বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুত্তালিব বিশ্বাসকে সংবর্ধনা

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:১৯ এএম, ৬ জুলাই ২০২৪ শনিবার

সাহিত্য একাডেমীর অনন্য আয়োজন

 
 
প্রবীণ সংগীত বিশারদ মুত্তালিব বিশ্বাসকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে সাহিত্য একাডেমীর গত অনুষ্ঠানটি অর্জন করেছিল অনন্য এক  বৈশিষ্ট্য। প্রায় নবতিপর এই সংগীত সাধক শোনান সংগীত জগতে তার দীর্ঘ পদচারণার কথা, শোনান সংগীত নিয়ে তার অতীত দিনের অভিজ্ঞতার কথা।
গত ২৮ জুন মাসের শেস শুক্রবারে জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র  নিয়মিত মাসিক সাহিত্য আসর। এবারের আসর দু'টি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বের আয়োজনে ছিল  মুত্তালিব বিশ্বাসের সংবর্ধনা।  দ্বিতীয় পর্বে ছিল একাডেমির নিয়মিত আয়োজন, স্বরচিত পাঠ, সাহিত্য আলোচনা, পাঠের জন্য বই বিতরণ ও বই আলোচনা।
মুত্তালিব বিশ্বাসের সংবর্ধনায় তাকে  নিবেদন করে রবীন্দ্রনাথের ‘স্মরণ’   কবিতাটি আবৃত্তি করেন পারভীন সুলতানা। মুত্তালিব বিশ্বাসের পরিচিতি পাঠ করেন কবি বেনজির শিকদার। তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, রাহাত কাজী শিউলি। তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ ও  সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক ও লেখক মনজুর আহমদ। তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন  সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ, মনজুর আহমদ, হাসান ফেরদৌস, মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আহমাদ মাযহার, কাজী আতীক,  নীরা কাদরী,  এ.বি.এম সালেহ উদ্দিন,  সুমন শামসুদ্দিন,  তমিজ উদদীন লোদী, আদনান সৈয়দ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।
মুত্তালিব বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ  বলেন, মুত্তালিব বিশ্বাস হলো সূর্য, আমি তাঁর কাছে কুপির মতো। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর গান শুনেছি। গান পরিবেশনের আগে তিনি গানের বৃত্তান্ত যেভাবে তুলে ধরেন, আমি বিস্মিত হই।
মনজুর আহমদ বলেন, মুত্তালিব বিশ্বাসের বই আমি পড়েছি, এবং আমার পত্রিকার জন্য তাঁকে দিয়ে লিখিয়েছি। তাঁর লেখার যে বিষয়টি আমার ভালো লাগে তা হলো, তাৎক্ষণিক তীব্র বিষয়টিও তিনি এমন ভাষায় লেখেন, এমন শব্দ ব্যবহার করেন, যেখানে কষাঘাত আছে, সমালোচনা আছে, কিন্তু যা পড়ে তিক্ততা তৈরি হয় না, খারাপ লাগে না। আমি অশীতিপর, পেছনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে না, ভুল হয়ে যায়। অথচ, মুত্তালিব বিশ্বাস অসাধারণ স্মৃতিধর ব্যক্তি, তিনি বিস্ময় আমার কাছে।
লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, জাতীয় সংগীতের স্বরলিপি করেছেন মুত্তালিব বিশ্বাস। ভালো মানুষের গুণ হলো তিনি বিনয়ী হোন, আর ভালো লেখক মানে তিনি অনুসন্ধিৎসু হোন। মুত্তালিব বিশ্বাসের দুটো বই পড়ে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি, তিনি অতি কঠিন, অতি শুকনো, অতি কট্টর বিষয়গুলোকে ভেঙে সহজভাবে বলতে পারেন। অর্থাৎ, বিষয়বস্তু আত্মস্থ করে তিনি লেখেন।
ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, মুত্তালিব বিশ্বাস আমার অভিভাবক, নাকি বন্ধু, আজও আমি সেটি নিশ্চিত হতে পারি নি।
সংবর্ধনার জবাবে মুত্তালিব বিশ্বাস বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে যারা আসে, পড়ে, তাদের পাঠ শুনে, লেখা পড়ে মুগ্ধ হই, আর ভাবি তারা এত শব্দ কোথায় পায়, এতো শব্দ তো আমি জানি না। আমি কেন ওদের মতো লিখতে পারি না। সাহিত্য একাডেমি একটি শিক্ষালয়, কিন্তু এখানে কেউ কারো শিক্ষক নয়, আবার সকলে সকলের শিক্ষক। নিজের অনুভূতি থেকে বলছি, যত দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে সাহারা মরুভূমির সমস্ত বালুর মধ্যে আমি একটা বালুকতা মাত্র। সারমর্ম হলো, আপনাদের এই প্রেরণা, প্রশংসা আমি মাথা পেতে নিলাম।
তিনি আরও বলেন,আমার আব্বা অর্থ সম্পদে বলীয়ান না হলেও আমাকে অমূল্য কিছু উপদেশ দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, জীবনে অন্যের চিঠি বিনা অনুমতিতে পড়বেনা, এমনকি সে চিঠি যদি পোস্ট কার্ডেও লেখা হয়। কখনো আড়ি পেতে অন্যের কথা শুনবে না। যা তুমি নিজে অর্জন করো নি এমন ধন উপভোগের কোনো অধিকার তোমার নেই। এমন অনেক উপদেশের মধ্যে কয়েকটি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। তাঁর উপদেশগুলো আমি মেনেও চলেছি, কিন্তু আজ মানতে পারলাম না। সাহিত্য একাডেমিতে এতক্ষণ ধরে আপনারা যা বলেছেন আমি এগুলো করি নি, কিন্তু চুপচাপ বসে থেকে শুনতে হলো।
তিনি ‘যদি গোকুল চন্দ্র ব্রজে না এলো’ গানটির আংশিক  খালি গলায় গেয়ে শোনান।  
এবারের আসরে আবৃত্তি করেন মুমু আনসারী, এবং স্বরচিত পাঠে ছিলেন হুসাইন কবীর, কাউসার রোজী ও মণিকা চক্রবর্তী।
আসরে উপস্থিত ছিলেন ফেরদৌস সাজেদীন, আবেদীন কাদের, রেখা আহমেদ, হুসনে আরা, শামস আল মমীন, ফরিদা ইয়াসমিন, প্রতাপ দাস, ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, রাণু ফেরদৌস, হাসানুজ্জামান সাকী, নাসির শিকদার, সুরীত বড়ুয়া, আবু সাঈদ রতন, ধনঞ্জয় সাহা, মিনহাজ আহমেদ, সাদিয়া খন্দকার, সেমন্তী ওয়াহেদ, রিমি রুম্মান, মাসুম আহমেদ, মনিজা রহমান, এলি বড়ুয়া, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, আকবর হায়দার কিরণ, রুপা খানম, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, সীমু আফরোজা, হুমায়ুন কবির ঢালী, মাহফুজ আলম, বিশ্বাস করবী ফারহানা, বিশ্বাস কেতকী ফারহানা, ফ্লোরা, মিয়া এম আছকির, নাসিমা আক্তার, ওয়াহেদ হোসেন, শহীদ উদ্দীন, সবিতা দাস, এস.এম মোজাম্মেল হক, আবু রায়হান, আব্দুল কাইয়ুম, শফিক ইসলাম, পলি শাহীনা প্রমুখ।