শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর

তিস্তা নিয়ে মমতার হুশিয়ারি

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৩৫ এএম, ২৯ জুন ২০২৪ শনিবার



রেল ট্রানজিটে অগ্রগতি
উভয় দেশের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন
 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে তিস্তা নিয়ে জটিল এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনার সফরের পর পরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এক চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিশ্চয়ই কিছু না কিছু কথা বলেছেন। এই আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রতিনিধি রাখা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গকে পাশ কাটিয়ে তিস্তা চুক্তি করা হলে তার পরিণতি সম্পর্কেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। মমতা ব্যানার্জি গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি নবায়ন করার ব্যাপারেও তাঁর আপত্তি উত্থাপন করে বলেছেন, কলকাতা বন্দরের নাব্যতার জন্য যথেষ্ঠ পানি অবশ্যই রাখতে হবে। এদিকে, চীনের অর্থায়নে তিস্তায় প্রকল্প গ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে খোদ মোদির সরকার। চীনের অর্থায়ন বন্ধ করতে ভারত নিজে তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। এই লক্ষ্যে ভারত একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে পাঠাবে। জটিল সমীকরণে তিস্তা আটকে গেলেও নতুন একটি রেল ট্রানজিকের ব্যাপারে অগ্রগতি হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, গেদে-দর্শনা থেকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি হয়ে ডালগাঁওয়ের উপর দিয়ে হাশিমারা পর্যন্ত একটি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ট্রানজিট সুবিধা দেবে ভারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘোষণা দিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করার বিষয়ে আলোচনা হয়। শেখ হাসিনা দিল্লিতে বিরোধী কংগ্রেস দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তার পুত্র রাহুল গান্ধী এবং কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শপথ অনুষ্ঠান শেষে দেশে ফেরার ১০ দিনের মাথায় গত ২১ ও ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে দিল্লি যান। যদিও প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মনস্থির করেছিলেন যে, এত তাড়াতাড়ি দ্বিপক্ষীয় সফর করবেন না। কিন্তু দিল্লির পীড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত সফরটি অনুষ্ঠিত হলো। অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে কী কী চুক্তি হচ্ছে সে সম্পর্কে জানার লক্ষ্যে এই সফর আয়োজনে দিল্লি অধিক আগ্রহী ছিল। শেষ পর্যন্ত সফরে বাংলাদেশের অর্জন কী সে বিষয়ে এখন চলছে নানা বিশ্লেষণ। এবারের সফরের বিশেষত্ব হলো, প্রতিবার দ্বিপক্ষীয় সফরের পর লম্বা একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়। এবার তা দেয়া হয়নি। এবার তুলানামূলক সংক্ষিপ্ত আকারে ‘শেয়ার্ড ভিষণ ফর ফিউচার’ ঘোষণা করা হয়। এই ভিশন স্টেটমেন্ট দিয়েছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
ভিশন স্টেটমেন্টে তিনটি ‘সি’ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। এই তিন ‘সি’ হলো, কানেকটিভিটি, কমার্স ও কলাবোরেশন। এই তিন ‘সি’ বিষয়ক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে অনেকটা ভবিষ্যৎ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। কানেকটিভিটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, মানুষ, পণ্য ও সেবাসমূহ চলাচলে ট্রানজিট তথা কানেকটিভিটি গুরুত্বপূর্ণ। ভিশন স্টেটমেন্টে নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে শক্ত একটা অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এটা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে। ভিশন স্টেটমেন্ট একটি নতুন ডকুমেন্ট সংযুক্ত করছে ভবিষ্যৎমুখী সহযোগিতার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র যেমন, তথ্য প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা প্রভৃতি অর্ন্তভুক্ত। এছাড়াও, জ¦ালানী, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে।