রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৪৪ এএম, ২২ মে ২০২৪ বুধবার
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার সফরসঙ্গী নিহতের যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ইরানের ওপর দীর্ঘ দিনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির নাজুক বিমান চলাচল খাতের কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। খবর রয়টার্সের।
এক বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে কাজাখস্তানে রয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানেই ইরানের এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে মন্তব্যকালে এ কথা বলেন তিনি।
ল্যাভরভ বলেন, আমেরিকানরা বিষয়টি অস্বীকার করে। কিন্তু সত্য হলো যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তারা বিমানসহ আমেরিকান যন্ত্র মেরামতের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ পায় না।
তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি করার বিষয়ে কথা বলছি যারা এসব যানবাহন ব্যবহার করে। যখন খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয় না তখন তা সরাসরি সুরক্ষাব্যবস্থা কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
এদিকে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনেও একই কারণ দাবি করা হয়েছে। সেখানে বলা হছে, ‘যান্ত্রিক ত্রুটির’ কারণে রাইসির হেলিকপ্টার ভেঙে পড়েছিল পাহাড়ে।
দুর্ঘটনার কবলে পড়া হেলিকপ্টারটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ মডেলের। এ কারণে ইরান নাকি এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘সাহায্য’ চেয়েছিল; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে তারা সাহায্য করতে পারছে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেটি খুঁজে পেতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিল ইরান সরকার। সোমবার ইরানের পক্ষ থেকে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক না থাকার পর তেহরান কীভাবে ওয়াশিংটনের কাছে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠিয়েছে সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত বলছেন না। তবে ইরান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চেয়েছিল। ওয়াশিংটন জানিয়েছিল, এ ধরনের আবেদনে তারা বিদেশি সরকারগুলোকে সাহায্য করে থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত মূলত রসদ সরবরাহজনিত ইরানকে সেই সহায়তা করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ হেলিকপ্টারটি ৭০ দশক থেকে ইরানের আকাশে তার ডানা মেলে আসছে। ইসলামী বিপ্লবের আগে ইরানের বহরে এ ধরনের বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার সংযুক্ত করা হয়। তবে বিপ্লবের পর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ কিনতে বেগ পেতে হয় তেহরানকে। মূলত এ কারণে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনায় পড়ে।
রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর ইরান সরকার জানিয়েছিল হার্ড ল্যান্ডিংয়ের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। হার্ড ল্যান্ডিং তখন বলা হয়, যখন বৈরী আবহাওয়া বা যান্ত্রিক ত্রুটি বা পাইলটের অদক্ষতার কারণে একটি হেলিকপ্টারকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গতিতে হঠাৎ অবতরণ করতে হয়। তাই স্পেয়ার পার্টসের অভাবে যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি এড়িয়ে দেওয়া যায় না।