অসাধু চক্রের খপ্পরে হোম কেয়ার ব্যবসা
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩৪ এএম, ২২ জুন ২০২৪ শনিবার
ব্যাংক্রাপসির মুখে দুটি কোম্পানী
‘ব্যাঙের ছাতা’ প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে অভিজ্ঞদের সতর্কতা
বাংলাদেশি কমিউনিটির অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি এখন হোম কেয়ার বিজনেস। হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি এ পেশায় জড়িত হয়ে নিজের ও কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করছেন। এই কর্মকান্ড এক ধরনের স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে কমিউনিটির সকল পর্যায়ে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিশাল ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। সামাজিক সংগঠনগুলির তৎপরতায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে কমিউনিটি।
পাঁচ বছর আগের ও আজকের কমিউনিটির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। একদা আমেরিকান মূলধারার রাজনীতিকদের পেছনে ছুটতে দেখা যেত বাংলাদেশি প্রবাসীদের। এখন ভিন্ন চিত্র। মূলধারার রাজনীতিকরাই ছুটে আসছেন বাংলাদেশিদের কাছে। বাংলাদেশিদের কোন অনুষ্ঠানে আসার জন্য তারা প্রবল আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের বক্তৃতায় প্রকাশ পাচ্ছে কমিউনিটির ভূয়সী প্রশংসা। তারা এখন হিসাবে নিতে শুরু করেছেন বাংলাদেশিদের শক্তি। ক্রমবর্ধমান ও কর্মমুখর কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশিরা এই প্রবাসে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। তাদের এই অবস্থানের একটি বহিঃপ্রকাশ সম্প্রতি ঘটেছে লং আইল্যান্ডের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বাংলাদেশের খেলায় আমেরিকার এই স্টেডিয়ামে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি লাল সবুজের পতাকা হাতে উপস্থিত হয়ে দৃশ্যমান করে তুলেছে তাদের অগ্রযাত্রা। মূলধারার অনেক মিডিয়া তা ফলাও করে প্রচার করেছে।
কমিউনিটির এই বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সেবাধর্মী হোম কেয়ার ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরেই অনেক মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠিত সংস্থা এই ব্যবসায়ে নিয়োজিত হয়ে কমিউনিটিকে কল্যাণমূলক সেবা প্রদান করে আসছে। এই সেবায় কমিউনিটি যেভাবে উপকৃত হচ্ছে তা এখন সর্বজনস্বীকৃত। কমিউনিটিতে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই ব্যবসা ক্রমে ক্রমে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। হোম কেয়ার ব্যবসার এই প্রসার দেখে অজানা-অচেনা সুযোগ সন্ধানী বহু মৌসুমী ব্যবসায়ী হোম কেয়ার ব্যবসায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বাঙের ছাতার মতো তারা যত্রতত্র এই ব্যবসার দোকান খুলে বসেছেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই অসাধুতা ও অনৈতিকতার অভিযোগ উঠেছে। ফলে এমন একটি সেবামূলক ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে লেখালেখিও হচ্ছে। এ ব্যাপারে হোম কেয়ারের প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলির কর্তধাররা ক্ষুব্ধ। তারা বলেছেন, পেশাটিকে বিতর্কিত করতেই এই অসাধু ব্যবসায়ীরা মাঠে নেমেছেন। এই সব হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হোম কেয়ার ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তারা কমিউনিটিকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসেই আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এইসব ব্যবসায়ীদের অফিসগুলোতে হানা দিচ্ছেন। হেলথ ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা তাদেরকে ইস্যু করছেন অনিয়মের নানা ভায়োলেশন নোটিশ। তাদের বিরুদ্ধে ট্যাক্স প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে অসত্য তথ্য দিয়ে মেডিকেইড বেনিফিট পাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করার। বিনিময়ে নিজের হোম কেয়ারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অর্ন্তভুক্তি। ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) এর নজরে আছেন অনেকে। বেগতিক দেখে কেউ কেউ নিজের নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সফার করছেন স্ত্রী-সন্তান বা ঘনিষ্ঠ অন্য কারও নামে। অনেকেই দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তাদের হোম কেয়ার ব্যবসাটি বিক্রির জন্য। কিন্তু তাদের অতীত রের্কডের খতিয়ান দেখে কেউ সেগুলি কিনতে এগিয়ে আসছেন না।
জানা গেছে, একটি বড় হোম কেয়ার ও এডাল্ট কেয়ার প্রতিষ্ঠানের কর্নধার তার ব্যবসা বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দাম হাঁকছেন ১২ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। এখন তিনি হাঁটছেন ভিন্ন পথে। এখন তিনি চেষ্টা করছেন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া অর্থাৎ ব্যাংকক্রাপসি ঘোষণা করতে। এর জন্য তিনি এখন বাড়িয়ে চলেছেন বয়স্ক রোগী ও তাদের এইডের সংখ্যা। সাধারণত যাদের সর্বোচ্চ বেতন হবার কথা ঘন্টায় ২১.০৯ ডলার তাদের অফার করা হচ্ছে ঘন্টায় ২৪ বা ২৫ ডলার। একজন অভিজ্ঞ হোম কেয়ার ব্যবসায়ী বলেছেন, হোম কেয়ার এইডদের এই হারে বেতন দিয়ে কেউ মুনাফা করতে পারেন না। গড়ে প্রতিজনের পেছনে ঘন্টায় লোকসান হবে ২ থেকে ৩ ডলার। সেদিকে তোয়াক্কা না করে এরা লোভনীয় অন্যায্য টোপ ফেলে ধরে নিচ্ছেন রোগী ও এইড। সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায় চলছে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এভাবেই কর্মী সংখ্যা বাড়িয়ে, বেতন আটকিয়ে অভিনব কায়দায় ব্যাংকক্রাপসি’র পথে হাঁটছেন দু-একজন ব্যবসায়ী। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, হোম কেয়ার এইডদের বেতন দুই সপ্তাহ পেন্ডিং বা জমা রাখেন কোন কোন মালিক। আরো ২ থেকে ৪ সপ্তাহের বেতন ঝুলিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কম পক্ষে ১০ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়ে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণার চেষ্টায় রয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
জ্যাকসন হাইটসের একজন হোম কেয়ার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধেও বড় ধরনের অসাধুতার অভিযোগ উঠেছে। তিনি অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ছড়ি ঘুড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, অন্যের ব্যবসার ম্যানেজার হয়ে তিনি বনে গেছেন হোম কেয়ার ব্যবসায়ী। দাবী করছেন মালিকানার। প্রতারণার দায়ে আইআরএস কর্তৃক দন্ডিত এই ব্যবসায়ী নিজের নামে কিছু না রেখে আত্মীয়দের নামে একাউন্ট পরিচালনা করছেন। অন্যের ব্যবসা দখল করার অভিযোগে আদালতে তার নামে মামলাও ঝুলছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি এক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি রয়েছেন। যে কোন মুহূর্তে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে তার ‘স্বপ্ন পূরণের’ হোম কেয়ার। তিনি এখন ব্যগ্র তার হোম কেয়ার ব্যবসা বিক্রির জন্য। তিনিও দাম হেঁকেছেন ১০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় বিক্রির ব্যাপারে সুবিধা করে উঠতে পারছেন না। ক্রেতারা অতীত রেকর্ডকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় তিনি এগুচ্ছেন ব্যাংকক্রাপসির পথে। তিনি ব্যাংক্রাপসি ঘোষণা করলে সংকটে পড়তে পারেন প্রায় ৫ হাজার হেলথ এইড ও বাংলাদেশি বয়স্ক মুরুব্বী। তাদের আগেভাগেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।