জামাইকা মুসলিম সেন্টারের ফান্ড রেইজিংয়ে মিলিয়ন ডলার
কাগজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৪৫ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার
নিউইয়র্ক সিটিতে মুসলিম ইমিগ্রান্টের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে মসজিদের সংখ্যা। বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটি এদিক থেকে বরাবরই এগিয়ে। সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এ কারণেই গড়ে উঠছে নতুন মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাফেজি স্কুল। ধর্মীয় এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্ববৃহৎ জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার জেএমসি। জ্যামাইকা হিলসের ১৬৮ স্ট্রিটে অবস্থিত জেএমসিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় হিলসাইড এভিনিউয়ে বিপুল সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ে উঠেছে তেমনি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশীদের বসতি। প্রতিনিয়তই বাংলাদেশী কমিউনিটির কলেবর বাড়ছে এখানে।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারটি বর্তমানে একটি দ্বিতল ভবন। প্রতি ওয়াক্তের নামাজে ভবনটির প্রথম তলা ঠাসা থাকে মুসল্লিতে। শুক্রবার জুমার নামাজ দুই থেকে তিনটি জামাতে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মসজিদ ভবনের সামনের জায়গা ছাড়াও ১৬৮ স্ট্রিটে নামাজের ব্যবস্থা করা হয় রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে। এছাড়া রমজান মাসে তারাবি নামাজে অংশ নেন প্রায় দুই হাজার মুসলিম নারী পুরুষ। ভবনটির দোতলায় মহিলাদের নামাজের স্থান। সবকিছু মিলিয়ে বিপুল সংখ্যক মুসল্লির নামাজের স্থান সংকুলনা হচ্ছে না। বিশেষ করে শীতকালে ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় জুমা নামাজ আদায়ে বড় ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে রমজানে তারাবি এবং মুসল্লিদের ঈদের জামাত আদায়ে অসুবিধা আরো বাড়বে। সার্বিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে জেএমসির বর্তমান পরিচালনা কমিটি ভবনটির সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
নতুন সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুযায়ী বর্তমান দ্বিতল ভবনের উপরে আরো দুটি তলা নির্মাণ করা হবে। এতে ভবনটি উন্নীত হবে চতুর্থ তলায়। ফলে অধিক সংখ্যক মুসল্লি সুযোগ পাবেন এক সাথে নামাজ আদায়ে। সম্প্রসারিত প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য ফান্ড রেইজিংয়ের আয়োজন করে জেএমসি কর্তৃপক্ষ। গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ম্যারিয়ট লাগর্ডিয়া এয়ারপোর্ট হোটেলে আয়োজিত ফান্ড রেইজিংয়ে মিলিয়ন ডলার সংগৃহীত হয়েছে। বাদ মাগরিব অনুষ্ঠিত ফান্ড রেইজিংয়র শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন নতুন প্রজন্মের আফিক সাইয়িদ।
জেএমসির সেক্রেটারী আফতাব মান্নানের উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট ডা. মাহমুদুর রহমান। মসজিদের মূল ভবন সম্প্রসারনের প্রয়োজনীয়তা এবং প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেন বোর্ড অফ ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ডা. নাজমুল এইচ খান। ফান্ড রেইজিং কমিটির আহবায়ক ফার্মাসিস্ট রাশেদ রানা ও ইমাম শামসি আলী ভবন সম্প্রসার ও আর্থিক অনুদান প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। মূল বক্তব্য রাখেন শেষ হাসান আবু না’র। বক্তাগণ সবাইকে মুক্ত হস্তে দান করার আহবান জানান। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন জেএমসি’র ইমাম মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ।
প্রস্তাবিত এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন মূল ভবনটিতে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আয়তন বাড়বে আরো ৫ হাজার ৬৫০ বর্গফুট ।
ফলে বর্তমান ৯ হাজার ৮৪০বর্গফুট মিলে মোট আয়তন দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৪৩৪ বর্গফুট। বর্তমান দ্বিতীয় তলা থেকে হিফজ স্কুল তৃতীয় তলায় সরানো হলে সেখানে অতিরিক্ত আরো ১৮০জন মুসল্লির নামাজের স্থান সংকুলান হবে। এছাড়া প্রথম তলা থেকে অফিস স্টোরেজ সরালে আরো ৬০ জন মুসল্লির নামাজের জায়গা বাড়বে। বর্তমান ভবনের দুই রুমের মাঝের দেয়াল ভেঙ্গে মিম্বার নিয়ে আসা হবে মাঝামাঝি স্থানে। ইমামের অফিস স্থানান্তর করা হবে চতুর্থ তলায়। নতুন তৃতীয় এবং চতুর্থ তলা নির্মাণ কাজে আনুমানিক আড়াই মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় ১৯৯২ সালে বর্তমান ঠিকানার প্রাইভেট বাড়িটি ভেঙ্গে জেএমসির নতুন ভবন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্টিত হয় জেএমসির নতুন ভবন। ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে জেএমসি ভবন তথা আল মামুর মসজিদ ভবনের ঘোষণা দেয়া হয়। ভবনটি নির্মাণে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। পরবর্তীতে ভবনটি দ্বিতল করা এবং পাশাপাশি আরো একটি প্রাইভেট হাউজ ক্রয় করে মসজিদ ভবনটির পরিধি বাড়ানো হয়। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বিভিন্ন প্রকল্পঃ আল মামুর স্কুল, জামিয়া কোরানিয়া একাডেমী, উইকেন্ড ইসলামিক স্কুল, জেএমসি লাইব্রেরী।