শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ৫ ১৪৩১   ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ড. ইউনূসকে নিয়ে ‘খল নায়কে’র চরিত্রে খালেদ মহিউদ্দীন

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫০ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার


 
 
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ি ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরষ্কার এবং তাঁর দায়িত্ব নিয়ে বিদ্রুপ করে বক্তব্য দেওয়ায় সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দীন নিজেকে ‘খল নায়কে’র চরিত্রে উপস্থাপন করেছেন বলে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ অভিমত জানিয়েছেন। খালেদ মহিউদ্দীনের উদ্ভট বক্তব্যে বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায় সাধারণ মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ড. মোহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবার জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর সংক্ষিপ্ত এক সফরে নিউইয়র্কে আসছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এবারই প্রথম ড. ইউনূস দেশের বাইরে আসছেন। ঠিক এমন সময় তাঁকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসে খালেদ মহিউদ্দীনের বক্তব্য কতটুকু সমিচিন হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশ প্রেমিক প্রবাসিরা। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কার গুটি হয়ে খালেদ মহিউদ্দীন নিউইয়র্কে বসে ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে বিদ্রুপ করে বক্তব্য রাখলেন?
জ্যাকসন হাইটস-এর জুইশ সেন্টারের একটি অনুষ্ঠানে জার্মানির ডয়েচে ভেলের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান খালেদ মহিউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে সম্প্রতি ড. ইউনূসকে নিয়ে বক্তব্য দিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন।
ড. মোহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কে আসার মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁকে নিয়ে বিদ্রুপ করে বক্তব্য দেওয়ায় কমিউনিটির সব অনুষ্ঠান থেকে খালেদ মহিউদ্দীনকে বয়কট করার দাবী তোলা হয়েছে।
খালেদ মহিউদ্দীন নোবেল প্রাইজ নিয়ে বিদ্রুপ করে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস’ এটি রং স্টেটমেন্ট। আমাদের সংবিধানটি খোলেন। জনগণ হলো সকল ক্ষমতার মালিক। উৎসতো দূরের কথা। তারা এপোয়েন্টেড গাই। তারা জনগণের কর্মচারি। বাংলাদেশে পয়সাওয়ালা হতে হলে ফটকাবাজ হতে হবে। সে পলিটিক্যাল লিডার হবে। পলিটিক্যাল লিডার হলে কি হবে? সে একটা এমপি হবে। শেখ হাসিনার একটু ভালো নজরে থাকতে পারলে, খালেদা জিয়ার একটু ভালো নজরে থাকতে পারলে চোর হবে, বাটপার হবে, মন্ত্রী হবে। তাইতো? আমি কিছুদিন সরকারি চাকুরি করেছি। নরসিংদীতে পোস্টিং ছিল। ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। ছোট চাকর। শেখ হাসিনা বড় চাকর ছিল। বড় চাকর!! তা নিয়া ইয়া করার কি আছে। বেতন নেয়। আড়াই তিন লাখ টাকা বেতন নেয়। আপনারা কফি খান মাসে তিনজন মিলা এই টাকার সমান। হিসেব কইরা দেখেন।’
মহিউদ্দীন আরও বলেন, ‘আপনারা ড. ইউনূসকে নিয়ে কথা বলছেন। ড. ইউনূস- এর আগে যতবার আসছেন তো আপনাদের মধ্যে কোন চাঞ্চল্যতা ছিল না। এখন সে একটা চেয়ারের মধ্যে বসছে। তাই বড় ব্যাপার হয়ে গেছে। না। তার হাতে আলাদীনের চ্যারাগ এসে গেছে। সে নোবেল পেতে পারে। নোবেল একটা প্রাইজ রে ভাই। আমি ঠিকানা গ্রুপ থেকে একটা বড় প্রাইজ দিতে পারি আকাশ ভাই’র কাছ থেকে চান্দা-মন্দা নিয়া। একটা প্রাইজ দিতেই পারি। নোবেল প্রাাইজের চেয়ে বড়ও হতে পারে। তা ১ কোটি, ২ কোটি কিংবা ১০০ কোটি হতে পারে। এটা প্রাইজ! শুনলাম আপনারা তার কাছে ১৩ দফা দাবিনামা পেশ করবেন। এতে কোন কাজ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি আশাবাদী না। আমাকে এখানে প্রধান অতিথি করে এনেছেন। আমি তার অফিসে কথা বলেছিলাম। এবার তিনি অনেক ব্যস্ত। কথা ও দেখা নাও হতে পারে। আমার সাথে ড. ইউনূসের সাথে অফ ক্যামেরা কথা হতেও পারে। আমি আপনাদের দাবি দাওয়ার ব্যাপারে দেখা হলে বলবো।’
খালেদ মহিউদ্দীন যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন মঞ্চে ছিলেন লেবার ইউনিয়ন লিডার মাফ মিছবাহ উদ্দীন, ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এম এন মজুমদার, আকাশ রহমান ও ফকরুল আলম সহ অনেকে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আবু নাসের, এনামুল হায়দার, কাজী আজহারুল হক মিলন, শাহজাহান শেখ, হানিফ মজুমদার, খুরশীদ চৌধুরী, ডা. নাফিজ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, আব্দুর রহিম হাওলাদার, আমিন খান জাকির, সোলায়মান ভূঁইয়া, হাজী আব্দুর রহমান, কামরুজ্জামান বাচ্চু, ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ চৌধুরী, জাকারিয়া মাসুদ জিকু, মোহাম্মদ কাশেম, আনোয়ার হোসেন লিটন, বদরুল হক, হাকিকুল ইসলাম খোকন, অ্যাডভোকেট মজিবউর রহমান প্রমুখ।
খালেদ মহিউদ্দীনের এমন বক্তব্যের পর গত মঙ্গলবার জ্যাকসন হাইটসে বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী সচেতন সমাজ ইউএসএ ও প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক সমাজ সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ সভা করে। সভায় গৃহিত রেজুলেশনে বলা হয়, ‘ডয়েচে ভেলে থেকে বিতাড়িত সালমান এফ রহমান ওরফে দরবেশ বাবার ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিজনক, উদ্ধত্যপূর্ণ ও কান্ডজ্ঞানহীন মন্তবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের কতিপয় দালাল দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে নিউ ইয়র্কস্থ জ্যাকসন হাইটস-এর একটি অনুষ্ঠানে এ ধরনের অশালীন ও অসভ্য মন্তব্যের প্রতিবাদে খালেদ মহিউদ্দীনকে প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফরের সময়ে কনস্যুলেট ও জাতিসংঘসহ অন্যান্য সকল অফিসে বয়কট করার জোড়ালো দাবি জানানো হয়েছে সভা থেকে।