বাংলাদেশের শান্তি ও কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে মুনার কনভেনশন সম্পন্ন
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৪৪ এএম, ১৭ আগস্ট ২০২৪ শনিবার
বাংলাদেশে শান্তি, কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা কামনার মধ্য দিয়ে ইসলামিক উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা) তিনদিনব্যাপী কনভেনশন সমাপ্ত হয়েছে। কনভেনশনে বক্তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চেতনা ও ইসলামিক মূল্যবোধে দেশ পরিচালনার আহবান জানান। ‘ইসলাম : পিস এন্ড জাস্টিস ফর হিউম্যানিটি’ শ্লোগান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরের পেনসিলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টারে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন। এবারের কনভেনশন ছিলো মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা-মুনা’র অষ্টম কনভেনশন। শুক্রবার (৯ আগষ্ট) বিকেল শুরু হওয়া কনভেনশন চলে রোববার (১১ আগষ্ট) অপরাহ্ন পর্যন্ত। কনভেনশনে আগতদের স্বাগত জানান মুনা’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন-অর রশীদ ও কনভেনর আরমান চৌধুরী।
মুনা কনভেনশনকে ঘিরে পেনসিলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টার মিনি বাংলাদেশ ও মুসলিম কমিউনিটির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিলো। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন স্থান থেকে কনভেনশনে যোগদানকারী অধিকাংশরাই ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশী অথবা বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান। কনভেনশনের বিভিন্ন অধিবেশনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও দেশী-বিদেশী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তাদের কথায় অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগ, আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম, অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার, অনিয়মের কথা উঠে আসে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনী জনগণের স্বাধীনতা, গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসন প্রভৃতি বিষয়ও উঠে আসে। অপরদিকে কোন কোন বক্তা তাদের বক্তব্যে বলেন, নতুন সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। এবং আগামী কনভেনশনের আগেই ফিলিস্তিনীরা পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে, ইহুদীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত হবে আল আকসা মসজিদ। বক্তারা পবিত্র কোরআনের আলোকে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবী জানান।
বিভিন্ন অধিবেশনের আলোচনায় বক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সকল নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোটার প্রক্রিয়ায় অংশ না নিলে অধিকার আদায় প্রতিষ্ঠা হবে না।
অপরদিকে কনভেনশনের বিভিন্ন অধিবেশনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও দেশী-বিদেশী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তাদের কথায় অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগ, আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম, অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার, অনিয়মের কথা উঠে আসে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনী জনগণের স্বাধীনতা, গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসন প্রভৃতি বিষয়ও উঠে আসে। অপরদিকে কোন কোন বক্তা তাদের বক্তব্যে নতুন সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। এবং আগামী কনভেনশনের আগেই ফিলিস্তিনীরা পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে আর আল আকসা মসজিদ ইহুদীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত হবে।
এদিকে মুনা কনভেনশন ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুরে নিউইয়র্ক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে হাজার হাজার মুসলিম নর-নারী সপরিবারে কনভেনশন সেন্টারে এসে মিলিত হন। এর আগে তারা পূর্বে বুকিং করা হোটেলের কক্ষ কনফার্ম করেন। এরপর তারা কনভেনশনের রেজিষ্ট্রেশনও কনফার্ম করেন। অনেকে বিকেল ও সন্ধ্যায় এসে কনভেনশনে যোগ দেন। ফলে কনভেনশন সেন্টার ও আশপাশের এলাকা মিনি বাংলাদেশ তথা মুসলিম কমিউনিটিতে পরিনত হয়।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলীন, ওজনপার্ক প্রভৃতি এলাকা থেকে একাধিক বাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে হাজার হাজার বাংলাদেশী সপরিবারে এই কনভেনশনে যোগ দেন। এবারের কনভেনশনে ১২ থেকে ১৫ হাজারের মতো মুসলিম নর-নারীর সমাবেশ ঘটেছে বলে কনভেনশন আয়োজকরা জানিয়েছেন।
কনভেনশনের বিভিন্ন পর্বে আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে তিন দিনের আলোচনায় মুনা’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশিদ, সাবেক ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসেন ও আবু মোহাম্মদ নূরুজ্জামান এবং বাংলাদেশ থেকে আগত ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার, লন্ডন থেকে আগত ব্যারিস্টার হামিদ হোসেন আজাদ সহ অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম ও খতিব মির্জা আবু জাফর বেগ, ড. ইয়াসির কাধি, ইমাম ড. ওমর সুলেমান, ইমাম সিরাজ ওয়াহহাজ, মুফতি হুসাইন কামানি, শন কিং, ইমাম সুলেমান হানি, শায়খ আব্দুল নাসির জাংদা, উস্তাদ তাইমিয়া জুবায়ের, ইমাম ড. মোহাম্মদ আবু তালেব, ড. আলতাফ হোসেন, ইসমাহান আবদুল্লাহি, ওসামা আবু ইরশাইদ, ডা: সাঈদুর রহমান চৌধুরী, আবদুর রহমান খান, ড. জাহিদ বুখারী, ড. তাহির ওয়াইট, ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ইমাম বাবা গালে ব্যারি, ড. উসামা আল-আজামী, শেখ এ টিডিয়ান ডায়ালো, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহি, নিহাদ আওয়াদ, আবুসামিহা সিরাজুল ইসলাম, ড. হাসান আবদেল সালাম, ড. আয়মান হাম্মুস, ডা. সাবিল আহমেদ, ডা. মাহেরা রুবি, ডা. আবুদুল্লাহ বালদি, ডা. মহসিন আনসারী প্রমুখ। এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন পেনসেলভেনিয়া ষ্টেট সিনেটর নিখিল সাবা এবং পাকিস্তানী-আমেরিকান রাজনীতিক তারেক খান, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আব্দুল আজীজ ভূইয়া প্রমুখ।
কনভেনশনের বিভিন্ন পর্ব পরিচালনা করেন মুনা’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশীদ, কনভেনশনের কনভেনর আরমান চৌধুরী, মুনার ন্যাশনাল এসিস্টেন এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আহমদ আবু উবাইদা, ন্যাশনাল সোস্যাল সার্ভিস-এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরীফ, মিডিয়া ও কালচালার বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান গাজী, টিভি নিউজ প্রেজেন্টার ও আবৃত্তিকার অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মনসুর প্রমুখ।
শুক্রবার (৯ আগষ্ট) দুপুরে জুম্মার নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে মুনা কনভেনশন শুরু হয়। পেনসেলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টারের মূল মঞ্চে বিকেলে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী পর্বের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একাধিক তেলাওয়াতকারী। এদের মধ্যে ছিলেন কারী ইশতিয়াক বিন শফিক, কারী নজরুল ইসলাম, কারী আহমেদ মাবরুর, কারী হোসাইন সালেহ প্রমুখ। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনভেনশন কনভেনর আরমান চৌধুরী। এছাড়াও সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মুনা’র ন্যাশনার প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশীদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ইমাম বাবা গালী বারী, শাহীন সিদ্দিকী, লন্ডন থেকে আগত ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ, ফিলাডেলফিয়া সিটি মেয়রের প্রতিনিধি, ড. আয়মান হামাস, ড. মহসিন আনসারী, ওসামা জামাল, ইমাম সিরাজ ওয়াহহাজ, আবু আহমেদ নূরুজ্জামান, ডা: সাইদুর রহমান চৌধুরী, ইমাম দেলোয়ার হোসাইন এবং বাংলাদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী সাইফুল্লাহ মনসুরের সঙ্গীত উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান।
পরবর্তী সেশনে ‘দ্য ইউনাইটেড গাইডলাইন্স’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন আবু মোহাম্মদ নূরুজ্জামান, ড. আলতাফ হোসাইন ও সাউন কিং। এরপর মাগরিবের নামাজের বিরতীর পর ‘ইসলামের সভ্যতা ও ঐতিহ্য-যে জাতি আলো ছড়ায়’ শীর্ষক সেশনে ‘ইসলামী সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব’ বিষয়ে ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ, ড. সাঈদুর রহমান চৌধুরী এবং ‘সালাহউদ্দিন আইয়ুবী-আমাদের প্রেরণা’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার। এছাড়াও এদিন মূল পর্বের আলোচনা ছাড়াও ইয়্যুথ কনফারেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য কনফারেন্স রুমে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ও সেমিনারগুলোতে অতিথি আলোচকগণ বক্তব্য রাখেন