ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা ১১ জুলাই
আজকাল রিপোর্ট
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৩৮ এএম, ১ জুন ২০২৪ শনিবার
নিউইয়র্কের আদালতে ঐতিহাসিক রায় : দোষী সাব্যস্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্প কি জেলে যাবেন? নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন?
ব্যবসায়িক নথিপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের একটি আদালত এ রায় দেন। ওই মামলায় আনা ৩৪টি অভিযোগের সব কটিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন রিপাবলিকান দলের এই নেতা। আদালতের এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন। আগামী ১১ জুলাই এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। সাবেক এ প্রেসিডেন্টের কারাদন্ড হতে পারে। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, তাঁকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি।
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, এটা তাঁর জন্য মর্যাদাহানিকর। তিনি ন্যায়বিচার পাননি। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য থেকে বোঝাই যায়, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তবে এটাই কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একমাত্র মামলা নয়। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি মামলা চলছে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষের পর হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি গোপন নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে করা আরও একটি মামলা ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছেন তিনি।
৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ২০০৬ সালে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে তাঁর যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়। তাঁর হাতে এ অর্থ তুলে দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তবে ব্যবসায়িক নথিপত্রে এ লেনদেনের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন ট্রাম্প।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহ ধরে শুনানির পর বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন ১২ জন বিচারকের একটি বেঞ্চ। এর আগে তাঁরা রায় নিয়ে ১১ ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা করেছেন। এমন সময় এ রায় ঘোষণা করা হলো, যখন কয়েক মাস বাদেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার প্রেসিডেন্ট পদে আসতে চাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে রায়ের কারণে তাঁর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোনো বাধা আসবে না।
এদিকে এই মামলার মাধ্যমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব’ বিস্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আদালতে অভিযোগ এনেছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। এটাও বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ভুল কিছুই করেননি। প্রতিনিয়ত একই কথা বলছিলেন ট্রাম্পও। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের একাধিকবার বলেছেন, তিনি আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
ট্রাম্প কি জেলে যাবেন?
ট্রাম্প জেলে যাবেন- এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। তার বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগের সবগুলোই নিউইয়র্কের ‘ই’ শ্রেণির, যা সর্বনিম্ন অপরাধ। প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
তবে বিচারক মার্চান তার সাজা কয়েকটি কারণে কমাতে পারেন। এর একটি হল ট্রাম্পের বয়স, আগে আদালতের আদেশে অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া এবং অহিংস অপরাধের মত বিষয়গুলো বিচারক বিবেচনায় নিতে পারেন।
এছাড়া নজিরবিহীন এমন মামলার বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে কারাগারের বাইরেই রাখতে চাইতে পারেন বিচারক।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অন্য প্রেসিডেন্টদের মত ট্রাম্পও ‘সিক্রেট সার্ভিস’ থেকে আজীবন সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী। এর মানে কারাগারেও তার গোয়েন্দা সুরক্ষার প্রয়োজন পড়বে। কারাগারের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে রাখাটাও অত্যন্ত কঠিন হবে। কারণ এতে তার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে। তাকে নিরাপদ রাখাটাও ব্যয়বহুল হবে।
কারাগার বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘হোয়াইট কলার অ্যাডভাইস’ এর পরিচালক জাস্টিন পেপার্নি বলেন, হাজত ব্যবস্থায় দুটি বিষয়ের প্রতি নজর রাখা হয়; তা হল প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা এবং খরচ কমানো। ট্রাম্পের বেলায় সেটি ঘটলে অপ্রত্যাশিতই হবে। কোনো ওয়ার্ডেনই এর অনুমতি দিতে চাইবে না।
এরপরও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন?
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এবং সেখানে অন্তত ১৪ বছর বসবাস করা ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। অপরাধী সাব্যস্ত হলে প্রার্থী হওয়া যাবে না, এমন কোনো বিধান সেদেশে নেই। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও তিনি নির্বাচনে লড়তে পারবেন। কিন্তু প্রার্থী অপরাধী সাব্যস্ত হলে নভেম্বরের নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে।
এ বছরের শুরুর দিকে ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্টের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ৫৩ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে তারা রিপাবলিকানকে ভোটদানে বিরত থাকবেন।
চলতি মাসে কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, তেমনটি হলে ট্রাম্পের ৬ শতাংশ ভোটার তাকে ভোটদানে বিরত থাকবেন।