শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের পর বাইডেনকে নিয়ে নানা সমীকরণ

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৮:১২ পিএম, ২ জুলাই ২০২৪ মঙ্গলবার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘পারফরম্যান্সে’ উদ্বেগ বেড়েছে ডেমোক্র্যাট দলের বিশ্লেষকদের মধ্যে। গত ২৮ জুন টেলিভিশন ওই বিতর্কের পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আসন্ন নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকবেন কি থাকবেন না। এক্ষেত্রে যদি বাইডেন নির্বাচনী লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন বা তাকে সরে যেতে হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের করণীয় কী হতে পারে এ বিষয়টি নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অনলাইন সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, যদিও বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি কোনোভাবেই সহজ বিষয় হবে না। কেননা বাইডেন ইতোমধ্যেই ডেমোক্র্যাট দল থেকে আগামী নির্বাচনের জন্য মনোনীত হয়েছেন এবং প্রাথমিক বাছাইয়ে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় তিনিই শীর্ষে রয়েছেন। প্রাথমিক নির্বাচনের ফলাফলে বাইডেনকে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখোমুখি হতে হয়নি।

ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে তিনিই সবার উপরে রয়েছেন। এতে বুঝা যায় যদি বাইডেন আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে সেটি হবে তার ইচ্ছাবিরুদ্ধ একটি সিদ্ধান্ত।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে বাইডেনের ‘পারফরম্যান্সের’ প্রতিক্রিয়ায় সিএনএনের বিশ্লেষক এবং ডেমোক্র্যাটিক দলের কৌশলবিদ ডেভিড অ্যাক্সেলরড বলেছেন- এটি ষাটের দশক নয়, যেহেতু ভোটাররাই বাইডেনকে মনোনীত করেছেন তার অর্থ হচ্ছে তিনিই আগামী নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাট দলের মনোনীত প্রার্থী।

সিএনএন বলছে, এর আগে ১৯৬৮ সালে ভোটাররা প্রাথমিক নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুবার্ট হামফ্রেকে নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। তবে সেসময় ভিয়েতনাম যুদ্ধনীতির কারণে তার জনপ্রিয়তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ শুরু হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধনীতির ফলে সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন তার পদ থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তখন হমাফ্রে প্রেসিডেন্ট লিন্ডনের স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু ভিয়েতনাম নীতির ধারাবাহিকতার প্রতিনিধিত্ব করায় তিনিও তোপের মুখে পড়েনে এবং তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে।

হামফ্রে মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই বিক্ষোভকারীরা তার অপসারণ দাবি করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন যাতে সেসময় দেশটিতে ব্যাপক সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছিল। যেহেতু সময় অনেক গড়িয়েছে তাই সেই ষাটের দশক এর এখনকার সময়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।

২০২৪ সালে এসে যদি বাইডেন আসন্ন নির্বাচনী দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন তাহলে এ বিষয়টি অন্যরকমই হবে বলে মনে করেন ওই বিশ্লেষক। যদিও এখনও বাইডেনের সরে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত তার দল দেয়নি। আগামী আগস্টে ডেমোক্র্যাটদের শিকাগোতে বৃহৎ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এখন যদি বাইডেনকে আগামী নির্বাচন থেকে যদি সরে দাঁড়াতে হয় তাহলে ডেমোক্রাটদের অন্য প্রার্থীকে নির্বাচনের জন্য মনোনীত করতে হবে।

দেশজুড়ে ডেমোক্র্যাট দলের প্রায় ৩ হাজার ৯০০ প্রতিনিধিকে গত ২২ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয় দলটি। তাদের বেশির ভাগই বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা বাইডেনের প্রতি তাদের অঙ্গীকার ব্যাক্ত করার পাশাপাশি বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রেও সম্মতি দিয়েছে। সুতরাং এখন ডেমোক্র্যাট যদি নতুন করে প্রার্থী বাছাইয়ে নামে তাহলে দলটির অভ্যন্তরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। সেদিক থেকে এখন যদি বাইডেন নির্বাচনী দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন তাহলে সমর্থকদের আবার বাইডেনের স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে বাইডেনের পরিবর্তে ডেমোক্র্যাট দলের পক্ষ থেকে কে হবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বাইডেনের পরিবর্তে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে অগ্রসর প্রতিনিধি হচ্ছেন ডেমোক্র্যাট দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। তবে এক্ষেত্রে দলটির অন্যান্য প্রতিনিধিও রয়েছেন যারা এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও কার্যকরী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউজম। তিনি শুক্রবারের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে বাইডেনের পক্ষে সমর্থন অযোগ্য বলে প্রস্তাব করেছিলেন। এমনকি তিনি হ্যারিসকেও চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। নিজ দলের মধ্যে এমন পরিবর্তনের ঘোষণা এলে দলটিতে ভাঙ্গনের সম্ভাবনা রয়েছে। ডেমোক্র্যাট দলে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ৭০০ জনের একটি বিশেষ প্রতিনিধির দল রয়েছে। যেখান থেকে তারা চাইলে নতুন কাউকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীতের জন্য বাছাই করতে পারেন।

মূলত প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ট্রাম্পের সামনে নিষ্প্রভ থাকায় বাইডেনকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেক সমালোচকই বাইডেনের বয়স নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে বাইডেনের বয়স ৮১ বছর। রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে তার বয়সকে কেন্দ্র করে নানা বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। যদিও বাইডেন বয়সকে কমই তোয়াক্কা করছেন।