শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইমরান খানের অক্সফোর্ড চ্যান্সেলর পদে প্রার্থীতা, রাজনৈতিক প্রভাব

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৮ এএম, ২৫ আগস্ট ২০২৪ রোববার

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে আটক রয়েছেন। তিনি এবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। এই পদটি একটি অত্যন্ত সম্মানজনক এবং কার্যত প্রশাসনিক কাজ থেকে মুক্ত। তবু এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ মর্যাদা বহন করে, যা ইমরান খানের মতো একজন রাজনীতিকের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে।

ইমরান খানের উপদেষ্টা জুলফি বুখারি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন, ইমরান খান ইতোমধ্যে এই পদের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। বুখারি উল্লেখ করেন, ইমরান খানের নির্দেশনা অনুযায়ী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইমরান খান অতীতে ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি অক্সফোর্ডের মতো একটি প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের আচার্য পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা। ইমরান খানের এই পদক্ষেপ অনেকের কাছেই চমকপ্রদ মনে হতে পারে। কারণ তিনি বর্তমানে কারাবন্দী। গত বছর অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে, যা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। এর মধ্যে অক্সফোর্ডের মতো একটি বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদের জন্য তার প্রার্থীতা নতুন এক দৃষ্টিকোণ তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইমরান খান যদি এই পদে নির্বাচিত হন, তাহলে তা কেবলমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানজনক দায়িত্ব পালন নয়, বরং এটি তার রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির একটি নতুন মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইমরান খান এবং তার দল পিটিআই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এই ধরনের একটি পদ অর্জন তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও প্রভাবশালী করে তুলতে পারে।

তবে ইমরান খানের নির্বাচনের পর দায়িত্ব পালন নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে থাকায়, কীভাবে তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদিও তার উপদেষ্টা জুলফি বুখারি আশাবাদী যে, ইমরান খান ডিসেম্বরে নির্বাচিত হলে কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন এবং সশরীরে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এছাড়াও, অক্সফোর্ড চ্যান্সেলরের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে ব্রিটেনে বাস করা, যা ইমরান খানের ক্ষেত্রে আরও একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে, চ্যান্সেলরের ক্ষেত্রে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করা বাধ্যতামূলক নয়।

এই নির্বাচন শুধুমাত্র ইমরান খানের জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে ইমরান খানের মত একজন নেতা চ্যান্সেলর হিসেবে কাজ করলে তা পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। একইসঙ্গে, যদি তিনি নির্বাচিত হন এবং দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন, তাহলে তা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে।

অন্যদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও তার চ্যান্সেলর পদে এমন একজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, যিনি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। এর ফলে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়ও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ইমরান খানের প্রার্থীতা। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই নির্বাচনের ফলাফল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত হবে এবং পাকিস্তানের ভবিষ্যত রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে।

শেষ পর্যন্ত, ইমরান খানের চ্যান্সেলর নির্বাচনের এই প্রচেষ্টা সফল হবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু নিশ্চিত, ইমরান খানের এই পদক্ষেপ তাকে আবারো আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে নিয়ে এসেছে এবং তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।