হাসিনার দেশত্যাগে নিউইয়র্কে আনন্দ উল্লাস
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩২ এএম, ১০ আগস্ট ২০২৪ শনিবার
‘ঢাকা মার্চ’-এর দিন গত ৫ আগস্ট কারফিউ ভেঙ্গে বিক্ষোব্ধ শিক্ষার্থীরা গণভবন ঘিরে ফেলতে যাচ্ছে এমন সংবাদ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হয় এবং তাকে ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় দেশত্যাগ করার জন্য। তারপরই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে চলে যান ভারতের আগরতলায়। সেখান থেকে দিল্লীতে যান তিনি।
শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এই খবর দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় সারা বিশ্বে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শেখ হাসিনার দেশত্যাগে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন উল্লাস করে। বাঙালিদের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটস এবং জ্যামাইকা হিলসাইডে আনন্দ উল্লাস, মিষ্টি ও পিঠা বিতরণ করতে দেখা যায় অনেককে। কোলাকুলি আর উল্লাস ধ্বনিতে তারা ছিলেন আবেগ আপ্লুত। অনেককে এ সময় কাঁদতেও দেখা যায়। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, টাইমস স্কয়ার, ব্রুকলিন, ব্রোঙ্কসে, জ্যামাইকা হিলসাইড, কুইন্স ভিলেজ, ওজন পার্কসহ বেশ কয়েকটি স্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের খবরে জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রবাসি বাংলাদেশি নারী পুরুষ, শিক্ষার্থী উল্লাসে মেতে উঠেন। তাদের মাথায় বাঁধা ছিল বাংলাদেশের পতাকা। আর হাতে হাতে ছিল মিষ্টির প্যাকেট। নানা বয়সের, নানা পেশা শ্রেণির মানুষ ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের অংশি হবার জন্য বাসা থেকে, কাজ থেকে বাইরে বের হয়ে আসেন। এদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়।
গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র টাইমস স্কয়ারে ‘ভিক্টোরি সেলিব্রেশন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে শতশত বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে। ‘শিকড় বাংলা’র ব্যানারে এই ভিক্টোরি সেলিব্রেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ব্যাপারে উদ্যোক্তা সৈয়দ আল আমিন রাসেল বলেন, ‘দেশ থেকে আমরা হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে থাকার পরও ছাত্রজনতার দুর্বার আন্দোলনে বাংলাদেশে ক্ষমতার যে ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন হয়েছে তাতে প্রবাসিরা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে বিধায় প্রবাসি বাংলাদেশিরা তাদের অনুভূতি জানাতে এখন আনন্দ উল্লাস করছেন। জাতীয় জীবনে এটি অন্যরকম এক ঘটনা। আমরা দাবি জানাই, যারা নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে’।
গত ৫ আগস্ট ‘ইউনাইটেড ফর বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে টাইমস স্কয়ারে সন্ধ্যা ৭টায় বিজয় উল্লাস উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশিরা বিভিন্ন ব্যানার ও পতাকা নিয়ে এসময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন টাইমস স্কয়ারের চারপাশ। এ সময় অনেক বিদেশিও বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে পাশে এসে দাঁড়ান।
বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে ঘোষণা দিয়ে জ্যাকসন হাইটস ডাইভারসিটিতে ‘সলিডারিটি স্টুডেন্টন্স এসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রবাসি শিক্ষার্থী ছাড়াও শতশত সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে সমর্থন জানান। সময় জাতীয় সঙ্গিত বাজানো হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা স্বৈরাচারের পতন হবার ফলে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন। বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তারা দেশত্যাগি শেখ হাসিনার ভূমিকার নিন্দা জানান। বাংলাদেশের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে স্লোগানে মুখুরিত করে রাখেন জ্যাকসন হাইটস এলাকা।
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাবার পর জ্যামাইকা হিলসাইডে গত ৬ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টায় বিজয়ের ধ্বনিতে মুখরিত করে রাখেন জ্যামাইকাবাসি। এ সময় আল আমিন রাসেল, রাব্বি সৈয়দ, আলমগীর সরকারসহ এলাকার বাসিন্দারা ১৬৮ স্ট্রিটের সামনে এসে আনন্দ উল্লাস করেন। তারা এ সময় বলেন, বাংলাদেশের ওপরে চেপে থাকা স্বৈরশাসকের অবসান হয়েছে। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর জাতি মুক্ত হয়েছে। এসময় তারা শতশত শিক্ষার্থীকে নির্বিচারে হত্যা করার কারণে দোষি ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন।