ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম খান এখন কোথায় আছেন?
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:৩২ এএম, ১৩ আগস্ট ২০২৪ মঙ্গলবার
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। তারপরও তাকে দীর্ঘদিন একই পদে রাখা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম ১৬ বার বেড়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি, ঢাকা ওয়াসার বহুল আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম আহমেদ খান শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।
তবে ঢাকা ওয়াসার একাধিক সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, তাকসিম খান অনলাইনে মিটিং করে কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এখনো অবৈধ নিয়োগ দিচ্ছেন।
তাকসিম খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। তারপরও তাকে দীর্ঘদিন একই পদে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০০৯ সালে তার নিয়োগের পর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম ১৬ বার বেড়েছে।
গতকাল রোববার ও আজ সোমবার তাকসিম খানের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা ওয়াসার একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী।
কোথায় আছেন তাকসিম
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
তবে সোমবার (১২ আগস্ট) রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ. খানের বিষয়ে এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা ওয়াসার একটি সূত্র জানায়, তাকসিম খান বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে গুলশানে তার নিজ বাসভবনে তিনি থাকেছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা টিবিএস-এর কাছে দাবি করেন, 'এমডি ও তার ঘনিষ্ঠ লোকজন অফিসে না এলেও অনলাইনে মিটিং করে এক হয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফোন করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকসিম খানের ঘনিষ্ঠজন এবং তাকেই আবার এমডি হিসেবে রাখবেন — তাকসিম ও তার সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমন প্রচার করছেন বলেও উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ওঅ্যান্ডএম) এবং তাকসিমের ঘনিষ্ঠজন প্রকৌশলী একেএম শহীদ উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'এমডি অফিসে আসছেন না। আমি আমার সেক্টর নিয়ে বলতে পারব, এমডির বিষয়ে আমি জানি না।'
রাজধানীর পানি সরবরাহে কোনো সমস্যা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'চলমান পরিস্থিতির কারণে কিছু এলাকার গভীর নলকূপের বোরিংয়ের কাজ বন্ধ আছে।'
ওয়াসার আরেকটি সূত্রের তথ্যমতে, তাকসিম খানের কাছে মার্কিন পাসপোর্ট রয়েছে এবং তিনি যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে যেতে পারেন।
তাকসিম খানের মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ-এ টিবিএস-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ প্রতিবেদকের পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা এবং কল তাকসিমের অ্যাকাউন্ট থেকে দেখা হলেও কোনো পালটা উত্তর আসেনি।
যত অভিযোগ তাকসিমের বিরুদ্ধে
ওয়াসার ইতিহাসে তাকসিম আহমেদ খান দীর্ঘদিন ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রয়েছেন। ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি সপ্তমবারের মতো নতুন করে তিন বছরের মেয়াদে নিয়োগ পান।
২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর প্রথম নিয়োগ পাওয়ার পর গত ১৫ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসা'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাকসিম।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। তারপরও তাকে দীর্ঘদিন একই পদে রাখা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম ১৬ বার বেড়েছে।
গত ১৫ বছরে ওয়াসায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় ছিলেন তাকসিম খান। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী, বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা। তবে তাকসিম অনেক ক্ষেত্রে বোর্ডকে এড়িয়ে কাজ করেছেন।
এ নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিরোধও দেখা দেয়। তবে তাকসিমের বিরুদ্ধে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বরং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা তাকসিমের অনিয়ম, অর্থ অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলে তাকে [মোস্তফা] পদত্যাগ করতে হয়।
'তাকসিম খান ঢাকা ওয়াসায় কর্তৃত্ববাদের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বারবার তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এমনকি তার নিয়োগ প্রক্রিয়াও ছিল বিতর্কিত,' টিবিএসকে বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
'তার বিরুদ্ধে দুর্নীথি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গবেষণা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি,' বলেন তিনি।
'তিনি [তাকসিম] যদি প্রচার করেন যে, প্রধান উপদেষ্টা তার ঘনিষ্ঠ, তাহলে সেটি আরও বড় প্রতারণা। আমি আশা করব অন্তবর্তীকালীন সরকার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং এমডিকে অপসারণ করবে,' আরও বলেন টিআইবি পরিচালক।
তাকসিম এ. খানের সময়ে ঢাকা ওয়াসায় বিদেশি ঋণ নিয়ে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ফলে ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ করতে প্রতিষ্ঠানটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রকল্পের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর চালু করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় বেড়েছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ
রোববার (১১ আগস্ট) ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা ও কর্মচারী ইউনিয়ন পরিষদের ব্যানারে ওয়াসা ভবনের সামনে কারওয়ান বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এমডি তাকসিম খান যেন কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য আজ সোমবারও ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।
ইউনিয়নের সভাপতি মোজাম্মেল হক টিবিএসকে বলেন, 'আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। চাকরিতে যোগদানের জন্য আদালতের আদেশ আনার পরেও কয়েকজনকে চাকরিতে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি।'
'এখন আমাদের একটিই দাবি, এমডি তাকসিমকে অপসারণ করে তার বিচার নিশ্চিত করা। তারপর একে একে তার দুর্নীতির সহযোগীদের দূর করতে হবে,' বলেন ঢাকা ওয়াসার এ নির্বাহী প্রকৌশলী। -দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড