শিশু-কিশোরদের মৃত্যু এবং নতুন প্রজন্মের তরুণদের ভাষা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৫০ এএম, ৩ আগস্ট ২০২৪ শনিবার
লুৎফর রহমান রিটন
নতুন প্রজন্মের তরুণদের ভাষা আমরা বুঝতে পারছি না। পারছি না বলেই ছাত্রদের 'কোটা সংস্কার' আন্দোলনটা শেষমেশ আর শুধু ছাত্রদের হাতেই থাকেনি। আন্দোলনটাও আর 'কোটা সংস্কার' আন্দোলনও থাকেনি। আলোচনার মাধ্যমে সহজেই সংশোধনযোগ্য একটা ইস্যু বিশাল আকার ধারণ করেছে।
অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। ইতোমধ্যে ঝরে গেছে বিপুল সংখ্যক প্রাণ, সরকারি হিশেবেই যা দেড়শোরও বেশি। তারমধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু-কিশোরও! এই মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।
অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের।
গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলোয় ভাঙচূর করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে। এইসব ভবন ও স্থাপনা আমরা নির্মাণ করতে পারবো। কিন্তু হতাহত অমূল্যপ্রাণগুলো?
নতুন প্রজন্মের তরুণদের সঙ্গে ভয়াবহ একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে সরকারের। এই দূরত্ব কমিয়ে আনতেই হবে। এই দূরত্ব কমাতে শক্তি প্রয়োগই একমাত্র পথ নয়। ওদের ভাষা বুঝতে হবে আমাদের। বুঝতে হবে সরকার পক্ষের নেতাদের। পরিবর্তন করতে হবে আমাদের বয়স্কদের ভাষাও।
কোটা সংস্কার নামের একটা ইস্যুকে মোকাবেলা করতে গিয়ে নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছেন সেই ভাষা নতুন প্রজন্মের তরুণদের পছন্দ নয়।
আমাদের চিন্তাভাবনায় নবায়ন দরকার। সময়ের সঙ্গে ঐতিহ্যের নবায়নই আধুনিকতা।
আধুনিক পৃথিবীর আধুনিক যুব সমাজের সঙ্গে আমাদের নতুন যুব সমাজও এগিয়ে যাচ্ছে সেটা মনে রাখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সেটাও একটা বাস্তবতা।
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে দমন করতে ছাত্রলীগকে কেনো তাদের প্রতিপক্ষ বানাতে হলো? আন্দোলনকারীদের উচিৎ শিক্ষা দিতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট--এরকম অর্বাচীন ঘোষণা কতো বড় সর্বনাশ ডেকে এনেছে সেটা ভাবার সময় কি আসেনি এখনো?
ছাত্রলীগকে মারমুখী নয়, হওয়ার কথা ছিলো শিক্ষার্থীমুখী। হওয়ার কথা ছিলো নমনীয়, শিক্ষার্থীবান্ধব। সেটা হয়নি। হয়েছে ঠিক তার বিপরীত। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রভুর মতো আচরণ করে করে তারা তাদের ঐতিহাসিক গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
ছাত্রলীগের কপালে 'পেটোয়া বাহিনি'র তকমা যিনি লেপন করেছেন সেই অদূরদর্শী নেতার শাস্তি হওয়া উচিৎ।
চোখ রাঙানি, হুমকি, হামলা, মারপিট, গুলি, কিংবা গণগ্রেফতার করে নতুন প্রজন্মের তরুণদের দমন করার কৌশলটি যে সঠিক নয় সেটা আমাদের নেতারা কবে বুঝবেন?
আমি ঘুমাতে পারছি না। আমরা কেউই ঘুমাতে পারছি না। স্বাভাবিক থাকতে পারছি না। নিহত ছোট্ট ছোট্ট শিশু-কিশোরদের নিষ্পাপ মুখগুলো বারবার ভেসে উঠছে চোখের সামনে। বাড়ির ছাদে থাকা, ঘরের ভেতরে থাকা এইটুকুন ছোট্ট বাচ্চারাও কেনো গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাবে?
টিভির সংবাদে ভিডিও ক্লিপে ভয়াবহ বিভৎসতা দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমি। বিষণ্ন বিপন্ন আমি। আর নিতে পারছি না।
এইসব হত্যাকা-ের সুষ্ঠু এবং সঠিক বিচার হতে হবে।
অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। আর নয়।