শেখ হাসিনার চীন সফর
আশানুরুপ প্রাপ্তি নেই
ঢাকা অফিস
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:৪৮ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২৪ শনিবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুল আলোচিত চীন সফরে প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি আশানুরুপ হয়নি। সফরের আগে চীনের তরফে বলা হচ্ছিল, সফরটি হবে গেমচেঞ্জার। বাংলাদেশের মিডিয়ায় লেখালেখি হচ্ছিল যে, কমপক্ষে পাঁচ বিলিয়ন আরএমবি (চীনা মুদ্রা) সহায়তা মিলবে। কিন্তু সফর শেষে এটিকে গতানুগতিক সফর ছাড়া তেমন কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বরাবরের মতোই সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন। এই আশ^াসে কোনও ফল পাওয়া যাবে কিনা তা স্পষ্ট হচ্ছে না।
তিস্তা প্রকল্পের বিষয়টি অনিস্পন্ন রয়ে গেছে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহ এবং প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাওয়াকেও বেইজিং ভালভাবে দেখছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশে বিএনপি’র ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাককে ভারতীয় কোনও কোনও বিশ্লেষক মালদ্বীপে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার সঙ্গে তুলনা করেন। মালদ্বীপে চীনাপন্থী মুইজ্জার সরকার ক্ষমতায় যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বিস্মিত। চীন সফরের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। বিষয়টি শেখ হাসিনার চীন সফরে প্রচ্ছন্ন কোনও ছায়া ফেলেছিলো কিনা তা নিয়ে কৌতুহল আছে। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত দক্ষিণ বাংলা উন্নয়ন নিয়েও চীনের সাড়া জানা যায়নি। চীন মূলত সুনির্দিষ্ট প্রকল্প প্রস্তাব চেয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। পায়রা বন্দর থেকে শুরু করে কক্সবাজার পর্যন্ত গোটা উপকূল জুড়ে উন্নয়নের নানা প্রকল্প গ্রহণের জন্যে শেখ হাসিনা প্রস্তাব করেছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সুবিধার প্যাকেজ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দৃঢ় সহায়তা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। গত বুধবার বিকেলে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি বাংলাদেশকে গ্রান্ট বা সহায়তা, সুদমুক্ত ঋণ, কনসেশনাল বা ছাড়যুক্ত ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ-এই চার ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার একটি প্যাকেজ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
সেইসাথে চীনের প্রেসিডেন্ট নিজে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেন। তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে এবং প্রয়োজনে আরাকান সেনাদলের সাথেও কথা বলবেন বলে জানান।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বেইজিংয়ের সেন্ট রেজিস হোটেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি ও প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই চীন সফর শতভাগ সফল হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট বৈঠকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অভূতপূর্ব বর্ণনা করেন এবং চীনা সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। শি জিনপিং বলেন, ২০২৫ সালে চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তিতে সম্পর্ককে দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করে এ উদযাপনকে অর্থবহ করতে তারা প্রস্তুত।
চীনের প্রেসিডেন্ট ‘গুড গভর্নেন্স নিডস গুড পার্টি’ বা ‘সুশাসনের জন্য ভালো দল’ মন্তব্য করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যোগাযোগ বৃদ্ধি ও বন্ধনের ওপর জোর দেন, উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি শি জিনপিং বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ, কারিগরী, কৃষি ও উৎপাদন খাতে সহায়তা এবং ছাত্রবৃত্তি বৃদ্ধির আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনের জন্য একক বরাদ্দ ৮০০ একর জমিসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি ভিলেজগুলোতে বিনিয়োগবৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ থেকে পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিক, আম ও অন্যান্য ফলসহ পণ্য আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আহবান জানালে চীনের প্রেসিডেন্ট ইতিবাচক সাড়া দেন।
এদিকে, চীন সফর শেষ করে কয়েক ঘণ্টা আগেই বাংলাদেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১১ তারিখ সকালের পরিবর্তে ১০ জুলাই রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং ত্যাগ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ বেশি অসুস্থ হওয়ার কারণে চীন সফরের সকল অনুষ্ঠান অপরিবর্তিত রেখে শুধু ১১ তারিখ সকালের পরিবর্তে ১০ জুলাই রাতে বাংলাদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।