৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স কম গেছে জুলাই মাসে
হাসান মাহমুদ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:১৪ এএম, ৩ আগস্ট ২০২৪ শনিবার
দেশে ডলার সংকট, হ্রাস পেয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
ডলারের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে বাংলাদেশে এবং নিউইয়র্কে। সরকারী সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের জন্য ডলারের মূল্য বৃদ্ধি করেছে রেমিট্যান্সে উৎসাহ যোগাতে। রেমিট্যান্স ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে ডলারের সংকট থাকার কারণে দাম আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড বন্ধ করার পর থেকে তীব্র ডলার সংকটের সম্মুখীন হয়েছে ব্যাংকগুলো। ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা দেশে কোন ডলার পাঠাতে পারেননি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভেও। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই মাসের রিজার্ভের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে রিজার্ভ কমেছে ১৩০ কোটি ডলার। এত বিশাল অংকের ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে জরুরিভাবে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ি জুলাই মাসে রেমিট্যান্স পাওয়া গেছে ১৯০ কোটি ডলার। জুন মাসে এর পরিমাণ ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। এতে আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ৬৪ কোটি ডলার। ঘাটতি পড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। ডলার সংকটকালে রপ্তানি আয় কমেছে ৫.০৯ শতাংশ। গত ৩ অর্থ বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছে ৩৩.৮৯ বিলিয়ন ডলার। এর পর থেকে ধারবাহিকভাবে রিজার্ভ কমেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে নিউইয়র্কে ডলারের দাম ছিল ১১৮ টাকা। সেই সঙ্গে ২.৫% ইনটেনসিভ। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংক মালিকরা তা বাড়িয়ে দিয়ে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা করেছে। বাংলাদেশে বেসরকারী ব্যাংক মালিকরা ডলারের দাম বাড়ালেও সোনালী ব্যাংক কোন মূল্য বৃদ্ধি করেনি। নিউইয়র্কে সোনালী এক্সচেঞ্জ গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১৮ টাকা দরে ডলারের মূল্য ঠিক রেখেছে। ব্যাংক মালিকরা ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়ে ডলার সংগ্রহে উৎসাহ দিচ্ছে বলে ব্যাবসায়িরা মনে করছেন। বাংলাদেশে খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৪ বা ১২৫ টাকা দরে। তাও কাঙ্খিত পরিমাণ ডলার মিলছে না বলে জানা গেছে। ডলার সংকটের কারণ হিসেবে রেমিট্যান্স ব্যবসায়িরা জানান, প্রবাসীরা এখনও আগের মতো স্বাভাবিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন না। রেমিট্যান্স ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম জানান, আবার আগের পর্যায়ে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছাও কি রকম হয় তা প্রবাসীরা লক্ষ্য রাখছেন।
ডলার সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে রিজার্ভে হাত দিয়েছে। জুলাই মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩০ কোটি ডলার থেকে কমে ২০.৪৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। জুন মাসে যা ছিল ২১.৭৯ বিলিয়স ডলার। আর নিট রিজার্ভ কমে ১৫.৪৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
আইএমএফ ছাড়াও অন্য উৎস থেকে জুন মাসে ২.০৫ বিলিয়ন ডলার লোন পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই হিসেবে জুন মাসে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ১৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসের শুরুর দিকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (আকু) ১.৪২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়।
নিউইয়র্কে রেমিট্যান্স ব্যবসায়িদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান মানি ট্রান্সফার্স এন্ড এজেন্ট (এবিএএমটিএ)-এর সাধারণ সম্পাদক মাঈনউদ্দিন পিন্টু বলেন, বাংলাদেশে ডলার প্রবাহের গতি আগের পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে। মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও বিভিন্ন পন্থায় দেশে তাদের পরিবারের কাছে ডলার পাঠাচ্ছেন।