বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতের সৃষ্ট বন্যায় বাংলাদেশে তীব্র ক্ষোভ

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫৫ এএম, ২৪ আগস্ট ২০২৪ শনিবার

প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন প্রণব ভার্মা


ভারতের একটি বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বন্যা দেখা দেয়ায় বাংলাদেশে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে ভারতের সমালোচনা হচ্ছে। ভারত বিরোধী ঢেউ এতটাই প্রবল আকার ধারণ করেছে যে, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণব ভার্মা বৃহস্পতিবার অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশে ভারতীয় স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে তাকে ভারতে আশ্রয় দেয়া হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন অর্ন্তবর্তী সরকারের সমর্থকরা আগে থেকেই নাখোশ ছিলেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন প্রকাশ্যেই বলেছেন, ভারতে বসে শেখ হাসিনার বিবৃতি দেয়া বাংলাদেশ সরকারের পছন্দ নয়। এই পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের বাঁধ ভাঙ্গা ঢলে বাংলাদেশের বিরাট অংশ তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দেবার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে শেখ হাসিনার আমলের বিশ^স্ত প্রতিবেশি দেশটির বিরুদ্ধে আগামী দিনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়ে সাম্প্রতিক ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইনের সঙ্গে এবার যুক্ত হতে পারে ভারতীয় কর্মী নিয়োগের বিরোধিতার শ্লোগান।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনদানকারী দেশ ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কেন এতটা ক্ষোভ এ বিষয়ে বেশ কৌতুহল দেখা দিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের হিউবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলো যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী কর্মকান্ডে ভারতের অন্ধ সমর্থন তাদেও সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষকে আরও সন্দিহান এবং ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় সমতার ভিত্তিতে বৈদেশিক সম্পর্ক কোনও অমূলক চাওয়া নয়। গণঅভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতকে তার ভাবনা ও আচরণ বদলাতে হবে’। অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়েই বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত।
বাংলাদেশে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় সরকারী হিসাবে আক্রান্ত হয়েছে ৮ জেলার ২৯ লাখের বেশি মানুষ। বন্যা কবলিত এসব এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের উদ্ধার, তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া, খাদ্য সরবরাহ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে অন্তবর্তী সরকার।
এদিকে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,  ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশে এই মর্মে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, ত্রিপুরায় গোমতি নদীর উজানে দুমবুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা দেখা দিয়েছে। এটা সঠিক তথ্য নয়। গোমতি নদী ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গোমতি অববাহিকায় উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যার মূল কারণ ভারী বর্ষণ বলে মনে করা হয়। সীমান্তবর্তী এই বাঁধটি ভেঙে যায়। এতেই পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই বাঁধ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে’।  তবে ভারতের এই ব্যাখ্যা বাংলাদেশ গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিচ্ছে না।  
অন্যদিকে, ভারতে আশ্রয় নেয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রিসভার সকল সদস্য এবং সংসদ সদস্যগণের কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করে দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা মোতাবেক, দুই দেশের কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ৪৫ দিন পর্যন্ত একে অন্যের দেশে থাকতে পারেন। এখন লাল পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ হারালেন শেখ হাসিনা। ভারত সরকারের নীতি নির্ধারকরা অবশ্য বলছেন, শেখ হাসিনা ভারত সরকারের অতিথি। তিনি যতদিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন। ১৯৭৫ সালে তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা দেশটিতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আশ্রয়ে ছিলেন। এবার শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ভারত মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিলে পাসপোর্ট কিংবা ট্রাভেল ডকুমেন্ট ছাড়াই যে কাউকে আশ্রয় দিতে পারে। ভারত এভাবে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর কারণে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন মহলে অস্বস্তি বিরাজ করছে।