বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ৩ ১৪৩১   ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লিতে বসে হাসিনার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৫৫ এএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোববার

প্রত্যার্পন না করা পর্যন্ত ভারত রাখতে চাইলে তাকে চুপ থাকতে হবে: ইউনুস


ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসিত জীবন-যাপন করলেও সেখান থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা জল্পনা রয়েছে। জনরোষে তার কতৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর তার ক্ষেত্রে কী ঘটবে তা নিয়েও রয়েছে নানা কৌতুহলী প্রশ্ন। এই সব প্রশ্নের মধ্যে ভারতের মাটিতে বসে হাসিনার রাজনৈতিক মন্তব্যে ক্ষোভের কথা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন যে, ‘বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ না করা পর্যন্ত ভারত  যদি তাকে (শেখ হাসিনা) রাখতে চায়, তবে তার প্রথম শর্ত হলো তাকে চুপ থাকতে হবে’। ইউনূস মনে করেন, হাসিনা চুপ থাকলে সেটা হবে তিনি নিজের মতো আছেন। কিন্তু তার বদলে রাজনৈতিক মন্তব্য অস্বস্তিকর।
এদিকে, বাংলাদেশের উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদিদের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের বিচারের ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় দ্রুত রূপরেখা দেবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এমন সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের এক মাসপূর্তি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে ‘শহিদি পদযাত্রা’ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। লাখ লাখ ছাত্র জনতার অংশগ্রহণে পদযাত্রা কার্যত এক বিরাট শোডাউনে পরিণত হয়। সেখানে সংগঠনটির সমন্বয়কেরা ছাত্র আন্দোলনকালের অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। ছাত্ররা বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেন।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে সরে গেলে দলটির সীমিত কার্যক্রম চলতে দেয়া হতে পারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে একটা গুঞ্জন চলছে। হাসিনা যদি এই পদ ছেড়ে দেন সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের একজন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির প্রয়োজন হবে। কিন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর শেখ হাসিনা নিজেই সভাপতির পদ ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না। আর এ কারণেই প্রুয়াস চলছে তাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক মাসের মাথায় পদত্যাগ করেছেন হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। পদত্যাগপত্রে তারা লিখেছেন, জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেবার ৯০ দিনের মাথায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আগ্রহ না থাকায় তারা পদত্যাগ করছেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে গোলাম আযমের পুত্র ব্রিগেডিয়ার আযমী সম্প্রতি ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়ে জাতীয় সংগীত পাল্টে দেবার প্রস্তাব করার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবাদ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত দলবদ্ধভাবে গাওয়া হচ্ছে এবং সে সব অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করা হচ্ছে।  
শহিদি মার্চ থেকে পাঁচ দাবি : গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনাসহ পাঁচটি দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের শহিদি মার্চের কর্মসূচি থেকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার সংবাদকর্মীদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাদেও দাবিগুলো হলো : ১. গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২. শহীদ পরিবারদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান করতে হবে। ৩. প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৪. গণভবনকেকে জুলাই স্মৃতি যাদুঘর ঘোষণা করতে হবে। ৫. রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের এক মাস পূর্তিতে শহীদদের স্মরণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজন এই  ‘শহিদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শহিদি মার্চের পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিশাল এই পদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার ঢল নামে।
শহিদি মার্চটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাব-কলাবাগান-সংসদ ভবন-ফার্মগেইট-কারওয়ান বাজার-শাহবাগ-রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
গণভবন হবে জাদুঘর : গণভবনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্ন্তবর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, গণভবনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করা হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণভবন যেমন ছিল তেমন রেখে স্মৃতি জাদুঘর করা হবে। সেখানে ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মকা- প্রদর্শিত হবে।