শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশিদের ট্রাভেল ব্যবসায় ধস

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:১১ এএম, ৩ আগস্ট ২০২৪ শনিবার

টিকিট বিক্রি কমেছে ৮০ শতাংশ, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি

 
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে দেশে সহিংস ঘটনাবলীর মাশুল দিতে হচ্ছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের। আতঙ্কে অনেকে দেশে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন, পূর্ব নির্ধারিত টিকিট বাতিল করছেন। আবার যারা গেছেন তাদের কেউ কেউ নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরে আসছেন, এর জন্য চড়া দ- দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এতে সমস্যায় পড়েছেন ট্রাভেল এজেন্টরা। এ অবস্থায় সামারের সময়ে যেখানে জমজমাট ব্যবসা হওয়ার কথা সেখানে উল্টো ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, শুধু বাংলাদেশে ভ্রমণের প্রবণতাই কমেছে এমনটি নয়। বরং যারা ওমরা করতে যেতেন বা অন্য কোন স্থানে ঘুরতে যেতেন তেমন গ্রাহকও এখন পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে পুলিশী হত্যাযজ্ঞে  বিপুল সংখ্যক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসীরা বিষাদগ্রস্ত। এ অবস্থায় অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত সামার ট্রাভেল বাতিল করেছেন।
আমেরকিান ট্রাভেল এজেন্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর সভাপতি ও কর্ণফুলী ট্রাভেলসের সিইও সেলিম হারুন আজকালকে বলেন, গত ১৫ বছরে এমন অবস্থা কখনও হয়নি। এমনকি করোনার শাট ডাউনের পরও এমন ছিল না। সে সবের তুলনায় অনেক খারাপ অব¯া’ এখন। কোন লোক বাংলাদেশে যাচ্ছেন না পরিস্থিতির কারণে। অনেকে আসতে ভয় পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের উপর চাপ পড়ছে। যে পরিমাণ লোক ট্রাভেল করার কথা তা হ্রাস পেয়ে এখন ২০ শতাংশে নেমেছে। ফলে টিকিট বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। যাদের একান্তই দরকার নিরুপায় হয়ে শুধু তারাই ট্রাভেল করছেন।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে কিছু এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে বা ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। ইত্তেহাদের সার্ভিস এখন বন্ধ আছে। এমিরেটস চিন্তা করছে ফ্লাইট অপারেট করবে কিনা বা কমিয়ে দেবে কিনা। এমন অবস্থা চললে এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ রুটে ব্যবসা বন্ধ করেও দিতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এদিকে যারা বাংলাদেশে গেছেন তারাও আতঙ্কে দ্রুত বাংলাদেশ ছাড়তে চাইছেন। আবার অনেকের সময় মতো বিমানবন্দরে আসতেও বেগ পেতে হচ্ছে। এর জন্য কয়েকগুণ বেশি দামে তাদের নতুন টিকিট কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ৯০০ থেকে ১০০০ ডলারে রিটার্ণ টিকিট পাওয়া যায় সেখানে নতুন ওয়ান ওয়ে টিকিটের দামই পড়ছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার ডলার। কখনো বা আরও বেশি।
তেমন একজন সিলেটের এম এ ওয়াহিদ। গত ২২ জুলাই তার কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে নিউইয়র্কের ফিরতি টিকিট ছিল। কিন্তু আন্দোলনের কারণে ঠিক সময়ে বিমান বন্দরে পৌছাতে পারেন নি। এখন নতুন করে পেনাল্টিসহ তাকে বাড়তি ১৩০০ ডলার গুণতে হয়েছে। এমন আর একজন জনাব ওয়াহিদ। তিনি ডিজিটাল এস্টোরিয়া ট্রাভেলসের যাত্রী। প্রতিষ্ঠানটির সিইও নজরুল ইসলাম বলেন, এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাগোগ করছি যাতে তার খরচ কিছু কমানো যায়।  কিন্তু এয়ারলাইন্স বলছে তাদের সিট খালি এসেছে। তাই কিছুই করার নেই। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সামারে সাধারণত মানুষ পরিবার নিয়ে দেশে যায়। কিন্তু এখন তারা যেতে ভয় পাচ্ছেন। সব মিলয়ে ব্যবসার অবস্থা অনেক খারাপ। ব্যবসা বলতে গেলে জিরো। অনেকে টিকিট বাতিল করছেন, তবে কিছু গ্রাহক বাংলাদেশ ভ্রমণ ডাইভার্ট করে ওমরাহ করতে যাচ্ছেন। তাতে একটু রক্ষা’।
ব্যবসা খারাপের কথা জানান জমজম ট্রাভেলসের সিইও তৌহিদ মাহবুব মুন্না। তিনি বলেন,  ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। তার উপর যাত্রীরা ফ্লাইট মিস করছে। সেগুলো সামাধান করে দিতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে ঢাকায় টার্কিশ এয়ারে আমার এক যাত্রী সময় মতো এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে পারেননি। তাকে নতুন টিকিট করে আসতে হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য রুটের যাত্রীও কম। আমাদের ব্যবসা তো বাংলাদেশ কেন্দ্রিক। দেশের  ঘটনায় সবারই বলতে গেলে মন খারাপ। তাই অনেকে ভ্রমণ বাতিল করছেন।