শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১   ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

এক প্রতারক নারীর কাহিনী!

আজকাল রিপোর্ট

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:১০ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২৪ শনিবার


‘ট্রাভেল এক্সপার্ট’ পরিচয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মানুষের হাজার হাজার ডলার

তিনি নিজেকে একজন ‘ট্রাভেল এক্সপার্ট’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি প্রলোভিত করেন বিমানের টিকিট কিনতে আগ্রহী ব্যক্তিদের। তারপর বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে তাদের জন্য টিকিট কিনে দেন। কিন্তু কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। এর পরের গল্পটি হচ্ছে তার ক্লায়েন্টদের জন্য এই টিকিট কেনার নামে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন ভয়ঙ্কর ধরনের প্রতারণা।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মহিলার হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন ডজনেরও বেশি ব্যবসায়ী। তিনি এখন ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের আতংকের কারণ হয়ে উঠেছেন। ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা তাদের কর্মচারিদের এই মহিলার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহিলাটি নিজেকে আমেরিকান এয়ারলাইন্স বা ডেল্টা এয়ারলাইন্সের কর্মচারি দাবী করে থাকেন। কিছুদিন নাকি মেসি স্টোরেও কাজ করেছেন। তার সম্পর্কে অভিযোগ, প্রতারণাই তার প্রধান অবলম্বন। প্রতারণার দায়ে তিনি একাধিকবার হাজত বাসও করেছেন বলে জানা যায়। শুধু ট্রাভেল ব্যবসা নয়, প্রতারণার ফাঁদ তিনি পেতে রেখেছেন অন্যান্য ব্যবসাতেও। জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকার অনেক ব্যবসায়ীই তার প্রতারণার শিকার। গ্রোসারী ব্যবসা থেকে রেস্টুরেন্টে ব্যবসায়ীদেরও ঠকিয়েছেন তিনি। সাধারণ গ্রহবধূরাও তার হাত থেকে রেহাই পাননি। গত ১০ বছর ধরেই তিনি কমিউনিটির মানুষকে ঠকিয়ে ডলার হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
নিউইয়র্কের অধিকাংশ ট্রাভেল ব্যবসায়ীই তার ব্যাপারে সতর্ক। তার কাছে কেউ টিকেট বিক্রি করা তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি থেমে নেই। নতুন কেউ ট্রাভেল ব্যবসা শুরু করলেই তাকে টার্গেট করেন। দু’একটি টিকেট কিনে ভালো পেমেন্ট করে আস্থা গড়ে তোলেন। এরপর বড় অংকের টিকেট কিনে লাপাত্তা হয়ে যান। তার দেয়া চেক বাউন্স হয়ে যায়। টেলিফোন ধরা বন্ধ করে দেন। তার হাতে প্রতারিত উল্লেখ্যযোগ্য ট্রাভেল এজেন্টগুলো হচ্ছে বাংলা ট্রাভেলস, কর্তফুলি, এস্টোরিয়া ট্রাভেলস, জমজম ও মা ট্রাভেলস। বাংলা ট্রাভেলসের কাছে তার দেয়া ৬/৭টি বাউন্স হওয়া চেক এখনও রয়েছে। মহিলাটি তাদের এজেন্সীতে এখন নিষিদ্ধ। জমজম ট্রাভেলস চেক বাউন্স হবার সাথে সাথে ইস্যুকৃত টিকেটগুলো বাতিল করেছে। কিন্তু তাদের কয়েক’শ ডলার পেমেন্ট করতে হয়েছে ক্যানসেলেশন ফি বাবদ। যাদের জরুরিভাবে কোথাও যেতে হবে এমন ক্লায়েন্টদের জন্যই মহিলাটি বেশির ভাগ টিকেট কিনে থাকেন। জরুরি ভিত্তিতে টিকেট কিনে তিনি  চেকে পেমেন্ট করেন। ক্লায়েন্ট দুই-একদিনের মধ্যে যাত্রী ফ্লাই করে চলে যায়। কিন্তু ট্রাভেল এজেন্টকে দেয়া চেক ক্লিয়ারেন্স হতে যে দুই-একদিন সময় লাগে সেই সময়ের পর দেখা যায় চেকগুলো ডিজঅনার হয়ে ফেরত এসেছে। এরপর আর ওই মহিলাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তার সুন্দর ব্যবহার ও আন্তরিকতায় তাকে সন্দেহ করার কোন অবকাশ থাকে না।  নতুন যে কেউ তার ফাঁদে পা দিয়ে সহজেই প্রতারিত হতে পারেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ট্রাভেলস এজেন্টদের সংগঠন এই মহিলার সাথে ব্যবসা করতে সদস্যদের মৌখিকভাবে সর্তক করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায় বাড়ি এই মহিলার। স্বামীসহ বসবাস করেন জ্যামাইকায়। প্রতারণাকেই তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।