রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসরাইলে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাজ্য

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:০১ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার

যুক্তরাজ্য সম্ভবত ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে এমনটাই দাবি করেছে মিডল ইস্ট আই। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন ব্রিটিশ সরকার ইসরাইলি জ্যেষ্ঠ নেতাদের ওপর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে যে আপত্তি তুলেছিল, সেটাও প্রত্যাহার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে লেবার পার্টির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, আগামী দিনে ব্রিটিশ সরকার অস্ত্র বিক্রির ওপর কিছু বিধিনিষেধ দিতে পারে। তবে বিক্রি সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করবে না।

সূত্রগুলো মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের আসন্ন নিষেধাজ্ঞাগুলো আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রির ওপর হতে পারে।

এ বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি গত সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি তার অফিসে প্রথম কার্যদিবসে সবাইকে ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনার অনুরোধ করেছিলেন।

ডেভিড ল্যামি সংসদ সদস্যদের বলেছিলেন, ইসরাইলে হুথি, হিজবুল্লাহ এবং হামাসের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের চুপ করে বসে থাকা ঠিক হবে না।

তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেসব আক্রমণাত্মক অস্ত্র ইসরাইল গাজায় ব্যবহার করতে পারে, তার দেশ সেগুলোর ওপর নজর রাখছে।

যুক্তরাজ্য ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রিত সরঞ্জাম বিক্রির জন্য শতাধিক রপ্তানি লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছে।

দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য বিভাগ চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্টে একটি হলফনামা দাখিল করে; যা অস্ত্র রপ্তানি তত্ত্বাবধানকারী সরকারি ইউনিট ২৮টি লাইসেন্স এবং ২৮টি মুলতবি থাকা আবেদন চিহ্নিত করেছে। আর এর মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ করে ইসরাইলি বাহিনী গাজায় একটানা সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়গুলোই ইসরাইলের কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রির ওপর যে কোনো নতুন বিধিনিষেধ আরোপের কারণ হতে পারে।

এ বিষয়ে আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের পরিচালক ক্রিস ডয়েল মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকার যে সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো নিতে পারে, সেগুলোকে বেশ ভালোভাবেই স্বাগত জানানো হবে। যদি তারা সেই অস্ত্র বিক্রির জন্য অর্থপূর্ণ বিধিনিষেধ জারি করে এবং তা যদি যেকোনো উপায়ে ইসরাইলের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

এর আগে ওয়াশিংটনও ইসরাইলে আক্রমণাত্মক অস্ত্র হস্তান্তর স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই বলে হুমকি দেন যে, ইসরাইল যদি গাজার রাফাহতে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালায়, তাহলে ইসরাইলে আক্রমণাত্মক অস্ত্র হস্তান্তর স্থগিত করা হবে। যদিও তার এ পদক্ষেপ আর সামনে আগায়নি।

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস (আইসিজে) গত সপ্তাহে একটি পরামর্শমূলক মতামত জারি করে বলেছে, ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরাইলি দখল বেআইনি এবং এটা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা উচিত।

এতে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সৃষ্টি করা অবৈধ পরিস্থিতি রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তাকারী বাণিজ্য বা বিনিয়োগ সম্পর্ক প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া যুক্তরাজ্যসহ আইসিজের সদস্য দেশগুলোর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

এর ফলে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি নতুন করে আহ্বান জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের জন্য কাজ করা আইসিজের আইনি কর্মকর্তা জাকি সররাফ বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকার ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি সীমিত করতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে এবং আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও দেশটি তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করতে পারে। আর এ পদক্ষেপগুলো বিলম্ব না করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

তার মতে, ‘এর চেয়ে কম কিছু হলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ব্যাপক যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাজ্যও জড়িত হবে। ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনকে সমুন্নত রাখতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ শুধু জীবন বাঁচানোর জন্যই প্রয়োজন নয়— এটা অপরিহার্যও বটে’।

এদিকে অস্ত্র বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার কেটি ফ্যালন মিডলইস্ট আইকে বলেছেন, ‘গাজায় বোমা নিক্ষেপকারী এফ-৩৫ এবং এফ-১৬ জেটগুলো যুক্তরাজ্যের উল্লেখযোগ্য অবদান। আর অস্ত্র রপ্তানি স্থগিতের মধ্যে অবশ্যই জেটগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এছাড়া রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য দেশের মাধ্যমে ওপেন বা ইনকর্পোরেশন লাইসেন্সে জেট সরবরাহ করা, যেমনটি বর্তমানে হয়।’

এদিকে লেবার পার্টির নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই বলেছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা যেতে পারে কিনা, তা নিয়ে আইসিসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে আগামী দিনে যুক্তরাজ্য তার আপত্তি তুলে নেবে বলেই আশা করা হচ্ছে। 

এর আগে যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল সরকার গত ১০ জুন এই যুক্তি দিয়ে লিখিত তথ্য দেওয়ার জন্য একটি অনুরোধ দাখিল করে যে, যেহেতু অসলো চুক্তির অধীনে ইসরাইলি নাগরিকদের ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার নেই, তাই তারা আইসিসির এখতিয়ার হস্তান্তর করতে পারে না। পরে ২৭ জুন যুক্তরাজ্য এ মামলায় আইনি যুক্তি পেশ করতে পারবে বলে রায় দেন আইসিসির বিচারকরা।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের কয়েকদিন পর লেবার কর্মকর্তাদের জানানো হয়, নতুন সরকার বিশ্বাস করে যে, গাজার ওপর আইসিসির এখতিয়ার রয়েছে। তবে এর পরেই তাদেরকে আবার জানানো হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র লেবার পার্টিকে আইনি চ্যালেঞ্জ বাদ না দেওয়ার জন্য লবিং করছে।

এরপর গত ১৫ জুলাই ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য তার আপত্তি বহাল রাখবে বলে ইসরাইলকে আশ্বাস দিয়েছে। এ বিষয়ে ক্রিস ডয়েল মিডল ইস্ট আইকে বলেন, লেবার সরকারের উচিত আপত্তি তুলে নিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করা।

আরব-ব্রিটিশ এই কূটনীতিক বলেন, গাজায় যা ঘটছে তাতে ব্রিটেন কোনোভাবেই জড়িত থাকবে না- এটা প্রমাণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটি তারা এখনও বলছে। তিনি বলেন, লেবার সরকারের কাছে আসলে এই জটিলতা শেষ করার একটি সুযোগ আছে এবং অন্যান্য দেশগুলোকে তা অনুসরণ করার জন্যও এটি একটি সংকেত। 

মূলত ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার জন্য যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকার (লেবার পার্টি) তাদের নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই। 

লেবার পার্টির সিনিয়র রাজনীতিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের কারণে এবং প্রথম দিকে ইসরাইলকে সমর্থনের কারণে দলটি সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে বিশেষ করে ব্রিটিশ মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং আসন হারিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে গাজাপন্থি পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় এ পর্যন্ত ৩৯ হাজার ১৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯০ হাজার ৪০৩ জন আহত হয়েছেন। ইসরাইলি হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আরও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ এবং মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।