মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্কে ডেপুটি গভর্নর

রিজার্ভ পতনের খবর প্রপাগান্ডা

আজকাল রিপোর্ট

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৮ এএম, ১ জুন ২০২৪ শনিবার



 

নিউইয়র্কের এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়েদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে বলে যে খবর প্রচার করা হচ্ছে তা একটি মিথ্যা প্রপাগান্ডা। রিজার্ভ চুরি হয়েছে বলে নেতিবাচক অপপ্রচারটি চালিয়েছে সাংবাদিকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে তাই সাংবাদিকদের অবাধ বিচরণের সুযোগ দেয়া যায় না।  
গত ২৪ মে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘অফশোর ব্যাংকিং’ বিষয়ক এই আলোচনায় কাজী সায়েদুর রহমান বলেন, আসলে আড়াই থেকে তিন মাসের ডলার রিজার্ভ থাকলেই যেখানে চলে সেখানে আমাদের রিজার্ভে রয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ কমে যাওয়া নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা সবই ‘প্রপাগান্ডা’।  
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ২৬টি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) একযোগে যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছেন। এদের কেউ কেউ পৃথকভাবে কয়েকটি  অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নিউইয়র্কের একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘অফশোর ব্যাংকিং’ বিষয়ক এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চারটি ব্যাংকের এমডি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ মুহিত ও  কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। সফররত ব্যাংক এমডি’দের মধ্যে ছিলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ বাংলা ব্যাংকের আবুল কাশেম মো: শিরিন, সিটি ব্যাংকের এমডি মাশরুর আরেফিন এবং অগ্রণী ব্যাংকের মোর্শেদুল কবীর। ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর এফ হোসেইনের যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। চার এমডি তাদের বক্তব্যে নিজ নিজ ব্যাংকের সাফল্যগাথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে কোন ব্যাংক কোনদিন দেউলিয়া হয়নি, তাদের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখানে সরকারের বড় রকমের ‘ইনভলভমেন্ট’ আছে। তিনি বলেন, ‘অফশোর ব্যাংকিং’ নামে নতুন যে প্রোডাক্টটা এসেছে তাতে প্রবাসীদের পাঠানো ডলার দেশের উপকারে লাগবে। যুক্তরাষ্ট্রে কমবেশি ১০ লাখের মতো বাংলাদেশি থাকেন  উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা তখনই এই ব্যবস্থায় দেশে ডলার পাঠাতে উৎসাহী হবে যখন তাদের জন্য একটি আস্থার জায়গা তৈরি হবে। তা না হলে ডলার কেউ রাখবে না। তিনি বলেন, এমডিরা তো একসময় চলে যাবেন। কিন্তু প্রবাসীদের ডলার পাঠাবার পর যদি কিছু হয় তাহলে তারা আমাদের ধরবে। আমরা তো দূতাবাসেই থাকছি।
জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ মুহিত বলেন, জাতিসংঘে এবার সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে রিফর্মিং ব্যাংকিং নিয়ে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর বিশ্বচিত্রই পাল্টে গেছে। এখন নতুন একটি বিষয় হচ্ছে ‘অফশোর ব্যাংকিং’। এখানে সেফটি সিকিউরিটি টুলস ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়নি। ভবিষ্যতেও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা বাংলাদেশের কোন ব্যাংককে দেউলিয়া হতে দেব না। কেউ ডিপোজিট ফেরত পাননি এমন  ঘটনা নেই, তবে হয়তো সেটা পেতে দেরি হয়। কিছু সমস্যা আছে তা অবশ্য আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
তার বক্তব্যের সময় দর্শক সারি থেকে কেউ কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানালে ডেপুটি গভর্নর বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আমার চাকরির চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। আমার এই মেয়াদকালে ব্যাংকে একটা সেন্টও কারচুপি হয়েছে এটা কেউ বলতে পারবে না। এখন নানা কথা বলা হচ্ছে, ডলার নাই, টাকা নাই, অমুক নাই, তমুক নাই। এসবই হচ্ছে ‘প্রপাগান্ডা’। বলা হচ্ছে, রিজার্ভ পড়ে গেল। আসলে আড়াই থেকে তিন মাসের খরচ মিটাবার মতো ডলার থাকলেই চলে। আজকে আমাদের ২১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। তারপরও নানা মিথ্যা প্রপাগান্ডা চলছে।
তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরি হয়েছে বলে সাংবাদিকরা এই নেগেটিভ তথ্য ছড়িয়েছে। তাদেরকে তো বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে নিষিদ্ধ করা হয়নি। কখনো করা হবে না। কিন্তু সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে যেতে পারবেন না। সেখানে ৫ হাজার স্টাফ কাজ করেন। ৬০টা বিভাগ রয়েছে। সাংবাদিকদের তো ভেতরে ঘুরাঘুরির অবারিত সুযোগ দেওয়া যাবে না। তিনি দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, আপনারা এই উন্নয়নের সুবিধা নেবেন অথচ সরকারকে টাকা দেবেন না? রেমিট্যান্স পাঠাবেন না? তিনি আশা করেন,  এবারের পর রেমিট্যান্স ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে।
কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা বলেন, খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। অফশোর ব্যাংকিং-এর প্রভূত সম্ভাবনা আছে। তবে প্রবাসী ভাই-বোনদের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার আছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স যায় বাংলাদেশে। আমরা গর্বের সাথে তা বলে থাকি।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেইন বলেন, বাংলাদেশে অত্যন্ত আধুনিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছে ‘ব্র্যাক ব্যাংক’। গ্রাহকদের প্রতি সেবা দিতেই আমরা কাজ করছি। তিনি প্রজেক্টরে বিভিন্ন ড্যাটা দেখিয়ে বলেন, আপনারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেন বাংলাদেশে ইনভেস্ট করবেন? কারণ সেখানে সুদের হার বেশি। ডলার পাঠালে তা ডলারই থাকবে। এজন্য আপনাদের কোন ট্যাক্স দিতে হবে না। কেউ জানতেও চাইবে না টাকার উৎস কি। আগামীতে অফশোর ব্যাংকিং চালু হবে ৬১টা ব্যাংকে। তিনি দর্শকদের বলেন, আপনারা যে ব্যাংকে টাকা রাখবেন তার সিকিউরিটি ব্যবস্থা দেখে নেবেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো: শিরিন তার বক্তব্যের শুরুতে প্রজেক্টরে বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্প প্রদর্শন করেন। তিনি বলেন, ডাচ বাংলা ব্যাংকের শাখা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার আনাচে কানাচে রয়েছে। সারা দেশে ডাচ বাংলা ব্যাংকের শাখা ১০৮২টি। ডাচ বাংলা ব্যাংকে আপনারা অফশোর ব্যাংকিং করলে অনেক বেশি সুবিধা পাবেন।
সিটি ব্যাংকের এমডি মাশরুর আরেফিন বলেন, সিটি ব্যাংক বাংলাদেশে একমাত্র ব্যাংক যার প্রধান কার্যালয় হচ্ছে নিউইয়র্কে। এ কারণে বছরে দুইবার আমাকে নিউইয়র্ক আসতে হয়। আমরা আস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। এমডি হবার পর আমি ব্যাংকে আমুল পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আমরা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। তিনি বলেন, আস্থার অভাবে মানুষ টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে এমন কথা উঠেছে। আপনারা আমাদের ওপর ১০০ শতাংশ আস্থা রাখতে পারেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কোন ‘ফাইজলামি’ সিটি ব্যাংকে নেই। ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেশি দিই আমরা। আগামীতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার টার্গেট আমার। আমাদের ডলার প্রয়োজন। আশা করি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৪০ বিলিয়ন ডলার ডিপোজিট আমাদের ব্যাংকে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাদের সাপোর্ট আমাদের দরকার।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোর্শেদুল কবীর বলেন, আমাদের ব্যাংকের ৯৭৭টি শাখা আছে সারা দেশে। আমাদের ব্যাংকে রেমিট্যান্স নেটওয়ার্ক খুবই ভালো। আমাদের অগ্রণী ব্যাংক রেমিট্যান্সে সব ব্যাংকের চেয়ে শীর্ষে রয়েছে। তিনি প্রজেক্টরে তার ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরেন।