বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবর্তিত বাংলাদেশঃ উদ্বেগ বাড়ছে

হাসান ফেরদৌস

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৩২ এএম, ১৭ আগস্ট ২০২৪ শনিবার


 

বাংলাদেশে আওয়ামি লিগ সরকারের পতনের পর স্বাভাবিকভাবেই অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছে, পুরানো শত্রুতা বশবর্তী হয়ে প্রতিহিংসামূলক ঘটনাও ঘটেছে। এসব অনভিপ্রেত হলেও অভাবিত নয়। অন্তবর্তীকালীন সরকার থিতু হয়ে বসলে, আইনশৃঙ্খলা অবস্থা নিয়ন্ত্রণের ভেতওে চলে এলে অবস্থা পরিবর্তিত হবে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।

কিন্তু ভয় অন্যত্র। চলতি সরকার, হোক না তাঅন্তবর্তিকালীন, তার গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ যদি দেশের- জাতির - মোদ্দা চরিত্রে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা উদ্বেগের জন্ম দেবে। এই রকম একটি সিদ্ধান্ত, ১৫ ডিসেম্বর জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল। একথা ঠিক শোক দিবসের ছুটির সিদ্ধাš Íদলীয় ছিল, কিন্তু শোক দিবস পালন প্রশ্নে বাংলাদেশের মানুষ খুব যে দ্বিধাবিভক্তি ছিল, আমার তা মনে হয় না। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন, তা আওয়ামি লিগ সরকার বিরোধী ছিল, কিন্তু তা বঙ্গবন্ধু বা - বৃহত্তর অর্থে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, একথা ভাবার কোন কারণ নেই। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ, এই তিনটি বিষয় সমার্থক। আর ঠিক সেকারণেই ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন না করা বা এইদিন সরকারী ছুটি বাতিল, শুধ ুহতাশা নয়, উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

একথা ঠিক, বহিষ্কৃত হাসিনা সরকার বঙ্গবন্ধুকে জাতীয় শ্রদ্ধার পাত্র থেকে জাতীয় পরিহাসে পরিণত করে ফেলে। নতুন প্রায়-প্রতিটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করা, অথবা টেলিভিশনে নিরন্তর অঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা আমরা যারা বিগত প্রজন্মের সদস্য তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও নতুন প্রজন্মের - যাদের ‘জেন জি’ নামে ডাকা হচ্ছে - তাদের কাছে বিদ্রুপে পরিণত হয়েছিল। অনুমান করি, ৫ আগস্টের পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্থাপত্যের ওপর হামলার ঘটনা মূলত এই সমীকরণথেকেই উদ্ভূত।

অপরাধটা বঙ্গবন্ধুর নয়, যারা জাতির পিতাকে নিজেদের রাজনৈতিক অদুরদর্শিতার জন্য এমন হাসির পাত্রে পরিণত করে ফেলেছিলেন তাঁদের। কিন্তু অস্বীকার করি কী করে, তিনিই বাঙালি জাতির পিতা, তিনিই আমাদের স্বাধীনতার ও সংগ্রামের প্রতীক। ১৫ আগস্ট যে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়, সেতো এইজন্যই যে হন্তারকেরা চেয়েছিল বাঙ্গালির সেই সংগ্রামের ইতিহাস ও অর্জনের পুনর্লিখন। ১৫ আগস্টকে সরকারী ছুটি ঘোষণা হয়ত একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু এই দিবসটি জাতীয়ভাবে উদযাপনের মাধ্যমে বাঙ্গালি কেবল তার জনককেই স্বরণ করে না, তার স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাংখার প্রতি অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করে। ঠিক সে কারণে, নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল ঘোষণা ও সরকারী আয়োজন ছাটাই আমার কাছে অহেতুক ও অসম্মানজনক মনে হয়েছে।

দ্বিতীয় উদ্বেগ, প্রতিবেশী ভারতের প্রতি অকূটনৈতিকসুলভ বক্তব্য। রাজনৈতিক বা নাগরিক পর্যায়ে এইসব বক্তব্য সীমিত থাকলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু থাকত না, কিন্তু চলতি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের মুখেও সমালোচনামূলক বক্তব্য শোনা গেছে। আপাত নিরীহ এইসব বক্তব্য হয়ত অতিরিক্ত গুরুত্ব পেত না, কিন্তু হাসিনা সরকারের পতন আমাদের দুই দেশের মধ্যে অস্বাভাবিক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।