সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪   আষাঢ় ১৬ ১৪৩১   ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

আমেরিকায় ভারী বৃষ্টিপাতে বন্যার সতর্কতায় ১ মিলিয়ন মানুষ

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২২ পিএম, ২৪ জুন ২০২৪ সোমবার

আমেরিকায় প্রচণ্ড ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের পর রোববার মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের এক মিলিয়নের বেশি মানুষ বন্যা সতর্কতার আওতায় রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আইওয়া ও সাউথ ডাকোটা এলাকায়। এসব জায়গার কিছু নদীর পানি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইওয়ার গভর্নর কিম রেনল্ডস বন্যাকে 'বিপর্যয়কর' আখ্যা দিয়ে ২১টি কাউন্টিতে দুর্যোগ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের পোস্ট করা ড্রোন ফুটেজে বাড়িঘর ও ভবনগুলো প্রায় পুরোপুরি ডুবে যেতে দেখা গেছে। সেই ড্রোন ফুটেজে শুধু ছাদ দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহের শেষ দিকে বন্যার সতর্কতার আওতায় থাকা অন্যান্য স্টেইটগুলোর মধ্যে রয়েছে নেব্রাস্কা, মিনেসোটা, উইসকনসিন এবং ইলিনয়ের কিছু অংশ।

জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডব্লিউএস) এর বুলেটিন অনুসারে, কিছু সতর্কতা রোববার গভীর রাতে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে অন্যগুলো পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
আইওয়াতে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদীর পানির উচ্চতা ১৯৯৩ সালের বন্যার চেয়ে বেশি বেড়েছে। এই সপ্তাহে বেশি কিছু অঞ্চলে ১৮ ইঞ্চি (৪৫ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে।

প্রতিবেশী সাউথ ডাকোটার গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সোমবার ও মঙ্গলবার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে এবং নদীর প্রবাহ রেকর্ড মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। শনিবার সিউক্স জলপ্রপাত থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আইওয়ার রক ভ্যালির প্রায় চার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

শনিবার ভোরে বন্যার কারণে শহরের অনেক মানুষ ও প্রাণী আটকা পড়ে। বন্যায় আটকা পড়া এসব মানুষ ও প্রাণী উদ্ধার করতে হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে উইসকনসিনে আরগাইল গ্রামের একটি ঐতিহাসিক গির্জাও ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কর্মকর্তারা। ঐতিহাসিক গির্জা অ্যাপল গ্রোভ লুথেরান ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গত শনিবার সন্ধ্যার টর্নেডোর আঘাতে গির্জাটি ধ্বংস হয়ে যায়।

অ্যামেরিকার কিছু অংশে সপ্তাহব্যাপী তাপপ্রবাহ মোকাবেলার মধ্যেই এই ভারী ঝড় এলো। এই প্রচণ্ড ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রোববার পর্যন্ত ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ তাপ সতর্কতার সঙ্গে সঙ্গে বন্যা সতর্কতার আওতায় রয়েছেন। তবে এই সতর্কতা আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে কর্মকর্তারা।

গরমে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা কিছু অঞ্চলে প্রায় ১০০ ফারেনহাইট (৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) এ পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তাপপ্রবাহটি মধ্য-আটলান্টিক থেকে নিম্ন মিসিসিপি উপত্যকা পর্যন্ত শহর ও শহরগুলোকে প্রভাবিত করবে। এটি গ্রেট বেসিন এবং ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত প্রভাবিত করবে।

ওয়াশিংটন ডিসি ও নিউ ইয়র্ক সিটিসহ মধ্য আটলান্টিক অঞ্চলে রেকর্ড উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হতে পারে বলে জানিয়েছে এনডব্লিউএস। এদিকে শনিবার বেশ কিছু রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এনডব্লিউএস অনুসারে বাল্টিমোর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এ পৌঁছেছে। যা ১৯৮৮ সালের পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং বন কেটে ফেলার মতো কর্মকাণ্ডের কারণে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হঠাৎ তাপপ্রবাহ বেশি, বন্যা ও টর্নেডোর মতো ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হয়ে উঠছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) বলছে, ১৯৫০ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী তাপপ্রবাহ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।