বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪   আষাঢ় ১৮ ১৪৩১   ২৬ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

বাংলাদেশ

পুলিশের দুর্নীতি ফাঁস করছে পুলিশই

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৩৮ এএম, ২৯ জুন ২০২৪ শনিবার



ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া সহ পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য পাচারের ঘটনার সঙ্গে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ন্যাশনাল টেলি কমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলেছে, পুেিলশের ভেতরেরই মহল বিশেষ এসব বিষয় ফাঁসের সাথে জড়িত।   
এনটিএমসি’র এই তথ্যে এখন বাংলাদেশ পুলিশের অন্দরমহলে ‘অবিশ্বাস’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তথ্য ফাঁস হবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহজে কেউ কাউকে আর বিশ্বাস করতে পারছেন না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি’র প্রভাবশালী সাবেক পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার ব্যক্তিগত তথ্য পাচার হবার পর পুলিশে কানাঘুষা, অবিশ্বাস আরও বেড়েছে। তার তথ্য পাচারের ঘটনায় জড়িত বলে সর্বশেষ বরখাস্ত হয়েছেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক। ন্যাশনাল ইনফরমেশন পোর্টাল (এনআইপি) থেকে ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার ব্যক্তিগত তথ্য পাচারের সঙ্গে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক জড়িত বলে জানা যায়। এর আগে বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিচয়পত্রের তথ্য পাচার করার পর তা প্রকাশ করা হয় ‘টেলিগ্রাম চ্যানেলে’। যে সকল তথ্য পাচার হয়েছে তার সবই কোন না কোন ‘টেলিগ্রাম চ্যানেলে’ প্রকাশ করা হচ্ছে। তথ্য পাচারকারীদের সঙ্গে ‘টেলিগ্রাম চ্যানেলে’র ফাঁদ বা তাদের একটি যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা। তথ্য পাচার করে অন লাইন ‘টেলিগ্রাম চ্যানেল’-এ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশের সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য পাচারের ঘটনায় গত কয়েক সপ্তাহে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ৭ জন কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন। তথ্য পাচার করে বিক্রির ঘটনায় ‘সাপ্তাহিক আজকাল’-এ গত ১৪ জুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
তথ্য পাচারের ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হককে বরখাস্তের আগে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহানা ইয়াসমিন, র‌্যাবে কর্মরত পুলিশ সুপার (এসপি) তারেক আমান বান্না, সাইবার ক্রাইম উইংয়ের মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র রায় এবং অপারেশন উইংয়ের খায়রুল ইসলাম বরখাস্ত হন। এবার তথ্য পাচারে এসআই পরিমল চন্দ্র দাস ও এএসআই মো: আরিফ হোসেনের নাম এসেছে।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার এনটিএমসি’র ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গতকাল বুধবার এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, ‘তথ্য প্রমাণসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম এক প্রজ্ঞাপনে বলেন, ‘অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হকের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সরকারী চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৯(১) এবং শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালায় ২০১৮ এর বিধি ১২(১) অনুযায়ি সরকারী চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত সমীচীন মর্মে বিবেচিত হওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।’ পরে তিনি বলেন, তথ্য পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হবে।
ন্যাশনাল ইনফরমেশন পোর্টাল (এনআইপি)-এ ঢুকে মানুষের ব্যক্তিগত ড্যাটা সংগ্রহ করে পাচারের সঙ্গে জড়িতরা পুলিশে এবং র‌্যাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।
গত ১২ জুন ন্যাশনাল টেলি কমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) থেকে ডিএমপি’র সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াকে নিয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টের কমেন্ট সেকশনে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল-এর লিংক ছিল। সেখানে ওইদিন সন্ধ্যায় আসাদুজ্জামান মিয়ার ইএসএএফ ফরমসহ একটি টেলিগ্রাম পোস্ট দেখা যায়। ফরমের কিউআর কোড পর্যালোচনা করলে এনটিএমসি সার্ভার থেকে এএসআই মো: আরিফ হোসেনের আইডি থেকে ডাউনলোড করার প্রমাণ পায় এনটিএমসি’র কর্মকর্তারা।
ডিবি’র উপ-পুলিশ কমিশনার নাজির খান তাঁর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক তাঁর সরকারী মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এলআইসি শাখায় কর্মরত এসআই পরিমল চন্দ্র দাসের হোয়াটসঅ্যাপে আসাদুজ্জামান মিয়ার মোবাইল নম্বরের এনআইডি চেয়ে মেসেজ পাঠান। এ প্রেক্ষিতে এসআই পরিমল চন্দ্র দাস সরকারী নিপ সেবা হটলাইন নম্বরে এনআইডি সরবরাহের বার্তা দেন। ওই বার্তা পেয়ে ওইদিন রাত ৮টা ৩৯ মিনিটে ডিউটিরত অবস্থায় এএসআই মো: আরিফ হোসেন তার আইডি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করে। পরে তিনি ডাউনলোড শেষ করে এসআই পরিমল চন্দ্র দাসের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠান। পরিমল চন্দ্র দাস পরদিন অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার জিসানুল হকের সরকারী মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে এসব তথ্য পাঠিয়ে দেন। যা পরে টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেখতে পাওয়া যায়। এভাবেই ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার তথ্য পাচার হয়ে যায় বলে তদন্তে জানা গেছে। এইসব তথ্য পাচারের ঘটনার রেশ ধরে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি নিয়ে দেশে এখন তোলপাড় চলছে।