নিউইয়র্কে কনস্ট্রাকশন কাজে প্রতারণা
আজকাল রিপোর্ট
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৪৭ এএম, ২৯ জুন ২০২৪ শনিবার
প্রতারকের খপ্পরে বহু বাংলাদেশি
নিউইয়র্কে বাড়ি বা দোকানের কনস্ট্রাকশন কাজ করাতে গিয়ে এক শ্রেণীর কন্ট্রাক্টরের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বাড়ির মালিকরা। প্রতারক কন্ট্রাক্টরদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই বিপুল পরিমাণ অর্থ খুইয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন প্রতারণার ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে এবং এর ফলে বাড়ির মালিকরা কনস্ট্রাকশন কাজ করাতে আতঙ্ক বোধ করছেন।
কুইন্স, ব্রুকলিন, ম্যানহাটন, লং আইল্যান্ড এবং ব্রঙ্কস-এর ভুক্তভোগী বাড়ি মালিকরা জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত রয়েছেন কিছু স্প্যানিশ ও বাংলাদেশি কন্ট্রাক্টর। এরা কাজের শুরুতে চুক্তির বেশিরভাগ টাকা নিয়ে কাজ শেষ না করেই আত্মগোপনে চলে যায়। তারা নিজেদের পরিচয় ও ঠিকানা গোপন করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাদের দেওয়া ঠিকানায় গিয়েও তাদেরকে পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে বাড়ি বা দোকানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে মালিকদের গুনতে হয় অতিরিক্ত আরো বিপুল পরিমাণ অর্থ।
ম্যানহাটানের একজন ব্যবসায়ী গত বুধবার আজকালকে বলেন, কুইন্স ভিলেজে আমার বাড়ির এবং ম্যানহাটানে দোকানের কাজ করাতে গিয়ে একজন বাংলাদেশি কন্ট্রাক্টরকে পেয়ে প্রথমে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমার আমার এক লাখ ডলারের মতো অর্থ ক্ষতি করে দিয়েছেন। দোকানের কাজ শুরু করার পরই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। তাকে আর পাওয়া যায়নি। ছয় মাস ধরে ম্যানহাটানে আমার ব্যবসা বন্ধ। অথচ প্রতি মাসেই আমি ৭ হাজার ৫শ’ ডলার করে দোকানের ভাড়া পরিশোধ করে চলেছি। দোকানের কাজ শেষ না করেই ওই বাংলাদেশি কন্ট্রাক্টর চলে গেছেন। তিনি বলেন, কোনভাবেই তাকে না পেয়ে বহু কষ্টে তার ঠিকানা খুঁজে বের করে ব্রুকলিনে তার বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। ৭ হাজার ডলারে কাজের চুক্তি হওয়ার পর ৩ হাজার ৫শ ডলার নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। পেমেন্ট নিয়ে তিনি আর আসেননি। তিনি জানান, এসব কন্ট্রাক্টররা শুরুতেই ক্যাশ ডলার নিতে চায়। চেক-এ তারা পেমেন্ট নিতে চায় না বলে জানান তিনি। দ্বিতীয় আরেকজন কন্ট্রাক্টরকে ১২ হাজার ডলারের চুক্তিতে তিনি এখন নতুন করে কাজ করাচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ১ লাখ ডলারের মতো অর্থ ওই বাংলাদেশি কন্ট্রাক্টরের কারণে তার নষ্ট হয়েছে। তার মতো আরো অনেকেই কনস্ট্রাকশন কাজ করাতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে তিনি জানান।
জ্যামাইকায় ব্রায়ার রোডের একজন মালিক তার বাড়ির স্টোর রুমের কাজ করাতে গিয়ে কন্ট্রাক্টরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এই কাজের জন্য বাংলাদেশি এই মালিক বাংলাদেশি এক কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে ৬০ হাজার ডলারের চুক্তি করেন। কাজের শুরুতেই ওই বাংলাদেশি কন্ট্রাক্টর ৪০ হাজার ডলার নিয়ে নেন। ডলার নেওয়ার পর ওই কন্ট্রাক্টর কোন কিছু না জানিয়েই যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমন অবস্থায় আদালতের স্মরণাপন্ন হন বাড়ির মালিক। তিনি বলেন, শুনানি শেষে কন্ট্রাক্টরকে ২৪ হাজার ডলার আমাকে ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তিনি বলেন, এইসব কন্ট্রাক্টররা বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট মানুষদের নাম ব্যবহার করে কাজ নিয়ে থাকে। এই কন্ট্রাক্টর বাংলাদেশ সোসাইটির এক কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করেছিলেন। আদালতের নির্দেশনার পরও ওই বাংলাদেশি কন্ট্রাক্টর তাকে ২৪ হাজার ডলার এখনও পর্যন্ত ফেরত দেননি বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশি একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রতারক কন্ট্রাক্টরদের অসাধুতার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনও করতে হয়েছে কোন কোন ব্যবসায়ীকে। তারপরও কেউ না কেউ তাদের প্রতারণার খপ্পরে পড়ছেন। আদালতে মামলা করার পর তা নিয়ে আরও সময় এবং অর্থ নষ্ট হচ্ছে। প্রতারক কন্ট্রাক্টরদের ব্যাপারে বাড়ির মালিকদের সতর্ক থাকতে কাজের শুরুতেই ডিড ডকুমেন্ট করে চেকের মাধ্যমে পেমেন্ট দিতে পরামর্শ দেন তিনি।