রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪   আশ্বিন ২০ ১৪৩১   ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

বাংলাদেশে ফের বিতর্ক

ঢাকা অফিস

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:১০ এএম, ৬ জুলাই ২০২৪ শনিবার

ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট ইস্যু


ভারতকে নতুন করে আরও রুটে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ফের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ^ায়নের যুগে দরোজা বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। অপরদিকে, বিরোধী বিএনপি নেতারা বলছেন, ট্রানজিটের নামে বাংলাদেশ ভারতকে করিডোর দিচ্ছে। অর্থাৎ ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে সরাসরি ট্রেন যাচ্ছে। ট্রানজিটে সাধারণত তৃতীয় দেশে যাওয়া যায়। করিডোর দিয়ে মালবাহী ট্রেনে ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্ত্র নেয়ার কাজে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।  
রেলপথে ট্রানজিটের ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ট্রেনে নেপাল ও ভুটানে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণে ভারতের রেলপথ ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ। অপরদিকে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দেশটির অপর অংশের রেল পুনঃসংযোগে সুবিধা দেবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ ও ২২ জুন দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে এই সফর অনুষ্ঠিত হয়। ভারতে মোদির নেতৃত্বে জোট সরকারের শপথ গ্রহণের সময়েও এই অঞ্চলের অপরাপর নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন। তার ১০ দিনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সফরও করেন তিনি। এই সফরে দুদেশের মধ্যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ট্রানজিটসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের একটি কপি যুগান্তরের হাতে পৌঁছেছে।
সমঝোতা স্মারকে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যে সদ্য চালু হওয়া হলদিবাড়ি (ভারত)-চিলাহাটি (বাংলাদেশ) এবং বুড়িমারি-চ্যাংড়াবান্ধা রুটে রেল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অনুমতি দেবে ভারত। এই মেমোরেন্ডাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রুট এবং প্রয়োজনীয় স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) নির্ধারণ করা হবে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। এসব বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভুটানের গেলেফু পর্যন্ত সংযোগের বিষয়েও আলোচনা করা হবে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যে সিঙ্গাবাদ (ভারত)-রোহনপুর (বাংলাদেশ) এবং রাধিকাপুর (ভারত)-বিরল (বাংলাদেশ) রুটে ভারতের রেল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অনুমতি দেবে ভারত। এই মেমোরেন্ডাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রুট এবং এসওপি পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। এ বিষয়ে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ও নেপালের সংযোগকারী রুট নিয়েও আলোচনা করা হবে।
এতে বলা হয়, ভারত থেকে এবং ভারত অভিমুখে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণে রেল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অনুমতি দেবে বাংলাদেশ। এই মেমোরেন্ডাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রুট এবং এসওপি নির্ধারণ হবে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কলকাতা, আগরতলা, নিউ জলপাইগুড়ি এবং করিমগঞ্জের মধ্যে সংযোগ রুট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। উলে¬খ করা প্রয়োজন যে, স্বাধীনতার পূর্বে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) ওপর দিয়ে ভারতের রেল ট্রানজিট সুবিধা ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের কারণে এ ট্রানজিট বন্ধ হয়ে যায়।
সমঝোতা স্মারকে উলে¬খ করা হয়, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যেসব পণ্য এবং যাত্রী চলাচল করবেন; সংশি¬ষ্টদের বাংলাদেশের আইন মেনে করতে হবে। যাত্রী ও পণ্য চলাচলে পরিবহণ, অন্যান্য সেবা এবং খরচের জন্য চার্জ দিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ট্যাক্স এবং ফিসও দিতে হবে। উভয় দেশ প্রয়োজনীয় দলিল চূড়ান্ত করা এবং প্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন উভয়ে সম্মত সময়ের মধ্যে সম্পাদন করবে। এই ব্যবস্থাকে সুষম, কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে উভয় দেশ বিভিন্ন পন্থা এবং মাধ্যম খুঁজে দেখবে।
সমঝোতা স্মারক মোতাবেক, দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত এই সমঝোতা স্মারকের মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি থাকবে। এই কমিটিতে উভয় দেশের রেল, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কারও অংশ নেওয়া প্রয়োজন হলে কমিটি সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। স্ট্যান্ডিং কমিটি কমপক্ষে প্রতি ৬ মাসে একবার বৈঠকে মিলিত হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বৈঠকের ফলাফল সংশি¬ষ্ট দেশকে কমিটির তরফে অবহিত করা হবে।
এই সমঝোতা স্মারকটি সই করার দিন থেকে কার্যকর হবে এবং কোনো একপক্ষ ৬ মাস আগে নোটিশ দিয়ে বাতিল না করা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য হলে তা উভয়পক্ষে আলাপ-আলোচনা করে দূর করা হবে। উভয়পক্ষ আলোচনা করে তা সংশোধনও করা যাবে।
নেপাল ও ভুটানে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণে বাংলাদেশকে ভারত ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ায় এটি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মোংলা বন্দর কার্যকর হবে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও ট্রানজিটের কারণে বাংলাদেশের লাভ হবে। অপরদিকে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে দেশটির অপর অংশের সংযোগের জন্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই অংশের মধ্যে শিলিগুড়ি করিডর নামে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি করিডর ছাড়া সরাসরি কোনো সংযোগ পথ নেই। এই পথে ভারতের দুই অংশের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ আছে। করিডরটি অনেকটা মুরগির গলার মতো দেখতে হওয়ায় এটি ‘চিকেনস নেক’ নামে অধিক পরিচিত। এই করিডরের পাশে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের অবস্থান। চীনের সীমান্তও বেশি দূরে নয়। ফলে চীনের সঙ্গে ভারতের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধাজনক। মিয়ানমারের কালাদান নদীর মধ্য দিয়েও দুই অংশের সংযোগ সৃষ্টির ট্রানজিট চালুর চেষ্টা করছে ভারত। মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটির কাজ সাময়িক বন্ধ আছে।