উৎসবমুখর বইমেলা শেষ হলো
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৪১ এএম, ১ জুন ২০২৪ শনিবার
চার দিনের উৎসব মুখরতায় উদ্দীপ্ত থাকার পর গত সোমবার সমাপ্ত হলো এ বছরের নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বই মেলা। এ বছর ছিল মুক্তধারাপ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই বই মেলার ৩৩তম বার্ষিকী। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৃহত্তম এই উৎসবে প্রতিবারের মতো এবারও ছিল বিপুল মানুষের সমাগম, ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বলতা।
জ্যামাইকায় পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে ‘যত বই তত প্রাণ’ শ্নোগানে এই বইমেলার উদ্বোধন হয়েছিল ২৪ মে। শেষ হলো ২৭ মে। মেলার উদ্বোধন ও সমাপনী ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালন কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা। আর্টস সেন্টারের প্রশস্ত প্রাঙ্গণে ফিতা কেটে এবং মিলনায়তনে ৩৩ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্বোধনী পর্ব সম্পন্ন হয়। উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরিফিন সিদ্দিক, ঢাকা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারোয়ার আলী, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, নিউইয়র্কের কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, কথা সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সদস্য সচিব অভিনেত্রী সারা জাকের, বিশ্ব ভারতীর অধ্যাপক ড প্রহ্লাদ রায়, অভিনেতা ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন, একুশে পদক প্রাপ্ত ছড়াকার লুৎফুর রহমান রিটনসহ শতাধিক গুণীজন।
চার দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য উৎসবে প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত অবধি ছিল নানা আকর্ষণীয় কর্মসূচি। এই উপলক্ষে প্রতিবারই বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদান করা হয় বিভিন্ন নামের পুরস্কার। এ বছর ‘মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার’-এ ভূষিত হলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ‘চিত্তরঞ্জন সাহা শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা পুরস্কার’ পেয়েছে সময় প্রকাশ। বইমেলার তৃতীয় দিন আয়োজক কমিটির পক্ষে পুর¯কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম ফারুক ভূইয়া। এ সময় তার পাশে ছিলেন বইমে ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’র চেয়ারপার্সন ড. নুরুন্নবী। বয়সের কারণে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মেলায় আসতে পারেননি, তবে ভিডিও-বার্তায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের এই বইমেলায় ইতিপূর্বে যোগদানের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি বহুজাতিক সমাজে বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের এই প্রয়াসকে অভিনন্দিত করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এ সময় মেলায় অংশগ্রহণকারি ‘চিত্তরঞ্জন সাহা শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা পুরস্কার’ গ্রহণ করেন ‘সময় প্রকাশ’র ফরিদ আহমেদ। এবার ‘শহীদ কাদরী শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পুরস্কার’ ঘোষণা করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে গোলাম ফারুক ভূইয়া জানান, এ বছর প্রবাস থেকে প্রকাশিত সমস্ত গ্রন্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। প্রাপ্ত বইগুলোর ওপর পর্যালোচনা-বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আমরা পুরস্কার প্রাপ্ত লেখকের নাম ঘোষণা করবো।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা বইমেলা উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, এ আয়োজন বিশ্ব বাঙালি এক মিলনস্থল হয়ে উঠেছে। এই বইমেলা বাঙালি অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন। যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর বাংলাদেশ এ কথাটির সত্যতা বারবার আমরা দেখতে পাচ্ছি এই বইমেলায়।
এবার ‘শহীদ কাদরী শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পুরস্কার’ কে পাচ্ছেন তা অনুষ্ঠানে জানানো সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে গোলাম ফারুক ভূইয়া জানান, এ বছর প্রবাস থেকে প্রকাশিত সমস্ত গ্রন্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। প্রাপ্ত বইগুলোর ওপর পর্যালোচনা-বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আমরা পুরস্কার প্রাপ্ত লেখকের নাম ঘোষণা করবো।
সমাপনী দিনে বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ‘তারুণ্যের উৎসব’এ ছিল যেমন খুশী আঁকো-যেমন খুশী গাও, ধর্ম বর্ণ জাতির উর্দ্ধে জাগোরে নবীন প্রাণ, নবীন কবিদের আসর, নতুন প্রজন্মের লেখক, খাতা থেকে বই, বিকল্প তথ্য-মাধ্যম কেন গুরুত্বপূর্ণ, রন্ধন যখন সংস্কৃতি, সাফল্যের পেছনে, মুক্তিযুদ্ধ ও নতুন প্রজন্মসহ বেশ কয়েকটি পর্ব।
এবারের বইমেলায় অন্যান্যবারের তুলনায় দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি বেশি হলেও বই বিত্রিুর ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্টল দেয়া প্রকাশকরা। অধিকাংশ প্রকাশকই জানান, গতবারের তুলনায় এবার বই বিক্রি কম হয়েছে।
এবার এই ৩৩তম বইমেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন লেখক হাসান ফেরদৌস। সমগ্র অনুষ্ঠানের মঞ্চ ব্যবস্থাপনা ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা-পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সাবিনা হাই উর্বি, মিহির চৌধুরী, সুস্বণা চৌধুরী, চন্দ্রিমা দে, সউদ চৌধুরী ও সেমন্তী ওয়াহেদ।
একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ভারতের রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লিলি ইসলাম, অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিরুপমা রহমান, নাজু আকন্দ, নাহিদ নাজিয়া, শবনম সায়েলা তনুকা, জাফর বিল্লাহ, লিলি ইসলাম ও শাহ মাহবুব।
মেলায় বইয়ের প্রদর্শনী ছাড়াও রয়েছে আলোচনা, সেমিনার, বই পরিচিতি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, তরুণদের অংশগ্রহণে বিশেষ পর্ব, বিতর্কসহ নানা আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের উপর বিশেষ কয়েকটি সিনেমা দেখানো হয়েছে।
এবারের বইমেলায় অন্যান্যবারের তুলনায় দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি বেশি হলেও বই বিত্রিুর ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্টল দেয়া প্রকাশকরা। অধিকাংশ প্রকাশকই জানান, গতবারের তুলনায় এবার বই বিক্রি কম হয়েছে।
বাংলাদেশ, ভারত ও উত্তর আমেরিকার ৪২ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে এবারের মেলায়। প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল সময়, ইত্যাদি, অনন্যা, নালন্দা, কথা প্রকাশ, বিদ্যা প্রকাশ, মাওলা ব্রাদার্স, মুক্তধারা নিউইয়র্ক, স্বদেশ শৈলী, কাশবন, অন্বয়, দেব সাহিত্য কুটির, একুশে চেতনা পরিষদ, কাকলী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, গ্রন্থকুটির, বাংলা একাডেমী, ছড়াটে, বাতিঘরসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। বিপুলসংখ্যক লেখক-কবি-সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠকের সমাগম ঘটেছিল এই মেলায়।
আগামী ২০২৫ সালে একই স্থানে মে মাসের ২৩ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত চলবে আন্তর্জাতিক এই বাংলা বইমেলার ৩৪ তম আসর।