মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ১ ১৪৩১   ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোটা সংস্কার আন্দোলন: মামলার ফাঁদে হাজারো শিক্ষার্থী

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:১৬ এএম, ২৭ জুলাই ২০২৪ শনিবার



কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হাজারো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সুরঙ্গের ভেতর থেকে তুলে এনে অরাজাকতাকারিদের বিচার করা হবে। যারা সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে  মামলা হবে।
সুনির্দিষ্টভাবে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছে পুলিশ। আরেকটি মামলায় আসামিদের তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। অজ্ঞাতনামার নামে হাজারের ওপর মামলা হয়েছে ঢাকা জাহাঙ্গীর নগর, শাহ জালাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বগুড়া আজিজুল হ বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেও বিরুদ্ধে।   
পুলিশকে মারধর ও জখম করা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর রূপনগর থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীসহ এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলার বাদী পুলিশ। অন্য মামলার বাদী নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ‘সক্রিয় সদস্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতনামা ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে ঢাকার আশুলিয়া থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলার বাদী পুলিশ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় (১২-২১ জুলাইয়ের মধ্যে) ১১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মামলার বাদী পুলিশ। ২টি মামলার বাদী ছাত্রলীগের দুই নেতা। এসব মামলায় অজ্ঞাত আন্দোলনকারীদের আসামি করা হয়েছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থী আসামি
শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, কোটা সংস্কারের দাবিতে ১১ জুলাই বিকেলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। ইটের আঘাতে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা রক্তাক্ত ও জখম হন। এ ছাড়া আরও অনেক পুলিশ সদস্য ইটের আঘাতে আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
২১ জুলাই করা এ মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদ আহম্মেদ, আহমেদুল কবির, মো. রায়হান, সৌরভ, শাহরিয়ার, মোহাইমিনুল, আহসান হাবীব, আনাস, সাগর, ইমরান, আহসান হাবীব (১), ওয়াসিউল ইসলাম, মুজাহিদুল ইসলাম, আলতাফ, সেলিম রেজা, নূরু ইসলাম, আসিফ, রিফাত (অ্যাগ্রো ফরেস্টিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ), শাকিব ও মৃদুল।
এ মামলার বাদী শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকতারুজ্জামান ২৩ জুলাই মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় কোনো আসামি গ্রেপ্তার হননি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থীর নামে মামলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থীসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানায় ১৭ জুলাই মামলাটি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম মিয়া।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: অজ্ঞাতনামা ছাত্রছাত্রীদের নামে মামলা
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচিকে ঘিরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অজ্ঞাতনামা’ ছাত্রছাত্রীদের নামে ঢাকার আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। ১৭ জুলাই মামলাটি করেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ আহম্মেদ।
মামলার এজাহারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের নবীন রহমান, একই বিভাগের ৪০তম ব্যাচের মো. মেহেদী ও হিরন এবং অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম ব্যাচের সাগরের নাম উল্লেখ রয়েছে। চারজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাঁরা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে
বিইউবিটির ৫০০ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর নামে দুই মামলা
রাজধানীর রূপনগর থানায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) অজ্ঞাত ৫০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে ১৭ জুলাই করা পৃথক দুই মামলার একটির বাদী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন মিয়া।
শিক্ষার্থীদের দমিয়ে দিতে মামলা
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, মামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শিক্ষার্থীরা কোনো সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি দমিয়ে দেওয়ার জন্য নাম উল্লেখ করে মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।