আকাঙ্ক্ষা বেশি পদক্ষেপ কম, চ্যালেঞ্জ অপর্যাপ্ত ও দুর্বল: সিপিডি
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৭:১৮ পিএম, ৭ জুন ২০২৪ শুক্রবার
চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেট ব্যবস্থাও অপর্যাপ্ত ও দুর্বল। সংকটকালে একটি সাধারণ বাজেট দেওয়া হয়েছে। প্রবৃদ্ধির দিকে নজর না রেখে সংকট মোকাবিলা করাই প্রয়োজন ছিল। এই বাজেট দিয়ে সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের অর্থনীতির এত সমস্যার মধ্যে তিনটি বিষয় এই বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল। তার মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং এবং বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। সেখানে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে মুদ্রানীতি নেওয়া হয়েছে, সেটার মাধ্যমে এককভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করা যাবে না। এর সঙ্গে সহযোগী রাজস্ব পদক্ষেপ যদি না নেওয়া হয়, তাহলে তা কমানো সহজ হবে না।
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাকাঙ্ক্ষী মন্তব্য করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে কিছু লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া আছে কিন্তু কীভাবে সেটা করা হবে, তার বিস্তারিত কিছু বলা নেই। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে কোনও দিকনির্দেশনা নেই। বরং আমরা দেখেছি সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের ক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।
আসন্ন অর্থবছরের বাজেট ‘নতুন সরকারের পুরনো বাজেট’ মন্তব্য করে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কাছে বাজেট নিয়ে যে রকম মুনশিয়ানা দেখতে চেয়েছিলাম, তারা সেটা দেখাতে পারেননি। যে কারণে এটা একদিক থেকে জনগণের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ। এই সময়কালে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার বিষয়। এটি দেখার ক্ষেত্রে যেভাবে আর্থিক সংকোচন দরকার, সেটা যতটা না সাধারণ মানুষের ওপর চাপানো হচ্ছে, ততটা সরকারি ব্যয়ে দেখছি না। সেখানে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের ব্যয় সংকোচনটা কবে হবে।
তিনি আরও বলেন, একদিকে জনগণের ওপর সংকোচনের চাপ এবং সরকারের সম্প্রসারণ বলছি না, কিছু সীমিতভাবে ব্যয়, এটি কখনোই আসলে অর্থনীতিকে মূলধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট হবে না। বরং আমাদের অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আসার সময়কাল আরও পিছিয়ে যাচ্ছে।
খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি নিয়ে মোস্তাফিজ রহমান বলেন, এই বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি একটা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। জনসাধারণ যেসসব পণ্য কেনেন, তার অনেকগুলোর ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অনেক নতুন পণ্যে ভ্যাট আরোপ হয়েছে উৎপাদন পর্যায়ে যেটা মানুষের ওপর গিয়ে পড়বে। যে সেবা সাধারণ মানুষ নেন, তার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। যেটা ঘোষিত হয়েছে বছরে চারবার করে বাড়বে। এর সব যদি যুক্ত হয় এগুলো খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির অংশ। সুতরাং সেদিক থেকে আমাদের কাছে মনে হয় যে, নতুন যে টার্গেট করছে সরকার মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করবেন। এটা কমানো তো দূরে থাক বরং মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে।
মোস্তাফিজ রহমান বলেন, খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেটা প্রকারান্তরে আমদানি পর্যায়ে আমদানিকারকদের পকেটে যাবে। এটি সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায় না। শুল্ক ছাড় দিয়ে তেল, আটা ও চালের ক্ষেত্রে করা হয়েছে। এর ফলে খুব বেশি সুফল আসবে বলে মনে হয় না খাদ্য মূল্যস্ফীতির জায়গা থেকে।
কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ করের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করাটা অসৎকে উৎসাহিত ও সৎ করদাতাকে তিরস্কার করা হচ্ছে। এগুলো একধরনের প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা। সরকারের কাছে এই মুহূর্তে এমন কোনও ব্যবস্থা চালু নেই, যেটা দিয়ে কালো টাকা ধরতে পারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। সুতরাং সেই ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু না হলে এভাবে উদ্বুদ্ধ করা, প্রেরণা দেওয়া, কম করারোপ করা, এগুলো দিয়ে কোনও লাভ হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটকে বর্তমান বাস্তবতাগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাজেটে বিভিন্ন গবেষণা খাতে বরাদ্দকে ইতিবাচক মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে একটি ক্ষেত্রের দুয়ার খুলেছে। আগামীতে আরও বরাদ্দ বাড়বে বলে আশা রাখি।