পুলিশ শূন্য সিএমপির ১৬ থানা, অস্ত্র লুট
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৪৫ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২৪ মঙ্গলবার
হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের পর চট্টগ্রামের সব থানা ভবন ও ফাঁড়ি এখন পুলিশ শূন্য। শুধু থানা ভবন নয়, সংলগ্ন পুলিশ সদস্যদের মেস ও আবাসিক বাড়িও কার্যত ফাঁকা হয়ে গেছে। কিছু কিছু থানা ভবনের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাহারা দিতে দেখা গেছে।
সোমবার বেলা ৩টার দিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত নগরের অন্তত ৮টি থানায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা কমবেশি ওই ৮টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে। কিছু থানার অস্ত্রাগার থেকে লুট করে অস্ত্র। এ সময় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা এবং আত্মরক্ষায় হামলাকারীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছোড়ে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আবদুল মান্নান মিয়া মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে জানান, দুর্বৃত্তদের হামলায় অন্তত ৩০০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। কিছু থানা থেকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্র লুট করেছে বলে জানিয়ে সিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অস্ত্র লুট হয়েছে। তবে কয়টি এখনো জানা যায়নি।’
নগরের প্রায় সবকটি থানা পুলিশ শূন্য হয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি জানান, থানায় থানায় ব্যাপক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের পর পুলিশ সদস্যরা ট্রমার মধ্যে আছেন। তবে শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে আশা সিএমপির অন্যতম শীর্ষ এই কর্মকর্তার।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, নগরের পাঁচলাইশ, চকবাজার থানা ভবনে তালা ঝুলছে। কোনো পুলিশ সদস্য চোখে পড়েনি। পাঁচলাইশ থানা ভবনের ঢোকার মূল কলাপসিবল গেইটে ঝুলছে তালা। বাইরের লোহার ফটকটি বন্ধ। তবে খোলা আছে পকেট গেইট। ফটকটির সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আছেন ১০-১২ জন যুবক। পরিচয় জানতে চাইলে তাদের কয়েকজন নিজেদের বিএনপি নেতাকর্মী বলে পরিচয় দেন।
চকবাজার থানা ভবনে গিয়ে দেখা গেছে একই দৃশ্য। থানা ভবনের মূল ফটকটি বন্ধ। থানা ভবনের আশপাশে থাকা পুলিশ সদস্যদের আবাসিক ও অনাবাসিক তিনটি ভবনে কেউ নেই। ভবনগুলোর নিচে সারি সারি পড়ে আছে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মোটর বাইক। এ ছাড়া কোতোয়ালি, ডবলমুরিং থানায় গিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ক্ষত দেখা গেছে। এই দুটি থানা ভবনেও কোনো পুলিশ সদস্য দেখা যায়নি।
সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, থানায় হামলার পর থেকে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। প্রায় সবকটি থানার পুলিশ সদস্যরা সদর দপ্তরে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা ব্যারাকেই থাকবেন। সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে বিকাল ৩টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নামে বিজয় উল্লাস করতে থাকেন। এরপর থেকেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এবং নগরের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
জানা গেছে, নগর পুলিশের চান্দগাঁও, পতেঙ্গা, ইপিজেড, কোতোয়ালী, আকবর শাহ, বন্দর, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও পাহাড়তলী থানায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এ সময় হামলাকারীরা থানায় থাকা পুলিশের অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায়। এর আগে বিকেল ৫টার দিকে নগরের দামপাড়ার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনসের প্রধান ফটক ভেঙে হামলাকারীরা ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
গতকাল সোমবার দিনভর পুলিশ সদর দপ্তরসহ রাজধানী ঢাকার ১৩টি ও ঢাকার বাইরে ৭টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা ও শেরপুর জেলা কারাগারে হামলা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় কতজন হতাহত হয়েছেন ও কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।