মেরিল্যান্ড ফোবানা পরিণত হয়েছিল হাজারো বাংলাদেশির মিলনমেলায়
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১২:৫৯ এএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোববার
বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ; ছাত্রদের রক্ত ঋণ শোধ করবে প্রবাসীরা
বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় উচ্চারিত হলো ফেডারেশন অব বাংলাদেশি এসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা’র (ফোবানা) কনভেনশনে। হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে লেবার ডে উইকেন্ডে ৩০আগষ্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বও পর্যন্ত এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কনভেনশনে বক্তারা ছাত্রজনতার গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, ছাত্রজনতার রক্ত ঋণ শোধ করবে প্রবাসীরা। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে প্রায় ১ কোটি প্রবাসী। তারা দুর্নীতি, স্বৈরাচার ও বৈষম্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রবাসীরা প্রস্তুত আছে।
উৎসবমুখর পরিবেশে মোরিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গস্থ হিলটন হোটেলে ৩৮তম ফোবানার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মূলধারার রাজনীতিক ও সিটি অব কলেজ পার্কের মেয়র ড. ফজলুল কবির। এ সময় পুরো হোটেল চত্ত্বরজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। ফোবানার হোস্ট কমিটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবির বাবলুর সভাপতিত্বে শুক্রবার ৩০ আগষ্ট সন্ধ্যা ৭টায় তিনদিনব্যাপী ফোবানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও প্রেসিডেন্ট ফর গ্লোবাল বাংলাদেশি’স ড. হাসনাত হোসেন এমবিই। গেষ্ট অব অনার ছিলেন ফোবানা স্টিয়াংি কমিটির চেয়ারম্যান ও ৩৮তম ফোবানার প্রাণপুরুষ শাহ নেওয়াজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফোবানার কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ হোসেন খান, আলী ইমাম শিকদার,ড. আবু জুবায়ের দারা, কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, জিল্লুর রহমান জিল্লু, ফিরোজ আহমেদ, রানো নেওয়াজ, সারওয়ার মিয়া, হাদী কাইয়ুম, শরাফত হোসেন বাবু, কবিরুল ইসলাম,ফারুক আহমেদ,নিশান রহিম,আহসান হাবিব,নওশেদ হায়দার,রবিউল আলম,রিজিয়া পারভীন, আলমগীর খান অঅলম, আব্দুর রশীদ বাবু, কামরুল হাসান,এম জিন্নাহ ও ড.আনোয়ারুল করিম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন ইসমাইল হোসেন খোন্দকার। শুরুতে কুরআন থেকে তেলোয়াত করেন মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। শুরুতেই বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়। স্মরণ করা হয় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহীদদের । অনুষ্ঠানে ফোবানা নেতৃবৃন্দ সিটি অব কলেজ পার্কের মেয়র ড. ফজলুল কবিরকে ক্রেস্ট প্রদান করেন। নিউইয়র্ক থেকে এই সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে যোগ দিয়েছিলেন খলকু রহমান, ডিউক খান, জামিলুর রহমান, ডা. নার্গিস রহমান, বদরুদ্দোজা সাগর ও জাহিদ আলম।
মেয়র ড. ফজলুল কবির তার বক্তব্যে বলেন, আগষ্ট মাসে ফোবানা সম্মেলন উদ্বোধন হলো। এই মাসেই বাংলাদেশে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের নিউ জেনারেশন যা করলো তা দেখে সারা বিশ্বের মানুষ অবাক হয়ে গেছে। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫টি বছর কিছু করতে পারেনি। ৭১ সালের স্বাধীনতায় আমাদের একটা সুযোগ এসেছিল। তা কজে লাগাতে পারি নাই। ২০২৪ সালে আবার একটি সুযোগ এসেছে দ্বিতীয় স্বাধীনতার মাধ্যমে। গত ১৫টি বছর দেশের সব আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। প্রবাসীরা এখন বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। সে সুযোগ আমরা এবার পেয়েছি। প্রবাসে বাস করেন দেশের স্মার্ট ও ট্যালেন্টেড মানুষগুলো। তারা একসাথে চাইলে দেশে প্রকৃত উন্নয়নে পাহাড়সম অবদান রাখতে পারেন। তাদের কাজে লাগতে হবে। আর যেন কেউ কোনভাবেই বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্ররা বাংলাদেশের অন্ধকার যুগের কবর রচনা করেছে তাদের জীবনের বিনিময়ে। বাংলাদেশের জন্য কাজ করে ছাত্রজনতার রক্ত ঋণ শোধ করার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি ড. হাসনাত হোসেন এমবিই বলেন, বাংলাদেশ অনেক ভাগ্যবান। ড. ইউনুসের মতো একজন বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিকে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে পেয়েছে। আসুন তার সরকারকে সফল করতে সবাই সাহায্য করি। তিনি ব্যর্থ হলে আমরা হাজার বছর পিছিয়ে যাব। ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ বলেন, ফোবানা আমার ধ্যাণ ধারনা ও কর্মজীবনের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ফোবানাও অংশীদার। প্রবাসী হিসেবে আমরা দেশের যে কোন খুশির সংবাদে আনন্দিত হই। খারাপ কিছু হলে ব্যথিত হই। আমাদের শেকড় তো ওখানেই। আসুন, দেশের কল্যাণে একসাথে কাজ করি।
মেরিল্যান্ডের কনভেনশনের দ্বিতীয়দিনে মোরিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গ সিটি মেয়র জুড আশমান আনুষ্ঠানিকভাবে ফোবানাকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। তা গ্রহণ করেন ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি কাজি সাখাওয়াত হোসেন আজম ও ফোবানা হোস্ট কমিটির কনভেনর জাহাঙ্গীর কবির বাবলু সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৩ দিনের এ সম্মেলনে স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত, নৃত্য ও ফ্যাশন শো প্রদর্শন করেন। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন রিজিয়া পারভীন, রানো নেওয়াজ, বাদশাহ বুলবুল, মোস্তফা অনিক রাজ, ডলি সায়ন্তনী, পলি সায়ন্তনী, কামরুজ্জামান বকুল, জুয়েল,শিমুল খান,নৃত্যাঞ্জলী ড্যান্স গ্রুপ, ও মরিয়ম মারিয়া।
রোববার ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ফোবানা চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ৩৮তম ফোবানা কনভেনশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।