বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রেসিডেনসিয়াল ডিবেট : কমালা ঝড়ে ট্রাম্পের ধস

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৫৪ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার


 
 

১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে প্রথম টেলিভিশন বিতর্ক।  এদিন রাত ৯ টায় মুখোমুখি হয়েছিলেন রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী কমালা হ্যারিস। কমালা হ্যারিস বিতর্ক মঞ্চে প্রবেশ করেই এগিয়ে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলান। ফিলাডেলফিয়ার ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন সেন্টারে প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘এবিসি নিউজ’ আয়োজিত এআি প্রেসিডেন্ট বিতর্ক  নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা-পর্যালোচনা।  
ডিবেট রেটিং ড্যাটা অনুসারে দেখা যায়, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বিতর্ক ৬ কোটিরও বেশি মানুষ টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের বিতর্ক বিপর্যয়ে পর কোটি কোটি মানুষ এবার অপেক্ষায় ছিলেন কমালা হ্যারিস কিভাবে বিতর্কের মঞ্চে ট্রাম্পকে মোকাবিলা করেন তা দেখার জন্য।
প্রকৃতপক্ষে এবারের বিতর্ক ছিল একটি ‘বাকযুদ্ধ’। ট্রাম্পের একরাশ মিথ্যার বিরুদ্ধে কমালা হ্যারিসকে সত্যের ঝড় তুলতে হয়েছিল। সত্য দিয়ে তিনি মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রথম বিতর্কে ট্রাম্প শিবিরে ধস নামিয়ে দিয়েছেন বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন। আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ। নির্বাচন শেষে কমালা হ্যারিস হোয়াইট হাউস দখল  করবেন এমনটাই আশা করা হচ্ছে তার শিবির থেকে।
অনুষ্ঠানে ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্টরা’ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞ ক্রিস উলরিচ গণমাধ্যমকে বলেন, কমালা হ্যারিস যেভাবে সামনে এগিয়ে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলান তার জন্য ট্রাম্প মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তাতে ট্রাম্পের প্রতি একটি পরিষ্কার সাহসী বার্তা ছিল কমালার।
‘প্রেসিডেন্ট বিতর্ক’ অনুষ্ঠান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী মিডিয়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করেছে। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এমন কিছু মতামত প্রকাশ করেছে যাতে বলা হয়েছে, কমালা হ্যারিসের কাছে ট্রাম্পের পরাজয় হয়েছে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এবং ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ কমালা হ্যারিসের ভূমিকাকে অত্যন্ত জোরালো বলে প্রশংসা করেছে। ‘নিউইয়র্ক পোস্ট’ বলেছে, ট্রাম্পকে ঘায়েল করেছেন কমালা হ্যারিস। কমালা হ্যারিসকে ট্রার্গেট করে অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়ার সমালোচনা করেছে পত্রিকাটি। নিউইয়র্কে ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও সমর্থনকারী গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত ‘ফক্স নিউজ’ বলেছে, এই বিতর্কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমালার বিজয় হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুষ্ঠানের মডারেটরদের সহযোগিতা পেয়েছেন বলে সমালোচনা করা হয়। প্রভাবশালী ‘এমএসএনবিসি’ টেলিভিশন বলেছে, কমালা হ্যারিসের আক্রমণে ট্রাম্প আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন।
টানা ৯০ মিনিটের প্রেসিডেন্ট বিতর্ক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প এবং কমালা তাদেও বক্তব্য ও যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে এবিসি নিউজ তাদের বক্তব্যগুলি অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা কিনা তা ফ্যাক্ট চেক করছিল।
বিতর্কে ট্রাম্প বাইডেন ও কমালা হারিসকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট ও  ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিহিত করেন। অন্যদিকে কমালা বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবার জন্য ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই। দেশকে তিনি ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে রেখে গিয়েছিলেন।
ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে ইসরাইলে যুদ্ধই হতো না। তিনি বলেন, কমলা হ্যারিস ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। যদি আগামীতে কমালা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আমার বিশ্বাস দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েলের অস্তিত্বই থাকবে না।
কমালা হ্যারিস দাবি করেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বিশ্ব নেতারা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন। কমালা হ্যারিস বলেন, ১৬ জন নোবেলজয়ী বলেছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়ে দেশকে ভয়াবহ মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তিনি বলেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ বিশ্বে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যার ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দেবে। কমালা হ্যারিস দাবি করেন, মহামন্দার পর দেশে সবচেয়ে খারাপ বেকার সমস্যা রেখে গেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ট্রাম্প অফিসে থাকাকালীন ২০২০ সালের এপ্রিলে বেকারত্বের হার ১৪.৮ শতাংশে পৌঁছেছিল। এখন পরিস্থিতি অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে।
কমালা হ্যারিস দাবি করেন, ট্রাম্প দৈনন্দিন পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ কর চান। যেটা হলে পরিবারগুলোকে বছরে প্রায় ৪ হাজার ডলারের বেশি ব্যয় করতে হবে। ট্রাম্প গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রি থেকে শুরু করে মদ, খাদ্য পণ্য এবং অন্যান্য পণ্য আমদানির ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্কের প্রস্তাব করেছেন। তবে তিনি চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, এই সরকারের সময় আমরা মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখিন হয়েছি। যেমন অবস্থা এর আগে খুব কম মানুষই দেখেছে। সম্ভবত আমাদের জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নজির এটি।
তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্য ধোপে টেকেনি। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ২.৯ শতাংশ। যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তার দেয়া অনেক মিথ্যা তথ্য কমালা হ্যারিসকে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরতে হয়েছে। বিতর্ক মঞ্চে এদিনে ট্রাম্পের চেয়ে কমালা ছিলেন অনেক সপ্রতীভ অবস্থানে। পর্যবেক্ষকদের মতে প্রকৃত অর্থে কমালা ধসিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্পকে।