ড, ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অর্ন্তবর্তী সরকারের যাত্রা শুরু
মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৪৩ এএম, ১০ আগস্ট ২০২৪ শনিবার
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অর্ন্তবর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ১৭ সদস্যের নতুন এই সরকার গঠিত হলো। বঙ্গভবনের দরবার হলে বিশিষ্ট অতিথিদের উপস্থিতিতে সরকারের প্রধান ড. ইউনূসসহ ১৩ জন উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেন। তিনজন ঢাকার বাইওে থাকায় এদিন শপথ নিতে পারেননি। প্যারিসে অলিম্পিকের ইভেন্টে যোগদান শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছালে ড. ইউনুসকে সাড়ম্বরে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তিন বাহিনীর প্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড. ইউনূসকে স্বাগত জানান। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। এক পর্যায়ে তিনি ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরের ছাত্র আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মূলত সরকারি চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে দানা বেঁধে ওঠা ছাত্র আন্দোলন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সরকার পতন ঘটাতে সমর্থ হয়। তিন সপ্তাহের আন্দোলন চলাকালে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রফেসর ইউনূস ছাত্র জনতার এই অভূতপূর্ব বিজয়কে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলে অভিহিত করেছেন। ক্ষুদ্রঋণের প্রবর্তন করে গোটা বিশে^ আলোড়ন সৃষ্টি করে ৮৪ বছর বয়েসী ইউনূস নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। হত দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্যে সচেষ্ট। পাশাপাশি, কল্যাণমূলক ‘সামাজিক ব্যবসা’ উদ্ভাবনের জন্যেও তিনি বর্হিবিশে^ আলোচিত। তবে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীনফোনের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ দিয়ে এই নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে হয়রাণির কবলে ফেলেছে। ইউনূস বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবার আগে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল শপথ নেয়া অন্তর্ববর্তী সরকারের ১৬ সদস্যরা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, অধিকার নামের একটি বেসরকারী মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রধান আদিলুর রহমান খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ অধিকার কর্মি সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক কূটনীতিক সুপ্রদীপ চাকমা, পরিবেশ কর্মী ফরিদা আখতার, বিধান রঞ্জন রায়, আ ফ ম খালিদ হাসান, গ্রামীন ব্যাংকের কর্মকর্তা নুরজাহান বেগম, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতির প্রধান শারমিন মুরশিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আযম।
প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ গ্রহণের পর জাতির উদ্দেশে তাৎক্ষণিক বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আজ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রত্যেকে তার নিজ নিজ কর্তব্য পালনের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে উপভোগ করবেন। তিনি বলেন, আমি জাতির পক্ষ থেকে প্রত্যেককে নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। দেশের সব মানুষকে স্বাধীন, নির্ভয়, নিরুদ্বেগের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য আমাদের ছাত্র শহীদরা প্রাণ দিয়েছেন। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার দেশের প্রত্যেকের আকাক্সক্ষা পূরণের অধিকার নিশ্চিত করবে। অরাজকতার বিষবাষ্প এখন যে ছড়াবে, বিজয়ী ছাত্র-জনতাসহ মুক্ত মানুষেরা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পূর্ণ শক্তি দিয়ে তাকে ব্যর্থ করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী সরকার দূর হয়ে গেছে। কাল সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের, সুবিচারের, মানবাধিকারের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য সবার স্বচ্ছন্দ জীবন ধারণের পরশ দলমত নির্বিশেষে সবাই উপভোগ করবেন। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের সেই লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করেন। সারা বিশ্ব আজ অবাক হয়ে বলছে, শাবাশ বাংলাদেশ। শাবাশ বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা।
তিনি বলেন, আমরা এই অর্জনকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাদের ছাত্র-জনতার জন্য কিছুই অসম্ভব নয়। তরুণরা অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা সেজন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকি, সবার জন্য মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি, আমাদের বিজয় অবশ্যই হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায়।
ড. ইউনূসের সামনে এখন দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ গোটা পুলিশ বাহিনী বিলুপ্ত প্রায়। আন্দোলনের সময়ে দৃর্বৃত্তরা প্রায় ৩০০ থানা পুড়িয়ে দেয়। অনেক পুলিশ হত্যার শিকার হন। এসব কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বেশিরভাগ পুলিশই পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। নতুন একজন আইজিপি নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি পুলিশ সদস্যদের আজকের মধ্যে কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন।