‘এজাহার’ থেকে নাম বাদ দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৮:৪৪ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগ তুলে কুষ্টিয়া সদর থানায় জমা দেওয়া কথিত এক এজাহার ঘিরে জেলার খোকসায় চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, ওই এজাহারে ৫২ জন নাম রয়েছে জানিয়ে একটি চক্র বিএনপির নাম ভাঙিয়ে প্রচার করছে।
তারা নাম বাদ দেওয়ার নামে চাঁদা আদায় করছে। যদিও উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বিষয়টিকে প্রতারণা উল্লেখ করে তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পোস্ট দেন। তিনি এ চক্রের সদস্যদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে ওই এজাহারের কপি ছড়িয়ে দেয় চক্রটি। বর্তমানে খোকসার অনেক মানুষের মোবাইল ফোনে ঘুরছে সেটি। এজাহারে যে ৫২ জনের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু ব্যবসায়ী, বিএনপি পরিবারের সদস্য, চাকরিজীবী ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ব্যক্তিরা রয়েছেন।
ভুক্তভোগী একাধিক ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর খোকসায় পুলিশি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপির নাম ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে নীরব চাঁদাবাজি করছে। বৃহস্পতিবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে এজাহার-আতঙ্ক। চক্রের ভদ্রবেশী সদস্যরা মোবাইল ফোনে কাছে ডেকে এজাহারের কপিতে থাকা নাম দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। নাম বাদ দেওয়ার নাম করে তারা নানা অংকের টাকা দাবি করছে। অনেকেই ভয়ে টাকা দিচ্ছেন। যারা দিতে রাজি হচ্ছেন না, তাদের দেখানো হচ্ছে ভয়ভীতি।
খোকসা বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম ছরোয়ারের বাড়ি উপজেলার মাঠপাড়ায়। তাঁর ছেলে বর্ষণের (২৯) নাম রহস্যজনক এজাহারের ১৯ নম্বরে আছে। গোলাম ছরোয়ারের অভিযোগ, স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালীর এক নেতার নিকটাত্মীয় ওই এজাহার থেকে ছেলের নাম বাদ দেওয়ার নাম করে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। গোলাম ছরোয়ার বলেন, ‘আমি বিএনপি পরিবারের ছেলে। দলের স্থানীয় নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি।’
উপজেলা শিমুলিয়া ইউনিয়নের সিংঘড়িয়া গ্রামের নগেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে সুভাষ বিশ্বাস বীর মুক্তিযোদ্ধা। ওই এজাহারের ২৬ নম্বরে নাম রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করবেন বলে জানায় ওই ব্যক্তি। আর বিস্তারিত কিছু বলেননি সুভাষ বিশ্বাস।
খোকসা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাফিজ আহাম্মেদ রাজু ওই কথিত এজাহারটি ফেসবুকে পোস্ট করেন। তিনি জনসাধারণকে ওই চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছেন। একই সঙ্গে কেউ ‘চাঁদার ধান্দা করলে’ তাকে আইনে সোপর্দ করার আহ্বান জানান। নাফিজ আহমেদ রাজু বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার সমকালকে বলেন, তাঁর কাছে এমন অভিযোগ এসেছে। দলের কয়েকজন নেতাকে জানিয়েছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েও মানুষকে সতর্ক করেছেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ আমজাদ আলীর মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জেনে বিস্তারিত জানাবেন। এজাহারটির সত্যতা যচাইয়ে সহায়তা নেওয়া হয় খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননুর যায়েদের। তিনি বলেন, মামলার এজাহারে ঘটনার বিবরণ থাকতে হয়। ঘটনায় কার কি ভূমিকা ছিল তা থাকতে হয়। কিন্তু কথিত এজাহারে এসবের অস্তিত্ব নেই। এটা হয়রানি বা অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি চক্রটিতে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করবেন।