শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লিতে নজর সবার

হাসিনা ভারত যাচ্ছেন আজ

ঢাকা অফিস

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৫৫ এএম, ২২ জুন ২০২৪ শনিবার



 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’দিনের সফরে আজ শুক্রবার ভারত যাচ্ছেন। দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসের দিকে এখন সবার দৃষ্টি। ঐতিহাসিক এই ভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাবার পর এটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। যদিও মোদির শপথ অনুষ্ঠানে অপরাপর কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে শেখ হাসিনাও অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরের আগে দিল্লি সফরটি ভূ-রাজনৈতিক এবং কৌশলগত দিক দিয়ে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সফরে তিস্তা ইস্যু এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গ গুরুত্ব লাভ করতে পারে।
শেখ হাসিনা সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রমনিয়াম জয়শঙ্কর পৃথকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের বিরোধী কংগ্রেস দলের সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপি’র বর্ষিয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদভানির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে তিস্তা ইস্যু প্রাধান্য পেতে পারে। ভারতের অভ্যন্তরীণ সমঝোতা না হওয়ায় চুক্তিটি ঝুলে আছে। যদিও দু’দেশের মধ্যে প্রায় দেড় দশক আগে তিস্তার পানি বণ্টনের ফর্মুলা চূড়ান্ত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কারণে চুক্তি সই হয়নি। অগত্যা তিস্তার পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি এবং দুই তীর সংরক্ষণ করে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার একটি উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি মহলে আলোচনা হচ্ছে। চীন এমন প্রকল্পে অর্থায়নে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলে নড়েচড়ে ওঠে ভারত। তিস্তার এমন প্রকল্পে ভারত আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সফরকালে দিল্লি¬তে হায়দরাবাদ হাউজে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি একান্ত বৈঠক করবেন। তারপর আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন উভয় নেতা। সফরকালে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। ভারত থেকে ফিরে আগামী ৮ জুলাই চীন সফরে যাবেন তিনি। ফলে বেইজিং সফরকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি যাওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব লিখিতভাবে দেওয়া হলে চীন তার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে অভিহিত করছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশীদার হওয়ার টার্গেট রয়েছে চীনের। এমন বাতাবরণের মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানান।
বিনয় কোয়াত্রা তিস্তার প্রকল্পে ভারতের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের সামরিক সহযোগিতা নিয়ে সাম্প্রতিককালে ভারতের স্পর্শকাতরতা লক্ষ্যণীয়। লাদাখে গ্যালভান নদীর তীরে ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘর্ষের পর স্পর্শকাতরা বৃদ্ধি পায়। যদিও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য নিয়ে ভারতের কোনো সমস্যা নেই। কারণ ভারত ও চীনের নিজেদের মধ্যেও বছরে ১২০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য রয়েছে। চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা রয়েছে।
তিস্তা প্রকল্পে চীনের অংশ নেওয়াকে স্পর্শকাতর মনে করে ভারত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, প্রস্তাবিত তিস্তার উন্নয়ন প্রকল্পটি চীনের প্রকল্প নয়। এটি বাংলাদেশের নিজস্ব প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এত বিপুল অঙ্কের অর্থ বাংলাদেশের জোগান দেওয়া কঠিন। তাই চীনের কাছ থেকে ঋত নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে প্রকল্পে চীনা ঋত নিয়ে ভারতের স্পর্শকাতরতা থাকলে ভারত ও চীন উভয়কে নিয়ে একটি কনসোর্টিয়াম করা যেতে পারে। প্রকল্পের ভিন্ন ভিন্ন উপাদানে উভয় দেশই অর্থায়ন করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি¬ সফরে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ২০২৬ সালে চুক্তিটির নবায়ন করতে হবে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তিটি সই হয়েছিল।
এছাড়াও, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করা নিয়ে ঢাকার উদ্বেগ শেখ হাসিনার এবারের সফরকালেও প্রকাশ করা হতে পারে। নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, কানেকটিভিটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ভারতের তরফ থেকে নতুন একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক সহযোগিতা এবং ভারত মহাসাগরে ভারতের ‘সাগর’ প্রকল্প সম্প্রসারণ নিয়েও আলোচনা করতে পারে।
এছাড়াও, ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ফেনী নদীতে ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপনকারী মৈত্রী সেতু পুরোপুরি চালু করা এবং রামপালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আরও একটি ইউনিট চালুর বিষয় আলোচ্য সূচিতে থাকতে পারে। ভারত সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির বিষয় আলোচনা করতে পারে। এছাড়াও, ভারতের ঋণের বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।