মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভুল চিকিৎসা ধর্ম কী বলে

ধর্ম ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৭:২৩ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার

জবাবদিহিতার চিন্তা মানুষকে সৎ ও নিষ্ঠাবান থাকতে সহায়তা করে। অন্যায়, অপরাধ ও দুর্নীতি থেকে বিরত রাখে। মানুষের মধ্যে যদি এ চিন্তা না থাকে যে কিয়ামতের দিন আমার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে, তাহলে সে স্বেচ্ছায়ই অপরাধ থেকে কীভাবে বিরত থাকবে।

 

পবিত্র কোরআনের প্রায় এক তৃতীয়াংশজুড়ে বারবার আখেরাত ও কিয়ামত দিবসের জবাবদিহিতা ও হিসাব-নিকাশ ইত্যাদির আলোচনা এসেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো চিকিৎসক, ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও কর্মকর্তা ব্যক্তিদের মধ্যেও যদি পরকাল ভাবনা সৃষ্টি হয় তাহলে নৈরাজ্য ও দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে যাবে।

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু বা অঙ্গহানি হলে দোষী ডাক্তারদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার মতো সুনির্দিষ্ট আইন দেশে নেই। কিন্তু ইসলামে এর স্পষ্ট বিধান রয়েছে। ইচ্ছাকৃত হত্যা বা ভুলবশত হত্যা দুটোর দণ্ড পবিত্র কোরআনে রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো মুমিনকে হত্যা করা কোনো মুমিনের কাজ নয়। তবে ভুলবশত হলে তা স্বতন্ত্র এবং কেউ কোনো মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করা এবং তার পরিজনবর্গকে দিয়াত অর্পণ করা বিধেয়। যদি না তারা তা ক্ষমা করে।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৯২)।

এ আয়াতে দিয়াত বা রক্তপণ হচ্ছে, প্রায় উনিশ ভরি স্বর্ণ বা দুই হাজার ছয়শ পঁচিশ (২৬২৫) ভরি রুপা কিংবা একশ উট (নির্দিষ্ট বয়সের)। এটা হচ্ছে পূর্ণ দিয়াত, যা নিহত ব্যক্তি পুরুষ হলে ওয়াজিব হয়। আর নারীর দিয়াত সর্বক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক। (হেদায়া : ৪/৬৫৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে চিকিৎসক হিসেবে সুপরিচিত নয় এমন কেউ যদি চিকিৎসা করে রোগীর ক্ষতি করে ফেলে, তাহলে তার ওপর জরিমানা আরোপ হবে।’ হাদিসের বর্ণনাকারী আবদুল আজিজ বলেন, ‘এটা কেবল ব্যবস্থাপত্র দেয়ার ক্ষেত্রে নয়; বরং শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে।’ (আবু দাউদ : ৩৩০)।

হাদিসের অর্থ হচ্ছে, চিকিৎসক যদি কোনো অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে রোগীর ক্ষতি করে ফেলেন, তাহলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। মুফতি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.) আহসানুল ফাতাওয়ায় বিষয়টির বিষদ বিশ্লেষণ এভাবে করেছেন যে, ডাক্তার দুধরনের : এক. বিজ্ঞ ডাক্তার। দুই. অনভিজ্ঞ ডাক্তার।

কোনো বিজ্ঞ ডাক্তার যদি রোগীর সম্মতিতে চিকিৎসার সব নিয়ম মেনে চিকিৎসা করেন, অস্ত্রোপচার করেন তার পরও দুর্ঘটনাক্রমে রোগীর মৃত্যু, অঙ্গহানি বা অন্য কোনো ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে তাতে ডাক্তার দায়ী হবেন না। তার ওপর কোনো জরিমানা বর্তাবে না।

বিজ্ঞ ডাক্তার যদি রোগীর অনুমতি ছাড়াই চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার করেন এবং চিকিৎসা শাস্ত্রীয় নিয়ম-নীতিবহির্ভূত হয় আর তাতে রোগী মারা যান তাহলে চিকিৎসকের ওপর দিয়াত (রক্তপণ) আরোপিত হবে। কোনো অঙ্গহানি হলে শরিয়তের নির্ধারিত জরিমানা (অঙ্গের পণ) বর্তাবে।

অনভিজ্ঞ হাতুড়ে ডাক্তারের সঠিক বা ভুল চিকিৎসায় যে কোনোভাবেই রোগীর মৃত্যু হলে ডাক্তারের ওপর পূর্ণ দিয়াত (রক্তপণ) বর্তাবে। অঙ্গহানি হলে অঙ্গের পূর্ণ জরিমানা বর্তাবে। ডাক্তার যদি নিজ হাতে অস্ত্রোপচার করেন, ইনজেকশন বা স্যালাইন পুশ করেন কিংবা ওষুধ নিজ হাতে খাইয়ে দেন তাহলে সে ক্ষেত্রেই কেবল এ বিধান প্রযোজ্য।

চিকিৎসক যদি কেবল ওষুধ লিখে দেন বা প্রেসক্রিপশন দেন এর বেশি কিছু না করেন আর ওষুধ খেয়ে রোগীর ক্ষতি হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। তবে বিচারক সে ক্ষেত্রে চিকিৎসককে কোনো যৌক্তিক শাস্তি দিতে পারেন। (ফতওয়ায়ে শামি : ৯/২১৪, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৫৬)।