এক দশকের সবচেয়ে তীব্র দাবদাহের কবলে যুক্তরাষ্ট্র
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৫০ পিএম, ৯ জুলাই ২০২৪ মঙ্গলবার
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র দাবদাহের কবলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের বড় অংশে তাপমাত্রা সতর্কতার আওতায় ১৩ কোটির বেশি মানুষ। চরম তাপে বিপর্যস্ত পুরো দেশ। উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যেই আবারও তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভেঙেছে দেশটি। এই তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন পূর্বাভাসকারীরা।
৬ জুলাই শনিবার জাতীয় আবহাওয়া বিভাগের (এনডব্লিউএস) বরাত দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক রেডিও সম্প্রচারকারী ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূলজুড়েই এই তাপপ্রবাহ অনুভূত হবে। আনাদোলু এজেন্সি।
এনডব্লিউএস বলেছে, একটি বিপজ্জনক এবং ঐতিহাসিক তাপপ্রবাহ সবেমাত্র এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে। রোববার থেকে বুধবার সময়সীমার মধ্যে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এনডব্লিউএসের কর্মকর্তা জ্যাকব অ্যাশারম্যান বলেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম, মধ্য-আটলান্টিক ও উত্তর-পূর্বের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। পূর্বাভাসকারীরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলেও তাপপ্রবাহ থাকবে। তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতা রয়েছে বাল্টিমোর ও ম্যারিল্যান্ডের কিছু অংশেও। এসব এলাকায় তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
দুঃখজনকভাবে, গরমে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর অ্যারিজোনার মারিকোপা কাউন্টিতে এবং ফিনিক্সে কমপক্ষে ১৩ জন তাপজনিত কারণে মারা গেছেন। ফিনিক্সের সাউথ মাউন্টেন পার্কে হাইকিং করার সময় একটি ১০ বছর বয়সি বালকের সাম্প্রতিক মৃত্যু এই তাপপ্রবাহের দ্বারা সৃষ্ট গুরুতর বিপদকে আরও স্পষ্ট করে। বাল্টিমোর এলাকার জন্য জাতীয় আবহাওয়া সার্ভিস প্রচুর পরিমাণে তরল পানি পান, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকতে ও বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া এবং বাতাসের অবস্থার কারণে দমকল কর্মকর্তারা ও পূর্বাভাসকারীরা দাবানলের উচ্চতর ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা জারি করতে বাধ্য হন।
সমুদ্র সৈকত, সুইমিংপুল আর আইসক্রিমের দোকানে ভিড়ই বলে দেয়, প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তির জন্য হাসফাঁস করছে মানুষ। প্রাণিকূলের অন্য সদস্যদের জন্যও পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। তাপপ্রবাহ যতো পূর্বে সরছে, ততোই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের মিড-আটলান্টিক ও নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চল। অতিরিক্ত আর্দ্রতায় আরও অসহনীয় রূপ নিয়েছে গরম।
স্থানীয়রা বলেন, অসহ্য গরম পড়েছে। সানস্ক্রিন পছন্দ করি না, তাও এবার দিতে হচ্ছে। রোদে পুড়ে যেতে আরাম লাগে না। দৈনন্দিন জীবনে কিছু ছোট পরিবর্তন আনতে হচ্ছে এমন গরমে। বাইরে কাজ কমিয়ে দিয়েছি, ভেতরে বেশি থাকছি। আগে পার্ক বা লেকের ধারে হাঁটতাম, এখন কমিউনিটি সেন্টারে হাঁটছি। নিজেদের সঙ্গে পোষা প্রাণীরাও যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে, সে চেষ্টা করছি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে গেলো বছর। ১৯৩৬ সালের পর, অর্থাৎ ৮৭ বছরে প্রথমবার অস্বাভাবিক গরম দু'টি দিন দেশটি পার করেছে ২০২৩ সালেই। একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির শঙ্কায় সাড়ে সাত কোটির বেশি মানুষকে সতর্ক করেছে প্রশাসন। বলা হচ্ছে, পূর্বাঞ্চলের বড় অংশের ওপর অবস্থান করছে একটি বিশাল ও তীব্র 'হিট ডোম'। এর প্রভাবে আগামী সাতদিন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত উষ্ণতম সপ্তাহ এবং গ্রীষ্মের শুরু। এ সময়ে আবহাওয়া সংক্রান্ত শতাধিক রেকর্ড ভাঙতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে অরিগন অঙ্গরাজ্যে তাপমাত্রা আগের রেকর্ড ভাঙতে পারে। অঙ্গরাজ্যটির ইউজিন, পোর্টল্যান্ড ও সালেমসহ বিভিন্ন শহরে হতে পারে নতুন রেকর্ড। চলমান দাবদাহে দেশটির আরও কয়েক ডজন জায়গায় তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হতে পারে। এর ফলে অ্যারিজোনার বুলহেড সিটি থেকে ভার্জিনিয়ার নরফোক পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষকে গরম থেকে বাঁচতে কুলিং সেন্টারে আশ্রয় নিতে হতে পারে।
মধ্যপশ্চিম আর উত্তরপূর্বে ১৮টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের বড় অংশই আবহাওয়া বিভাগের নজরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রা সবচেয়ে বিপদজনক ছিল অ্যারিজোনার ফিনিক্সে, যেখানে গেলো বছরই গরমজনিত অসুস্থতায় প্রাণ যায় রেকর্ড ৬৪৫ জনের।