আত্মার আত্মীয় কোথায় পাব
ধর্ম ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৭:১১ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার
আত্মশুদ্ধি হচ্ছে নিজেকে সংশোধন করে অন্তরকে পাক-পবিত্র করা। কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়।’ সূরা : আল-আ’লা : ১৪)। আয়াতে ইমান ও চরিত্র শুদ্ধি এবং আর্থিক জাকাত প্রদান সবই অন্তর্ভুক্ত।
আমরা যে ধন-সম্পদের জাকাত আদায় করি, সেই ‘জাকাত’ শব্দের অর্থ শুদ্ধ করা। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এগুলো ফরজ; কিন্তু আত্মশুদ্ধি করা যে ফরজ তা কতজন জানে?
আত্মশুদ্ধি না হলে আল্লাহতায়ালার সব আদেশ-নিষেধ মেনে চলা সম্ভব নয়। কেউ হয়তো নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সবই আদায় করে; কিন্তু তার রোজি-রোজগার হালাল নয়, মানুষের হক আদায় করে না।
এগুলো সবই ঘটে আত্মশুদ্ধির অভাবে। আত্মশুদ্ধি অর্জন হলে এগুলো হবে না। আমাদের আচরণ হতে হবে ওই শিশুর মতো যে কেবল হাসতে শিখেছে। দেখবেন ওই শিশুকে খারাপ বললেও হাসবে, ভালো বললেও হাসবে। আত্মশুদ্ধি হলে আমাদের আচরণও এমন হবে।
অর্থাৎ তাকে কেউ খারাপ বললেও তাতে তার রাগ হবে না বরং কেউ তার দোষ ধরে দিলে সে আরও খুশি হবে। কারণ, সে সেই দোষ সংশোধন করে নিতে পারবে।
সাহাবায়ে কেরামরা ইসলাম গ্রহণের আগে কত রকম খারাপ কাজে জড়িত ছিলেন; ইসলাম গ্রহণের পর আত্মশুদ্ধি করে তারাই হয়ে গেছেন সোনার মানুষ অর্থাৎ পূত-পবিত্র। বিশ্বময় যত মারামারি, হত্যা, অশান্তি অরাজকতা এসব কিছুর মূলে রয়েছে একে অপরকে দোষারোপ করার প্রবণতা। আমরা মনে করি, আমি ভালো, সে খারাপ।
আমরা যদি অন্যের দোষ বর্ণনা করতে শুরু করি তাহলে সহজে শেষ করতে চাই না; কিন্তু নিজের দোষের দিকে তাকাতে সময় পাই না। যার ফলে শুরু হয় ঝগড়া, গিবত বা অভিযোগ।
আমরা যদি আত্মশুদ্ধি অর্জন করি তাহলে নিজের দোষ দেখতে পাব। অন্যের দোষ খুঁজে পাব না। তখন দুনিয়াটা শান্তিতে ভরে উঠবে। আত্মশুদ্ধি অর্জন হলে আমাদের অন্তরের ব্যাধিগুলো যেমন- রাগ, হিংসা, অহংকার, দুনিয়ার মোহ দূর হবে। আমাদের দুনিয়ার সফর সফল হবে। আল্লাহতায়ালার প্রিয় বা মু’মিন হওয়ার জন্য কতগুলো শর্ত আছে।
১. ‘নিশ্চয়ই মু’মিনরা সফল হয়ে গেছে। ২. যারা তাদের নামাজে বিনয়ী। ৩. যারা অহেতুক অপ্রয়োজনীয় বিষয় থেকে বিরত থাকে। ৪. যারা জাকাত সম্পাদন করে।’ (সূরা মুমিনুন : ১-৪) আর এ সূরার ৪র্থ আয়াতে বলা হয়েছে- ‘যারা জাকাতের ওপর আমল করে তারা মু’মিন।’ এ আয়াতের দুটি অর্থ।
একটি হল ধন-সম্পদের জাকাত দেয়া আর দ্বিতীয় অর্থ হল নিজের স্বভাব-চরিত্রকে পাক-পবিত্র করা অর্থাৎ আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের বিভিন্নভাবে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনের কথা বলেছেন। যেমন সে সফলতা লাভ করল যে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) করল। আর সে ব্যর্থ হল যে নিজেকে কলুষিত করল। (সূরা : শামস- ৯-১০)।
‘নিশ্চয় সফল হবে সে, যে নিজেকে শুদ্ধ করেছে। (সূরা আলা : ১৪)। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, ভালো করে শুনে নাও। নিঃসন্দেহে দেহের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে, তা ঠিক হলে পুরো দেহ ঠিক হয়ে যায়। আর তা খারাপ হলে পুরো দেহ খারাপ হয়ে যায়। খুব ভালো করে শোন সেই মাংসপিণ্ডটি হল কলব অন্তর বা আত্মা।
আত্মা অসুস্থ বলেই ভালো কাজে মন বসে না। আত্মার ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। তাহলেই ভালো কাজে মন বসে, মনে প্রশান্তি আসে, জীবন স্বার্থক হয়।
আর এ চিকিৎসাকেই আত্মশুদ্ধি বা আত্মার চিকিৎসা বলে। এ চিকিৎসার জন্য আমাদের আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দাদের কাছে যেতে হবে, তাদের সঙ্গী হতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে, হে ইমানদাররা : তাকওয়া অবলম্বন কর।
আর তাকওয়া অবলম্বনের সহজ পন্থা হল সাদিকীন অর্থাৎ মুত্তাকিদের সঙ্গে থাকা। (সূরা আত-তাওবাহ্ : ১১৯)। তাকওয়া অর্থ ভয় করা, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। আর মুত্তাকি অর্থ যে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। এ ছাড়া সূরা ফাতিহাতে এসেছে যেসব মানুষ আপনার নিয়ামত বা অনুগ্রহ লাভ করেছে আমাদের তাদের পথ দেখান।
আল্লাহতায়ালা আমাদের এ আয়াতে বলে দিয়েছেন, যদি সিরাতে মুস্তাকিম (সফল পথ) চাও তবে ওইসব লোককে তালাশ কর তাদের পথ অবলম্বন কর। কেননা, রাসূল (সা.) চিরকাল অবস্থান করবেন না। তাই নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আল্লাহতায়ালার সিদ্দীক, শহীদ ও সালিহীন বা সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন।
কারণ, কেয়ামত পর্যন্ত তাদের অস্তিত্ব দুনিয়াতে থাকবে। মানুষের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কেবল কিতাব পড়ে অর্জিত হয় না, বরং নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাহচর্য সংশ্রবের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়। বাস্তবেও শুধু বই পড়ে কেউ কোনোদিন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, বিচারক ও পাইলট হতে পারে না। সাইকেল চালাতে হলেও অন্যের সাহায্য বা দেখে শিখতে হয়।
আত্মশুদ্ধির জন্য দুটি বিষয় প্রয়োজন। এক আল্লাহর কিতাব যাতে মানব জীবনের সব দিকের পথনির্দেশ রয়েছে। অপরটি হচ্ছে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বা আল্লাহর অলিদের সান্নিধ্য।
তাদের থেকে ফায়দা হাসিল করার মাপকাঠি হচ্ছে- আল্লাহর কিতাবের আলোকে বিচার করতে হবে। এ বিচারে যারা টিকবে না তারা আল্লাহর প্রিয় পাত্র নয়। যারা টিকবেন তাদের কাছে গিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে।