বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সেনাপ্রধানের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তরুণ সেনা কর্মকর্তারা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫৫ এএম, ১৯ আগস্ট ২০২৪ সোমবার

দ্য উইকের প্রতিবেদন


শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার কয়েকদিন আগে সেনাবাহিনীর তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে। ভারতীয় সাময়িকী দ্য উইকে শনিবার (১৭ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২ আগস্ট এক বৈঠকে তরুণ সেনা কর্মকর্তারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়েছে দ্য উইক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে মাসব্যাপী বিক্ষোভের সূত্র ধরে পরিস্থিতি যখন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল, এমন সময় দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন করে সরকার। এর মধ্যে ২ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ওই দিন এক বৈঠকে তরুণ সেনা কর্মকর্তারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সূত্রটি জানায়, সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রশমনে সেনাপ্রধান এ বিষয়টি তুলে ধরেন যে যদি অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, তাহলে বাংলাদেশ কেনিয়া বা আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মতো হয়ে যেতে পারে।

কর্মকর্তাদের সংযত থাকার পরামর্শ দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৯৭০ সালের পর এমন গণবিক্ষোভ আর কখনো হয়নি। তাই এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।’

তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বৈঠকটি শেষ হয়। এর ৩ দিন পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, যেটা তাকে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় নিয়ে যায়। সেখানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি সি১৩০ পরিবহন উড়োজাহাজ অপেক্ষমাণ ছিল, সেটা তাকে (শেখ হাসিনা) দিল্লির উপকণ্ঠের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যায়।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবস্থা ছিল অস্বস্তিকর। কারণ, তাকে শেখ হাসিনা নিয়োগ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া বৈবাহিক সূত্রে তিনি শেখ হাসিনার আত্মীয়। বিষয়টি সম্ভবত তাকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও সতর্ক করে তুলেছিল। বিশৃঙ্খলার মধ্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবিলা ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সেনা মোতায়েনকে যৌক্তিক হিসেবে তুলে ধরতে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। তারা ১ হাজার ৭১৯টি গুলি ছুড়েছে, ১৪ হাজার ফাঁকা গুলি ছুড়েছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস জনতার মুখোমুখি হয়ে ৩১টি উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।

মতবিনিময়ে সেনাপ্রধানের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে তদন্তের আহ্বান আসে। তরুণ মেজর মো. আলী হায়দার ভূঁইয়া সেনা মোতায়েনকালে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে, তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি পবিত্র কোরআন থেকে উদ্ধৃত করেন, তিনি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আল্লাহর করুণা ভিক্ষা করেন এবং এতে যুক্ত না হওয়ার কথা বলেন। একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তার এই আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শুধু বলেন, ‘আমিন’।

ওই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ওপর মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন মেজর হাজেরা জাহান। ওই সময় তিনি শিশুদের প্রাণহানি ও এর ন্যায্য বিচার হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিলে তাতে একমত হন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কয়েকজন কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেন আরেক কর্মকর্তা। ওই সময় সেনাপ্রধান বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এগুলো দেখা হবে। সবশেষে সামাজিক চাপ ও হয়রানির মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারটি তুলে ধরেন তিনি। ওই সময় হতাশা প্রকাশ করে আইয়ুব বাচ্চুর একটি গানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

 সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত জুলাই থেকেই উত্তাল ছিল দেশ। ওই আন্দোলনে দমন-পীড়ন শুরু হলে দ্রুত আন্দোলনের বাঁক ঘুরতে থাকে। একসময় সরকারপতনের আন্দোলনের দিকে যায় বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয় সরকার। ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারত চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে ভারতে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় হাসিনার রাজনীতিতে ফেরার বার্তা দিয়েছেন। তবে, তিনি কীভাবে আবার দলকে গুছিয়ে নেবেন, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।