বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গণভবন এখন যেমন

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৬ এএম, ৩১ আগস্ট ২০২৪ শনিবার


 
 
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার টানা ১৫ বছরের বেশি সময় থেকেছেন গনভবনে। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক দলের কর্মসূচি সবই হতো সেখানে। ছিল সব আয়োজনই। বিশাল আয়তনের এ বাড়ির আঙ্গিনায় ফুল-ফসলের চাষাবাদও হতো। পুকুরে ছিল মাছ। ছিল গরু ছাগলের খামার। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকতো বাড়িটি। রাতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও যান চলাচল থাকতো নিয়ন্ত্রিত। সাজানো-সুরক্ষিত এই বাড়িটি এখন শূন্য প্রান্তর। ভেতরে বাসিন্দা নেই।
তারপরও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দিন রাত পাহারা দেন। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরপরই গণভবনে প্রবেশ করে হাজার হাজার মানুষ। চলে লুটপাট। পরের দিনও মানুষের ¯্রােত ছিল এই বাড়ি ঘিরে। দুইদিনে বাড়ির প্রায় সব লুটপাট হয়ে যায়। নিরাপত্তা দেয়ালও ভেঙে ফেলা হয় স্থানে স্থানে। পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাধারন মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে খাঁ খাঁ করছে এক সময়ে জৌলুসমাখা এই বাড়ি।
ঢাকার একটি দৈনিক ভবনটির বর্তমান অবস্থার ওপর একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ভবনটিতে সুনসান নীরবতা। চারিদিকে প্রাচীর ভাঙা। কক্ষগুলো অকেজো-অরক্ষিত। বাড়ির-ভেতরে বাইরে ময়লার স্তূপ। মাঠ-রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিস। ভাঙচুর ও আগুনে পোড়া গাড়িগুলো পড়ে রয়েছে ভেতরে। লোকশূন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টগুলো। টহলে রয়েছেন অল্প সংখ্যক সেনা সদস্য। রয়েছে জনসাধারণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। সুইমিংপুল ও মাছ চাষ করার পুকুরটিতেও ময়লায় সয়লাব। গণভবনের বিশাল আঙ্গিনাও অগোছালো। চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে গণভবনের সামনের সড়কে হর্ন বাজিয়ে চলছে না যানবাহন। সড়কটির দুই প্রবেশমুখে রয়েছে ব্যারিকেড। জানা যায়, গণভবনের সামনের রাস্তা ও ভেতরের প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ৬ই আগস্ট যে অবস্থা ছিল ঠিক তেমনই আছে। কোনো সংস্কারের কার্যক্রম এখানো শুরু হয়নি। শিক্ষার্থীরা প্রথম দিকে কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এই ভবনটির দায়িত্বে রয়েছেন সেনাবাহিনী। সরকার প্রধানের জন্য ভবনটি নির্ধারিত থাকলেও অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনুস এ বাড়িটিতে উঠেন নি। তিনি উঠেছেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়।
৫ ও ৬ই আগস্ট লুট হওয়া কিছু জিনিসপত্র অনেকে ফেরত দিয়ে গিয়েছেন। এরমধ্যে মূল্যবান যে সকল জিনিসপত্র রয়েছে সেটি সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। আর যেগুলো আসবাবপত্র ভাঙাচুরা সেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মাঠ ও রাস্তায়। দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে কিছু নিম্নআয়ের মানুষ দেয়াল টপকে বা ভাঙা অংশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে রড ও ভাঙাচুরা জিনিস নেয়ার চেষ্টা করে। এজন্য নজরদারি করতে হচ্ছে। গত ১২-১৩ই আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এখানে লুট হওয়া জিনিসপত্র সংরক্ষণের কাজ করেছেন। পরে কয়েকদিন মানুষ আসে দেখার জন্য।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ই আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। দুপুরে তিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই তার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবেশ করেন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। গণভবনের চতুর্দিকের প্রাচীর ভেঙে প্রবেশ করেন ভেতরে। সেদিন ছাত্র-জনতার দখলে ছিল গণভবন। দুপুর থেকেই গণভবনের চারপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্র-জনতা। প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছাড়ার খবর আসার আগেই তারা বিজয় উল্লাস করছিলেন। সেদিন সকাল থেকেই গণভবনের চারপাশে তখনও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিরাজ করছিল। বেলা দুইটায় সেনাপ্রধান ভাষণ দেবেন এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর আসে। এটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিজয় উল্লাস। তখনও নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। লাখো লোকে লোকারণ্য হয় রাস্তাঘাটে। বেলা আড়াইটার দিকে একে একে চলে যেতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তখন ছাত্র-জনতা চারপাশ দিয়ে গণভবনের দিকে এগোতে থাকে তারকাঁটার ব্যারিকেড পেরিয়ে। বিপুলসংখ্যক লোক ভেতরে প্রবেশ করেন। বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করেছেন তারা। সেখানে থাকা কক্ষ থেকে যে যা পারে নিয়ে যায়। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে থাকা সোফা, চেয়ার টেবিল, লাইট-ফ্যান, এসি, সিসিটিভি ক্যামেরা, মনিটর, টেলিভিশন খুলে নিয়ে যায়। গণভবনে থাকা পশু পাখি, পুকুরের মাছ খামারের গরুও নিয়ে যায় মানুষ।