মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ১ ১৪৩১   ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৬০ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স হারালো বাংলাদেশ

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:১৪ এএম, ২৭ জুলাই ২০২৪ শনিবার

বন্ধ হয়ে গেছে নিউইয়র্ক থেকে ডলার পাঠানো


বিক্ষোভ সংক্ষুব্ধ বাংলাদেশ গত সাত দিনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স হারিয়েছে। এ হিসাব শুধু নিউইয়র্কের। এই সময়ে নিউইয়র্ক থেকে ৫০০ ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো সম্ভব হয়নি। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমান প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
নিউইয়র্কের রেমিট্যান্স ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন এবং পুলিশী হত্যাযজ্ঞ শুরু হবার পর থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড বন্ধ হবার পর থেকে কোন রেমিট্যান্স আর পাঠানো সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে ২ বিলিয়ন ডলার কখনও কখনও এর চেয়েও বড় অংকের রেমিট্যান্স নিউইয়র্ক থেকে পাঠানো হয়েছে। ডলারের এই প্রবাহ এখন বন্ধ। ফলে গত ৭ দিনে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থাৎ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিউইয়র্ক থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই পরিমাণ অর্থ স্বাভাবিক ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠাবার কথা থাকলেও কোন রেমিট্যান্সই তারা পাঠাতে পারেননি। এত বিপুল পরিমাণ লোকসান অতীতে আর কোন সময়ে ঘটেনি বলেই তাদের অভিমত। গত কয়েকদিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে প্রবাসীরা তখন থেকেই আর ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
কিছু প্রবাসী দেশে ডলার পাঠাবার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অবৈধ হুন্ডির পথ বেছে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ব্যাংকিং চ্যানেল স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। কবে স্বাভাবিক উপায়ে ডলার পাঠানো যাবে তা নিয়ে শঙ্কাও বেড়েছে। প্রবাসীরা কষ্ট করে হলেও তাদের স্বজনদের চলতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
নিউইয়র্কের রেমিট্যান্স ব্যবসায়ীদের একমাত্র সংগঠন ‘এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান মানি ট্রান্সফার্স এন্ড এজেন্ট (এবিএএমটিএ)’-এর প্রেসিডেন্ট মাসুদ রানা তপন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হবার পর থেকেই প্রবাসীরা দেশে ডলার পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড বন্ধ হবার পর  রেমিট্যান্স আর পাঠানো যায়নি। এখন খুব সামান্য রেমিট্যান্স চালু হয়েছে। গত ৭ দিনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স হারিয়েছে বাংলাদেশ। মানুষ অনেকটা ইচ্ছা করেই আর রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ বোধ করছেন না। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।
এবিএএমটিএ-এর সাধারণ সম্পাদক এসএম মাঈনুদ্দিন পিন্টু বলেন, পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রবাসীরা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাঠাতে চান এমন কথা শোনা যাচ্ছে। তবে হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠাতে যারা চান তারা অবৈধ এবং দুর্নীতিবাজদেরই সহযোগিতা করতে যাচ্ছেন।  পুরো পরিবেশ স্বাভাবিক হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে আমরা মনে করছি। তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ডলারের রেট ছিল ১১৮ টাকা। প্রবাসীরা অবৈধ হুন্ডির পথকে বেছে নিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে নজর দিতে হবে। তা না হলে এর  নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়বে বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপরে।