বাড়ি বেচাকেনায় নতুন নিয়ম চালু
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:০৪ এএম, ২৪ আগস্ট ২০২৪ শনিবার
বায়ার-এজেন্ট চুক্তি বাধ্যতামূলক
যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাড়ি বেচা কেনায় নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। এতে বাড়ি ক্রয় বিক্রয়ে এজেন্টদের অর্থ পরিশোধের ধরন ও কমিশনের হারেও পরিবর্তন হবে। এজেন্ট কমিশনের দায় নিতে হবে বায়ারকে। যার প্রভাব পড়বে বাড়ি বেচাকেনায়। এতে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বড় ধাক্কা লাগার আশংকাও রয়েছে। নতুনদের জন্য এ পেশায় আসা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন রিয়েলটররা।
যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ট্রেড গ্রুপ ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ রিয়েলটরস (এনএআর) এই পরিবর্তন এনেছে। বাড়ি বিক্রি বাবদ বেশি কমিশন দিতে হচ্ছে এমন অভিযোগে বাড়ি মালিকরা আদালত যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে এনএআর’কে। গত ১৭ আগস্ট থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে।
সাধারণভাবে একজন বাড়ি বিক্রেতার এজেন্ট বিক্রেতাদের কাছ থেকে বিক্রয় মূল্যের ৫ থেকে ৬ শতাংশ এজেন্ট ফি চার্জ করে। যা ক্রেতার এজেন্টের সাথে ভাগ করতে হয়। অর্থাৎ কোন বাড়ি বিক্রেতার বাড়ির মূল্য ১ মিলিয়ন ডলার হলে এর কমিশন হিসাবে ৬০ হাজার ডলার দিতে হয়। কমিশনের টাকাও মূল বাড়ির মূল্য হিসাবেই ধরা হয়। এতে বাড়ির দামসহ রেজিস্ট্রেশন ফি বেড়ে যায়। নতুন পরিবর্তনে সেলার ও বায়ার আলোচনার মাধ্যমে কমিশন ঠিক করতে পারবে। যা ৫ বা ৬ শতাংশের কমও হতে পারে। সেলার এজেন্টের কমিশন সেলার পরিশোধ করবে আর বায়ার এজেন্টের কমিশন বায়ার পরিশোধ করবে। তাছাড়া বাড়ি কিনতে হলে বায়ারকে কোন এজেন্টের সঙ্গে লিখিত চুক্তিতে যেতে হবে। বায়ার কোন বাড়ি দেখার আগেই এজেন্টের সঙ্গে কমিশন ও অন্যান্য বিষয়ে এ চুক্তি সারতে হবে। এছাড়া একটি বাড়ি থেকে একজন সেলার এজেন্টই শুধু কমিশন পাবেন, যার নামে বাড়িটি লিস্টিং করা আছে। বায়ারের এজেন্টকে কমিশন ভাগ করে নিতে হবে না।
রিয়েলটরা বলছেন, এর ফলে বাড়ি বিক্রিতে ধস নামতে পারে। কারণ সাধারণত কোন বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে বায়ার এজেন্ট ও সেলার এজেন্ট আলাদা হয়ে থাকে। পরিবর্তিত অবস্থায় বায়ার এজেন্ট আর্থিক ক্ষতিতে পড়বেন। কারণ বায়ারকে নতুন করে এজেন্ট ফি দিতে গেলে তাদের উপর অর্থের চাপ বেড়ে যাবে। অনেক বায়ারই কোন ধরনের চুক্তিতে যেতে চায় না। তাই অর্থিক নিশ্চয়তা না পেরে বায়ার এজেন্টরাও বাড়ি দেখাবে না। ফলে বিক্রি কমে যেতে পারে।
তবে এনএআর সভাপতি কেভিন সিয়ার্স বলেছেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে এজেন্টরা পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেবে। এই পরিবর্তনগুলি বাড়ি কেনা এবং বিক্রি করার সময় গ্রাহকদের পছন্দ ও চাওয়াকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
এটিকে শিল্প বিশ্লেষকরা আমেরিকার রিয়েল এস্টেট বাজারে এক শতাব্দীতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে অভিহিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট ব্রোকারেজ, ইএক্সপি রিয়েলটির সিইও লিও পারেজা বলেছেন, এটি একটি শিল্পে একটি বিশাল সামাজিক পরীক্ষা, যা বেশ অগোছালো এবং কনফিউজিং। তবুও আমার এজেন্টদের প্রস্তুত করছি।
রিয়েলটর মোতালিব রাজা আজকালকে বলেন, নতুন নীতির দুটি দিক আছে। আগে সেলার এজেন্ট বা লিস্টিং এজেন্ট বাড়ির কমিশন দিত। এখন লিস্টিং এজেন্টরা চাইবে তা না দিতে। ফলে বায়ার এজেন্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে যেহেতু কমিশন শুধু একজনই পাচ্ছে তাই সেলার তার এজেন্টকে কম কমিশন দিবে। বাড়ির দামও কম হবে। আবার উল্টো দিকে বায়ার যদি তার এজেন্টকে টাকা দেয় তাহলে এজেন্ট তার স্বার্থটাই দেখবে। কারণ সে তার ক্লায়েন্ট। তার কাছে এজেন্ট চুক্তিগত দায়বদ্ধ। আগে বায়ারকে দেখা হতো ক্রেতা হিসেবেই। এটা বায়ারের জন্য ভালো দিক। তবে নতুন এজেন্টদের বায়ার পাওয়া কষ্টকর হবে।
রিয়েলটর সোহাগ বলেন, যেহেতু এখন বায়ারকে কমিশন পে করতে হবে তাই বায়ারের উপর চাপ পড়বে। তাছাড়া বায়ারকে কোন একজনের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। ফলে তার জন্য অনেক বাড়ি দেখার সুযোগ কমে যাবে। ফলে যাচাই বাছাই করেই রিয়েলটর চুক্তি করতে হবে। এতে কিছুটা আতঙ্কে আছেন রিয়েলটর ব্যবসায়ীরা। কারণ সাধারণত মানুষ কোন বিষয়ে লিখিত চুক্তিতে যেতে আগ্রহী হয় না।
এনএআর বলছে, সুনির্দিষ্ট চুক্তির ফলে যাদের বাড়ি আশু প্রয়োজন তারাই এজেন্টের সঙ্গে চুক্তিতে যাবে। তাছাড়া, দরকষাকষির সুযোগ থাকায় রিয়েল এস্টেট কমিশন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ কমতে পারে। এটি ডিসকাউন্ট ব্রোকারেজের মতো বিকল্প ব্যবসায়িক মডেলসহ রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলির উন্নতিও হতে পারে।