নে দলের মধু পান করেছে। অথচ যখন দল ক্ষমতাই তাদের দুঃসময় চলছে তখন কাসেমী মার্কা বসন্তের কোলিলে পরিণত হয়ে তারা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাশেমী মার্কা বসন্তের কোকিলরা সবসময় মধু গ্রহণ করতে এসেছে। তার মত অর্থাৎ কাশেমী মার্কা বসন্তের কোকিল অনেকেই আছে যারা দলের সুসময়ে মধু পান করতে আসে। আবার দলের দুঃসময়ে পাশ কাটিয়ে পালিয়ে যায়। এসব নেতাদের মাইনাস করতে না পারলে বিএনপি দলটিকে আরো কড়া মাশুল দিতে হবে।