মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দস্যু হলেন মক্কার সেরা দরবেশ

ধর্ম ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৭:২৮ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার

বৈরুতের ধুধু প্রান্তর। গায়ে ঠোস ফেলে গরম বালি। বাণিকরা দলবেঁধে চলে। রাতে পাড়ি দেয় মরুপথ। বড় বড় কাফেলা। বাণিজ্যে যায় উটের বহরে। ব্যবসা সামগ্রী বেচতে যায় কেউ, কেউ যায় কিনতে।

মরুর এখানটা পার হতে মাবুদের নাম জপে। এখানে দস্যু হানা দেয় যখন-তখন। ছিনিয়ে নেয় টাকা। মূল্যবান কিছুই নিতে ভোলে না।

সেদিন হল কী! ওখানে থামল সওদাগরি এক কাফেলা। দল নেতার ছিল থলি ভরা মুদ্রা। যদি ডাকাত পড়ে। ভেবে তিনি হাঁটতে লাগলেন। থলিটা নিরাপদে কোথাও লুকোবেন। হঠাৎ এক আস্তানা পেলেন। একজন তসবিহ হাতে জায়নামাজে বসা। কী চাই বলে তসবিহ পড়তে পড়তেই তাকালেন। মুদ্রার থলিটা আমানত রাখব। ফটকের ওপাশে রাখার ইশারা করে জপে মগ্ন হলেন তিনি।

থলিটা লুকালেন ফটকের কোণে। বুকভরা নিঃশ্বাস নিলেন সওদাগর। কপালের ঘাম মুছলেন পাগড়ি দিয়ে। ক্লান্ত পায়ে কাফেলায় ফিরে কাঁদলেন। সাথীদের মূল্যবান সবকিছু লুটে নিয়েছে দস্যুরা। কান্না আর আহাজারি করল রাতভর। মগজ গলানো সূর্য উঁকি দিল ভোরে। সওদাগর আমানত আনতে ছুটলেন। আস্তানায় পা রাখতেই কাঁপল বুক। সেই তিনি। দস্যুদের লুটের মাল ভাগ করে দিচ্ছেন। হায় কপাল! যেখানে বাঘের ভয়, সন্ধ্যা হল সেখানে। কী চাও। প্রশ্ন শুনে ভয়ে ভয়ে সওদাগর বললেন, আমানত নিতে এসেছি। তাচ্ছিল্য করে তিনি বললেন, নিয়ে যাও। থলি ভরা মুদ্রা ছোঁ মেরে হাতে নিল সওদাগর। সাগরেদ দস্যুরা চেঁচাল, ওস্তাদজি। মুদ্রা দিচ্ছেন কেন? লুটে আজ নগদ কিছু পাইনি। এগুলো আমাদের কাজে লাগত।

তিনি বললেন, ‘সে আমাকে মাবুদের ইচ্ছায় সাধুজন ভেবেছে। আমি তার সাধুজন ভাবনার সম্মান জানিয়েছি। দয়াল দয়া করবেন।’ বেশকিছু দিন পার হল। গুপ্তচর অনেক বড় কাফেলার খবর আনল। দলনেতা ফজল আয়াজ লুটের ছক আঁকলেন। দস্যুদের নিয়ে তুর্কি ঘোড়ায় ছুটলেন। হৈ হৈ, মার মার ত্রাস চালিয়ে আক্রমণ করলেন বণিক তাঁবুতে। এক সওদাগর কোরআনের একটি আয়াত পড়ছিলেন। যার অর্থ এমন। ‘জেগে ওঠার এখনও কি হয়নি সময়?’ তীরবিদ্ধ মরু হরিণ ঢলে পড়তে দেখেছে ফজল আয়াজ।

আজ একটি আয়াত গেঁথে ফেলল আয়াজের হৃদয়। মন বলল সময় বয়ে যাচ্ছে। সব ছেড়ে-ছুড়ে ভালো হয়ে যা। এসব কেউ যেন বলে গেল কানে কানে। তওবা করল তক্ষুনি। দল ফেলে পালাতে লাগল নির্জনে। এক দল বণিক যাচ্ছিল বাণিজ্যে। যেতে যেতে বলছে- এ পথে দস্যু আয়াজ আছে। অন্য পথে যাব।

শুনতে পেয়ে চিৎকার করল আয়াজ। হে বণিক দল, তোমাদের জন্য সুসংবাদ। ফজল আয়াজের দিলে রহমত বর্ষিত হয়েছে। বলেই দৌড়ে দৌড়ে কাঁদলেন। আয়াজ আজ পালাচ্ছে অশুভ ছেড়ে। মাবুদের দোহাই। আমাকে বাদশার কাছে নিয়ে ধরিয়ে দাও। অনেক শাস্তি জমে আছে আমার। তার অনুরোধে বাদশার কাছে নিতে রাজি হল অচেনা পথিক। আয়াজের চোখে-মুখে ঐশী আলো দেখলেন বাদশা। ক্ষমা করলেন তাকে।

মাবুদ পথ দেখালেন। মক্কা পাড়ি দিলেন দস্যু আয়াজ। দিনভর জপতপ শুরু হল সুফিদের আসরে। মক্কায় ভোর হয়। ফের নামে রাত। রাত ফুরিয়ে দিন ফুরিয়ে সপ্তাহ পেরোয়। সপ্তাহ শেষে মাস ফুরোয়। মোরাকাবা ফুরায় না আয়াজের। ধ্যান-সাধনায় খুশি হন মাবুদ। দান করেন অফুরন্ত আনন্দ নেয়ামত। এতে তার সেজদা মোরাকাবা বেড়ে যায়। মরু আস্তানায় নীরবে কাটে সময়।

মক্কার বাদশা হারুন রশিদ। অদৃশ্য ব্যথা বুকজুড়ে। বদ্যি কবিরাজ ধরতে পারেনি কিছু। এক রাতে বন্ধুকে ডাকলেন। আমি কোনো দরবেশের কাছে যেতে চাই। আজ রাতেই নিয়ে চল। আমি যেন আত্মায় শান্তি পাই। রাজ্য শাসন আমাকে হাঁপিয়ে তুলেছে। কথা বলে অসহায় চোখে চেয়ে থাকলেন বন্ধুর দিকে।

মক্কার মস্ত বড় দরবেশ সুফিয়ান। তার আস্তানায় বাদশাকে নিয়ে গেলেন বন্ধু। দরবেশের নির্জন ঘরের নড়বড়ে ফটকে টোকা দিলেন। সুফিয়ান, কে বলে চুপ হলেন।

মক্কার বাদশা হারুন রশিদ এসেছেন। শুনে সুফিয়ান বললেন, আগে জানলে আমিই বাদশার দরবারে যেতাম। এত কষ্টের তার কী দরকার ছিল। কথা শুনে বাদশা বললেন, যাকে আমি খুঁজছি ইনি নন তিনি। এবার সুফিয়ান বললেন, হয়তো ফজল আয়াজকে খুঁজছেন আপনারা।