শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেয়ালে দেয়ালে দেশপ্রেম সাম্য ও প্রতিবাদের রং

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:০৪ এএম, ১৩ আগস্ট ২০২৪ মঙ্গলবার

শ্রাবণের দুপুরে রমনা এলাকায় এক পশলা বৃষ্টি ঝরে গেল। চারপাশ স্নিগ্ধ। রমনা পার্কের বিপরীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের দেয়ালঘেঁষে তখন একঝাঁক তরুণ-তরুণীর জটলা। তাদের কারও হাতে রঙের কৌটা, কেউ তুলি দিয়ে দেয়ালে আঁচড় দিচ্ছেন। দেয়ালের একটি অংশ পরিষ্কারে ব্যস্ত কয়েকজন। সবার মনোযোগ গভীর, তবে তুমুল উচ্ছ্বাস নিয়ে কাজটি করছেন তারা। কাছে যেতেই চোখ আটকে গেল দেয়ালে আঁকা একটি ছবিতে। সাদা দেয়ালে লাল সূর্যের আলোকচ্ছটা। সূর্যের কেন্দ্র বরাবর পতাকা বাঁধা একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত। এই হাতের দুই পাশে মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডা-চার্চ। ছবিটির রং তখনও কাঁচা। সদ্য আঁকা এই ছবি সাম্যের বার্তা দেয়।

গতকাল সোমবার রমনা এলাকার বেশ কয়েকটি দেয়ালে এমন আরও অনেক গ্রাফিতি দেখা যায়। এর মধ্যে একটি ছবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের প্রতি লেখা ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’, আরেকটিতে লেখা, ‘চা শ্রমিকের বেতন বাড়াও, গণহত্যার বিচার করো, স্বাধীন দেশে আয়না ঘর?’ দেয়ালের পাশের একটি অংশে হলুদ রঙের ওপর হাত দিয়ে শিকল ভাঙার দৃশ্য চোখে পড়ল। এর ওপর সবুজ রঙে লেখা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ শিরোনামের গানের লাইন, ‘কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?’ আরেক দেয়ালে ২৮ বছর আগে রাঙামাটি থেকে অপহৃত কল্পনা চাকমার ছবি এঁকে লেখা, ‘আমরাই কল্পনা চাকমা।’ দেয়ালজুড়ে এরকম প্রত্যেক গ্রাফিতি প্রতিবাদ, সাম্য ও দেশপ্রেমের বার্তা দিচ্ছে।
গ্রাফিতি আঁকায় ব্যস্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রিফর্ম উইলস গ্রুপের সদস্যরা এগুলো আঁকছেন। সংগঠনটি উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা মিলে গড়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিভিন্ন দেয়ালে প্রতিবাদী স্লোগানের পাশাপাশি কিছু অশ্লীল কথাও লেখা হয়েছিল। রিফর্ম উইলস গ্রুপের সদস্যরা সেসব মুছে সামাজিক বার্তা দেয়– এমন গ্রাফিতি আঁকছেন।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শিহাফ মাহমুদ সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। কার কী প্রয়োজন, সেসব খেয়াল রাখছিলেন তিনি। এ সময় শিহাফ বলেন, ‘একটি বড় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এখানে এসেছি। তাই নতুন বাংলাদেশের জন্য নিজেদের জায়গা থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বিভিন্ন সামাজিক বার্তা ছড়ানোর চেষ্টা করছি। তারই ধারাবাহিকতা এই গ্রাফিতি। সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করলে আমাদের দেশটা সুন্দর হবে।’

পাশেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ের দেয়াল। সেখানেও গ্রাফিতি আঁকছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বেইলি রোডের দুই পাশের দেয়ালগুলো গ্রাফিতিতে রঙিন হয়ে উঠেছে। আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে নিহত হওয়ার কিছু সময় আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বলা ‘পানি লাগবে পানি’ বাক্যটিও দেখা গেল কয়েকটি দেয়ালে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজসহ আশপাশর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসব গ্রাফিতি আঁকছেন।
বড় মগবাজারে মিরপুর থেকে শিক্ষার্থীরা এসে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকেন। এতে অংশ নেন মগবাজার, মধুবাগ এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া তারা এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণও করছেন। কিছু কিছু জায়গায় এসব কাজে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছেন অভিভাবকরা। তাদের সবার প্রত্যয় একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার।