নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা
ভোটার তালিকার পর ভোটের তারিখ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৫৬ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার
রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেলে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নতুন সরকার গঠনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার পাশাপাশি ভোটার তালিকা তৈরি হলেই নির্বাচনের তারিখ বলা হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে ফিরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন ড. ইউনূস। ওই সময়ই এ সরকার জানিয়ে দেয়, দেশে আগে সংস্কার দরকার, তারপর নির্বাচন। এর মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি বলেছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারে তারা সরকারকে সময় দিতে প্রস্তুত, তবে সেটি ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়’।
এরপর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে দলগুলো বিভিন্ন দাবি তুললেও নির্বাচনের ‘সময়সীমা’র কোনো প্রসঙ্গ আসেনি। এর মধ্যে সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও প্রয়োজনীয় সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সমর্থন দিয়ে যাবে সেনাবাহিনী।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টাই নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আভাস দিলেন। বৈঠকে ড. ইউনূস বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উৎখাত নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। একই সঙ্গে নির্বাচন, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য গঠন করা ছয়টি কমিশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানান।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা রাষ্ট্র সংস্কারে ড. ইউনূসের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানান। রাষ্ট্র সংস্কারে আইএমএফ ইউনূসের সরকারের ‘পাশে আছে’ জানিয়ে জর্জিয়েভা বলেন, আইএমএফ এ সরকারের জন্য আর্থিক সহায়তার বিষয়টি দ্রুততর করবে। তিনি বাংলাদেশে আইএমএফের একটি দল পাঠিয়েছেন এবং দলটি এখন ঢাকায় রয়েছে। আগামী মাসে দলের সদস্যরা আইএমএফ পরিচালনা পর্ষদের কাছে তাঁদের প্রতিবেদন জমা দেবেন। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইএমএফ বোর্ড বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ঋণদান কর্মসূচি শুরু করতে অথবা গত বছরের শুরুর দিকে চালু হওয়া বিদ্যমান সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আরও ঋণ দিতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে ‘পরিবর্তিত দেশ’ আখ্যা দিয়ে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘এটি অন্য দেশ, এটি বাংলাদেশ ২.০।’ জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আইএমএফপ্রধানকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র এক সপ্তাহ সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপরাধের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশের অর্থ প্রদানের ভারসাম্য বাড়াতে আইএমএফের সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে আইএমএফের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।